ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫

শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইমুখী করতে অন্যরকম উদ্যোগ কলেজ শিক্ষকের

প্রকাশিত : ১৭:০০, ২৮ মে ২০১৮ | আপডেট: ১২:২৭, ৩০ মে ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

আবেদা খানম। পেশায় শিক্ষক। সরকারি সিটি কলেজ-চট্টগ্রামের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপনা করছেন দীর্ঘদিন। এই সময়ে তিনি খেয়াল করলেন শিক্ষার্থীদের অনেকে টাকার অভাবে বই কিনতে পারে না। পরীক্ষার আগ মুহুর্তে তাড়াতাড়ি করে একটি গাইড বই কিনে প্রশ্ন মুখস্ত করে পরীক্ষা দেয়। এর ফলে তারা গাইড নির্ভর বা সাজেশন নির্ভর হয়ে উঠছে।

আবেদা খানম ঠিক করলেন প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিনি নিজে বই কিনে দেবেন। শর্ত হচ্ছে প্রত্যেক বর্ষ শেষে ওই বই আবার তার হাতে ফেরত দিতে হবে। বিধি বাম! সহকর্মী অন্য শিক্ষকরা এতে ঘোর আপত্তি তুললেন। কী আজগুবি কথা!! এতো টাকার বই ম্যাডাম জলে ভাসিয়ে দেবেন কেন? জলে ভাসিয়ে দেওয়াই তো! কেউ কী এই বই আর ফেরত দেবে? অনেকে আড়ালে টিপ্পনী কাটলেন। হাসাহাসিও করলেন কেউ কেউ। কিন্তু আবেদা খানম অন্য ধাঁচের মানুষ। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তো বাস্তবায়ন করবেন-ই।

নিজ দায়িত্বে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিলেন এক সেট করে বই। শিক্ষার্থীরা ১ম, ২য়, তয়, ৪র্থ বর্ষ অর্থাৎ অনার্স শেষ করলো। মাষ্টার্স করলো। গত ১৫ মে ছিল মাষ্টার্স পরীক্ষার শেষ দিন। পরীক্ষার আগে সব শিক্ষার্থী তাদের কাছে থাকা বইগুলো একে একে জমা দিল। এর আগেও তারা বই জমা দিয়ে এসেছে। একব্যাচ জমা দেওয়ার পর পরবর্তী ব্যাচ সেই বই নিয়েছে। হিসেব করে দেখা গেছে, রিকভারি রেট শতভাগ।

এ বিষয়ে একই বিভাগের শিক্ষক আবদুল আলিম ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এ যেনো ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংককে হার মানানো। বিভাগের কোনো শিক্ষার্থীকে বই কেনার জন্য একটা টাকাও খরচ করতে হয়নি।’

যাকে নিয়ে এতো কথা তিনি কী বলেন? নির্মোহ ও বিনয়ী স্বভাবের আবেদা খানম বলেন, ‘শিক্ষকতা শুধু পেশা নয়, বরং ব্রত। সব শিক্ষার্থীর ভাল মন্দের দিকে খেয়াল রাখা আমাদের দায়িত্ব।’

 এটা বড় ঝুঁকির কাজ। কীভাবে এতোগুলো শিক্ষার্থীকে বিশ্বাস করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আবেদা খানম হাসিমুখে বলেন, ‘আমি যদি আমার ছাত্রকে বিশ্বাস করতে না পারি, আমাদের লেখাপড়া, সামাজিকতা কী অর্থহীন হয়ে যায় না?’

আবেদা খানম- এই সাহসী উদ্যোগ এখন আলোচিত হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কেউ কেউ এমন সিস্টেমকে গুরুত্ব সহকারে ভাবছেন। যেসব শিক্ষার্থী লড়াই করে পড়াশুনা করছে তাদের জন্য এমন পদ্ধতি নতুন দিগন্ত রচনা করবে বলে বিশ্বাস অনেকের।

 / এআর /


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি