ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫

রোহিঙ্গাদের হুমকি মনে করছে ভারত!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:০৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২২:৫২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

ভারত সরকার দেশটিতে বসবাসকারী চল্লিশ হাজারের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সেখানকার `নিরাপত্তার জন্য এক বিরাট হুমকি` হিসেবে দেখছে। সেনিয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে আজ একটি হলফনামা পেশ করা হয়েছে।

হলফনামায় দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কিংবা জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের সঙ্গেও এই রোহিঙ্গাদের অনেকের যোগসাজশ গড়ে উঠেছে। এ প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আদালতই এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে সরকার জানিয়েছে।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের হয়ে যারা সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ছেন, সেই অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, ভারতে আসা শরণার্থীদের সরকার আসলে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করতে চাইছে - আর সে কারণেই রোহিঙ্গাদের সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টে এদিন দাখিল করা ষোলো পাতার হলফনামায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ এনেছে, তা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর।

হলফনামায় বলা হয়েছে, জম্মু, দিল্লি, হায়দ্রাবাদ বা মেওয়াটের মতো এলাকায় বহু রোহিঙ্গা ভারত-বিরোধী জঙ্গি কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া আইএসআই বা আইএসের মতো বিভিন্ন সংস্থা তাদের ভারতে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর কাজে লাগাতে চাইছে এবং রোহিঙ্গারা অনেকেই জাল ভারতীয় পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্রও জোগাড় করে ফেলেছে।

এমনকি, র‌্যাডিকালাইজড রোহিঙ্গারা ভারতে বৌদ্ধদের উপর হামলা চালাতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ওই হলফনামায়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এদিন বলেন, "আমার মন্ত্রণালয়ের যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল কোর্টে তা জমা পড়ে গেছে এবং তার বিষয়বস্তুও আপনারা জানেন। এখন কোর্টকেই বিষয়টির ফয়সালা করতে হবে, আর আমাদের আদালতের সিদ্ধান্তের জন্যই অপেক্ষা করা উচিত।"

হলফনামায় গোয়েন্দা সূত্রকে উদ্ধৃত করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আনা হলেও তার বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।

তবে সরকার বলেছে, আদালত চাইলে তারা বন্ধ খামে করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যাবতীয় গোয়েন্দা তথ্যও পেশ করতে প্রস্তুত।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভারত থেকে বিতাড়নের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন হিন্দুত্ববাদী তাত্ত্বিক নেতা গোবিন্দাচার্য, তিনিও বলছেন জাতীয় নিরাপত্তা এমন একটা বিষয় যার সঙ্গে কোনও আপস সম্ভব নয় এবং রোহিঙ্গাদের জঙ্গি-সংস্রবের কথা এর মধ্যেই সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

গোবিন্দাচার্য যুক্তি দিচ্ছেন, "তাদের অবস্থার সুযোগ নিয়ে ওই ধর্মের অন্যান্য গোষ্ঠী ধর্মীয় একাত্মতার কথা বলে ফায়দা লুটতে পারে, সেই সম্ভাবনা আছে পুরোমাত্রায়।"

"সারা পৃথিবীতেই এ জিনিস ঘটেছে, আর আমাদের অভিজ্ঞতাও তাই-ই বলে। শুধু মানবিকতার কারণে এই রূঢ় বাস্তব থেকে তো আর আমরা চোখ ফিরিয়ে থাকতে পারি না!"

কিন্তু ভারত হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-পার্সি সব ধর্মের শরণার্থীকে আশ্রয় দিলেও শুধু মুসলিম হওয়ার কারণেই আসলে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে - মনে করছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, যিনি রোহিঙ্গাদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করছেন।

তার কথায়, "আমাদের সরকার বলতে চাইছে তুমি যদি মুসলিম না-হও তাহলে শরণার্থী হিসেবে হিন্দুস্থানে আশ্রয় পাবে, কিন্তু মুসলিম হলে তোমার জন্য দরজা বন্ধ।"

"এটা তো পরিষ্কার সংবিধান-বিরোধী প্রস্তাব, কারণ আমাদের সংবিধানের ১৪ ধারা অনুযায়ী তুমি এভাবে ধর্মের ভিত্তিতে কারও সঙ্গে বৈষম্য করতে পার না।"

কিন্তু রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারত সরকার যে এখন নিরাপত্তার কার্ডই খেলবে - এর কয়েক ঘণ্টা আগেই তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু।

তিনি বলছেন, "আমি মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে বলব অযথা ভারত ও ভারত সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাবেন না। ভারত একটি সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র - আর আমাদের দায়িত্ব তার সুরক্ষা নিশ্চিত করা, সেই দাবি সবার আগে।"

সরকারের এই হলফনামা পেশের পর রোহিঙ্গা প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ৩রা অক্টোবর।

তবে পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন, যেভাবে আজ জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে সরকার রোহিঙ্গাদের সম্পর্ক টেনেছে তাতে বৈধভাবে তাদের এ দেশে থাকার মেয়াদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

 

ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি