ঢাকা, বুধবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৫

লকডাউনে ঘরে ঘরে ফিরেছে রেডিও

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৩৮, ২৭ এপ্রিল ২০২০

Ekushey Television Ltd.

লকডাউনে হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাচ্ছে রেডিও। প্রচলিত বেতার মাধ্যমের সঙ্গে জুড়ছে রেডিওর ডিজিটাল সংস্করণ। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ভারতে লকডাউন চলছে। ঘরবন্দি মানুষের অবসর যাপনের উপায় মূলত বিনোদন। এই সুযোগে টেলিভিশনের দাপটে কোণঠাসা রেডিও তার হারানো জনপ্রিয়তা একটু একটু করে ফিরে পাচ্ছে। খবর ডয়চে ভেলে’র। 

সরকার পরিচালনাধীন আকাশবাণী ছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক এফএম চ্যানেলের অনুষ্ঠান শোনা যায় পশ্চিমবঙ্গে। এই চ্যানেলগুলির শ্রোতার সংখ্যা লকডাউন চলার সময়ে অনেকটা বেড়েছে। চ্যানেলের দাবি অনুযায়ী, ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে শ্রোতার সংখ্যা৷।মূলত সংগীত নির্ভর বিনোদনের পসরা নিয়ে এফএম দ্রুত মানুষকে স্পর্শ করেছে। অবসরের সময় অন্যান্য মাধ্যমের মতো জনপ্রিয়তা বেড়েছে বেতারেরও। বাংলার সংস্কৃতি জগতের দীর্ঘদিনের কর্মী, সংগীতশিল্পী শুভেন্দু মাইতি বলেন, ‘বেতারের জনপ্রিয়তা গোটা বিশ্বেই ক্রমশ বাড়ছে। এটা খুব শুভ লক্ষণ। বেতার একটি জাতির সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। টেলিভিশন সেভাবে পারে না।’ 

শুধু আকাশবাণী নয়, প্রবীণ এই শিল্পী বেতারের নয়া সংস্করণেও অনুষ্ঠান করেছেন। লকডাউনের সময় শহরে জন্ম নিয়েছে নতুন চ্যানেল রেডিও কোয়ারান্টাইন কলকাতা। ২৪ মার্চ বিকেল থেকে এই ডিজিটাল রেডিওর লাইভ স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে। গান শোনানো হচ্ছে, রয়েছে গল্প ও কবিতা পাঠ। ছোটদের জন্য অনু্ষ্ঠান হচ্ছে। সঙ্গে অবশ্যই করোনা নিয়ে সতর্কবাণী। গীতিকার মোহিনী চৌধুরীকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন শুভেন্দু মাইতি। এই ডিজিটাল রেডিওতে অনুষ্ঠান করেছেন অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ভারত রামচরিতমানসের দেশ। এখানে মৌখিক সাহিত্য ও শ্রুতির বড় স্থান। শ্রুতি কিন্তু দৃশ্যের চেয়ে মানবসভ্যতার ইতিহাসে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যখন আমাদের দুয়ার রুদ্ধ, আমরা ঘরে বদ্ধ, তখন শ্রুতি মনের জানলা খুলে দিচ্ছে।’ শুভেন্দুর মতো সঞ্জয়ও আশাবাদী, ‘পৃথিবীর দুই গোলার্ধেই রেডিওর সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন হবে। এশিয়া ও আফ্রিকাতে নিশ্চিতভাবে।’ 

তাঁর বক্তব্য, ‘সামাজিক মাধ্যমের বাড়বাড়ন্ত দেখে বোঝা যায়, মানুষ আর কেন্দ্রীভূত মাধ্যমে বিশ্বাসী নয়। তাই ঘর থেকে ঘরে, কিংবা গোষ্ঠীর মধ্যে স্বল্প পরিসরে সম্প্রচারের গুরুত্ব বাড়ছে। সে কারণেই আকাশবাণীর মতো গণমাধ্যমের সঙ্গে কমিউনিটি রেডিওর উপযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

কলকাতায় ২০০৮ সালে চালু হয়েছিল পূর্ব ভারতের প্রথম কমিউনিটি রেডিও। ৯০.৮ মেগাহার্ৎজে প্রচারিত হয় রেডিও জেইউ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই বেতারের অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়, সাধারণভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে। কিন্তু লকডাউনের আপৎকালীন পরিস্থিতিতে অনেক প্রসারিত হয়েছে রেডিও জেইউ’র ভূমিকা। এই বেতারের আহবায়ক অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ী বলেন, ‘অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে আমরা ইউটিউব’র মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছি। অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তি করে বেঁচে থাকার রসদ জোগাড় করেন। তাঁদের কথা তুলে ধরছি। ইতোমধ্যে বাউল সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে অনুষ্ঠান হয়েছে।’  

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনুষ্ঠান রেকর্ড করার সরঞ্জাম বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাড়িতে বসেই রেকর্ড করা হচ্ছে অনুষ্ঠান, আপলোড হচ্ছে ইউটিউব-এ। অধ্যাপক লাহিড়ী জানান, তাঁদের ই-মেইলে প্রতিদিন অজস্র অভাব-অভিযোগ আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের সাহায্যে সেগুলি তাঁরা প্রশাসনের নজরে আনছেন, স্থানীয় স্তরে সমাধানের চেষ্টাও করছেন।

লকডাউন ঘোষিত হওয়ার পর সপ্তাহ খানেকের জন্য আকাশবাণী কলকাতা অনেকটাই নীরব হয়ে গিয়েছিল। এপ্রিলের গোড়া থেকে কিছুটা ছন্দে ফিরেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত এই প্রতিষ্ঠান। যদিও নিয়মিত অধিকাংশ অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে না। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান শোনানো হচ্ছে। সঙ্গে অন্যান্য সাংস্কৃতিক আয়োজন। তাহলে কি নস্ট্যালজিয়া থেকে আবার বর্তমানে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে আকাশবাণীসহ সমগ্র বেতার মাধ্যম? শুভেন্দু মাইতি বলেন, ‘এটা সভ্যতার পক্ষে মঙ্গলজনক। টেলিভিশন দৃশ্য চাপিয়ে দেয়। বেতার কল্পনা করতে সাহায্য করে। শুধু দৃশ্যনির্ভর হয়ে উঠলে দুই প্রজন্ম পর মানুষের সৃষ্টিশীলতা নষ্ট হয়ে যাবে। বেতার সেই বিপর্যয় থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে।’

এমএস/
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি