ঢাকা, শুক্রবার   ০২ মে ২০২৫

রাবিতে ফটোকপির দোকানে মিলছে গবেষণাপত্র

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:০১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে দুই’শ থেকে এক হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে গবেষণাপত্র ও ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট। পরিশ্রম থেকে বাঁচতে এ সব দোকানিদের দ্বারস্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আর এজন্যই প্রকাশ্যে সাইনবোর্ড টানিয়ে বিক্রি করছেন দোকানিরা।

এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকরা। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা। আর দোকানিদের অভিযোগ শুধু তারা নয়, এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক দায়ী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, রাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, আইন অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থিসিস, রিসার্চ মনোগ্রাফ ও ইন্টার্নশিপের কাজ করতে হয়। বিজ্ঞান ও কৃষি অনুষদে গবেষণা বাধ্যতামূলক। গবেষণাপত্রে জালিয়াতির সন্দেহে নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (২০১৩-২০১৪) চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রকাশিত ফলে তিন শিক্ষার্থীর নাম আসেনি। তাদের গবেষণাপত্রগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির কাছে। এদের মধ্যে রয়েছেন গত দুই বছর বিভাগের প্রথম স্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থীও। এর আগে আইন বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের স্বাতকোত্তর পর্যায়ে ১০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ উঠে। বিষয়টি দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারভাইজারের চক্ষুগোচর হলে একই বর্ষের সব ফলাফল দিতে আপত্তি জানায় বিভাগের শিক্ষকগণ। পরে নতুন থিসিস দিলে তাদেরকে ক্ষমা করেন শিক্ষকরা। ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে ফলিত গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠে।

এছাড়াও ২০১৫ সালে নম্বরপত্রে ঘষামাজা ও গবেষণাপত্র (থিসিস পেপার) জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজ থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, স্টেডিয়াম মার্কেট, স্টেশন বাজারের কম্পিউটারের দোকানগুলোতে বিষয়ভিত্তিক গবেষণাপত্র, রিসার্চ মনোগ্রাফ, ইন্টার্নশিপ রিপোর্টসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধ প্রিন্ট ও বাঁধাই করেন। এ সময় কৌশলে সেগুলোর সফট কপি সংগ্রহ করেন দোকানিরা। পরবর্তীতে এসব সফট কপি বিভিন্ন দামে সংগ্রহ করে গবেষণাপত্রের কিছু অংশ পরিবর্তন করে শিক্ষকদের কাছে উপস্থাপন করেন অনেক শিক্ষার্থীই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট ও স্টেডিয়াম মার্কেটের সাকসেস কম্পিউটার্স, আল-আকসা ইন্টারন্যাশনাল, বর্ণমালা কম্পিউটার সেন্টার, আমার আইটি জব কর্নার, কম্পিউটার পয়েন্ট, শাকিক কম্পিউটার, জান্নাত কম্পিউটার, মারুফ কম্পিউটার, এম.ই কম্পিউটারসহ বেশ কয়েকটি দোকানে পাওয়া যায় বলে জানা গেছে।

এদিকে থিসিস নকল করে বিক্রির জন্য অনেক শিক্ষককে দায়ী করছেন দোকানীরা। নাম ও দোকানের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, ‘এ অপরাধে আমাদের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক বেশি দায়ী। অনেক শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীকে পাঠান থিসিস নেওয়ার জন্য। তার শিক্ষার্থীকে তার চাহিদা মতো থিসিস দিলে ওই দোকানে এমফিল, পিএইচডি ফেলো পাঠানোর কথা বলেন। আমরা লোভে পড়ে থিসিস দিয়ে থাকি। কেননা, একটা এমফিল বা পিএইডি পেপার তৈরি করতে আমরা ৩০-৪০ হাজার টাকা নেই। তাই মোটা অঙ্কের টাকা লাভের আশায় অনেকে এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

তবে, কোনো দোকানি এর সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকের নাম বলেননি। এমনকি এ ব্যবসাকে শিক্ষকরা কেনো সমর্থন দিচ্ছেন? দোকানিরা থিসিস বিক্রি করলে ওই সব শিক্ষকের কি লাভ? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। এখানে শিক্ষার্থীরা যদি টাকা দিয়ে কম্পিউটারের দোকান থেকে থিসিস সংগ্রহ করে তবে তা উদ্বেগের বিষয়। শিক্ষার্থীরা তার মেধা দিয়ে গবেষণা করবে এটাই আমাদের কাম্য।’

এধরনের ঘটনা ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক মলয় ভৌমিক।

জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, বিষয়টি শুনেছি। আমরা অচিরেই এর তদন্ত করবো। কোনো দোকানি বিক্রি করলে বা অন্য কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসএইচ/

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি