ঢাকা, মঙ্গলবার   ২১ মে ২০২৪

রোহিঙ্গাদের পেছনে ১০ মাসে ব্যয় হবে ৫৯৩৯ কোটি টাকা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:২৩, ১১ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২২:৫৯, ১১ নভেম্বর ২০১৭

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত (১০ মাস) রোহিঙ্গাদের পেছনে সরকারের ব্যয় হবে মাথাপিছু প্রায় পাঁচ হাজার ৯৩৯ টাকা। এ কথা জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।  

সংস্থাটি বলছে, ওই সময় পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ব্যয়ভার বহন করতে সরকারের প্রয়োজন হবে প্রায় সাত হাজার ১২৬ কোটি টাকা। এই পরিমাণ অর্থ চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের এক দশমিক ৮ শতাংশ। যা জিডিপির দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং মোট রাজস্বের দুই দশমিক ৫ শতাংশ।

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডি আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে সিপিডির পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, ঢাকায় যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাইকমিশনার ডেবিট এসলে, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাখাওয়াত হোসেন, বিশ্ব বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি ড. সুকমল বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রমুখ।

সেমিনারে মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন তাদের জন্য চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত (৬ মাস) সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় এক হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের দশমিক ৪ শতাংশ। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ১ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (৬ মাস) আরও দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্ট থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৮ লাখ ২১ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

ড. ফাহমিদা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সমস্যায় পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের উপর। দেশ এই তিন খাতে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ায় জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারে মোট বনভূমির পরিমাণ ২০ লাখ ৯২ হাজার ১৬ একর। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে প্রায় তিন হাজার ৫০০ একর বনভূমি ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সব এলাকায় বায়ু দূষণ, ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ সংকট সমাধানে তৃতীয় কোনো পক্ষ কাজ করার আগ্রহ দেখায়নি। এক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে।  

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক জানান, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে শিগগিরই বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে। আগামী ২৩ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সফরে যাবেন ওই সময়ই চুক্তিটি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

ড. রেহমান সোবহান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যায় দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে তাই এ সমস্যা বেশিদিন জিইয়ে রাখা যাবে না। এজন্য আন্তর্জাতিক মহলকে সঙ্গে নিয়েই এটার স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।

মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের নয় এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। মানবতাবিরোধী গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বিশ্বব্যাপী ৬৫ মিলিয়ন মানুষ এখন উদ্বাস্তু। একক দেশ হিসেবে এই উদ্বাস্তুদের আশ্রয়দাতা হিসাবে বাংলাদেশ চতুর্থ সর্বোচ্চ। এ সমস্যা সমাধানে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

আর/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.





© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি