ঢাকা, শনিবার   ০৫ জুলাই ২০২৫

সন্ন্যাসী থেকে যেভাবে কোটি কোটি ডলারের মালিক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

পরপর কয়েকটি দুঃখজনক ঘটনা অ্যান্ডি পাডিকোম্ব জীবন সম্পূর্ণভাবে বদলে দেয়।

স্পোর্টস সাইন্সের ওপর পড়াশোনা করছিলেন অ্যান্ডি পাডিকোম্ব। এ সময় চোখের সামনে গাড়ি চাপায় দু’বন্ধুর মৃত্যু, কয়েক মাস পর সাইকেল দুর্ঘটনায় সৎবোন এবং অপারেশনের সময় মারা যান নিজের সাবেক বান্ধবী। এ ঘটনাগুলোর শোক সইতে না পেরে এক সময় পড়াশোনাও ছেড়ে দেন তিনি।

বয়স যখন ২২ তখন হিমালয়ে গিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়ার দীক্ষা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন অ্যান্ডি। পরের ১০টি বছর ভিক্ষু হিসেবে জীবনযাপন করেন তিনি। কখনো কখনো দিনে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্তও ধ্যান করতেন।

এ নিয়ে অ্যান্ডি বলেন, ধ্যান আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এনেছে। নিজের বিষয়ে কম চিন্তা করে অন্যদের সুখের জন্য চিন্তা করতে শিখিয়েছে। 

ধ্যানকে কিভাবে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যায় তা নিয়ে অ্যান্ডি ভাবতে থাকেন। এর এক পর্যায়ে ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যে ফিরে এসে ধ্যান বা মেডিটেশনে সহায়তা করার একটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন। লন্ডনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মেডিটেশনের প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থাও করেন অ্যান্ডি, যেখানে অতিরিক্ত কাজের চাপে থাকা পেশাজীবীদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সাহায্য করার চেষ্টা করতেন।

২০০৫ সালে ছিলেন রিচার্ড ছিলেন একজন পেশাজীবী। সামাজিকভাবে টানা দুশ্চিন্তায় ভুগতাম। এগুলো কাটানোর জন্য অ্যান্ডির সহায়তা চান তিনি। অ্যান্ডির পরামর্শে ধ্যান করতে লেগে যান। ফলাফলও আসে খুব তাড়াতাড়ি। এরপর রিচার্ড সিদ্ধান্ত নেন অ্যান্ডির সঙ্গে এই ব্যবসায় যোগ দিবেন।

যে কথা সেই কাজ। এর পর দু’জনে লেগে যান ব্যবসায়। অ্যান্ডি ধ্যান করা শেখায়, আর রিচার্ড ব্যবসা মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য বুদ্ধি আঁটতে থাকেন।

২০১০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান শুরু করেন রিচার্ড-অ্যান্ডি। ধ্যানের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করার পাশাপাশি দলগতভাবে মেডিটেশনের সেশনও পরিচালনা করে।

আয়ের টাকা এবং বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্য নিয়ে সে বছর হেডস্পেস অ্যাপের প্রথম ভার্সন বাজারে ছাড়েন তারা। যেটিতে ১০ মিনিট দীর্ঘ ধ্যানের নির্দেশাবলী সংযুক্ত বেশকিছু ফাইল ছিল।

ব্যবসার শুরুতেই ভাগ্য সহায় হয় তাদের। যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকা এক শনিবারে তাদের প্রতিটি কপির সঙ্গে হেডস্পেসের একটি পুস্তিকা সংযোজন করে দেয়। আর ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারলাইন্সও হেডস্পেসের মেডিটেশন তাদের প্লেনের বিনোদন বিভাগে যুক্ত করে। যার ফলে এই অ্যাপটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এবং ডাউনলোডের হার বেড়ে যায়।

জনপ্রিয় চিকিৎসা বিষয়ক এই অ্যাপ ‘হেডস্পেস’ বিশ্বজুড়ে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বার ডাউনলোড করা হয়েছে। এ থেকে তাদের বার্ষিক আয় ১০ কোটি ডলারেরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বর্তমানে এই অ্যাপ যারাই ব্যবহার করেন তাদের প্রত্যেককে মাসে প্রায় ১০ পাউন্ড অর্থ খরচ করতে হয়।

ব্যবসা সম্পর্কে অ্যান্ডি বলেন, শুরুতে আমাদের অর্থ ছিল না, বন্ধুদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য চেয়ে নিতাম। এছাড়া এক বন্ধু রেকর্ডিং স্টুডিও ব্যবহার করতে দেয় বিনামূল্যে, আরেক বন্ধু অফিস দেয় কোনো অর্থ না নিয়ে। তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

২০১৩ সালে রিচার্ড ও অ্যান্ডি ব্যবসার কেন্দ্র সরিয়ে লন্ডন থেকে লসঅ্যাঞ্জেলসে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন থেকে হেডস্পেসের সদর দপ্তর লসঅ্যাঞ্জেলসে রয়েছে।

হেডস্পেস শুরুতে নিজেদের অর্থায়নে পরিচালিত হলেও ২০১৪ সাল থেকে এই ব্যবসা ও অ্যাপের কার্যক্রম বড় করার উদ্দেশ্যে বাইরের বিনিয়োগ গ্রহণ করতে শুরু করেন তারা।

বর্তমানে সাড়ে ৭ কোটি ডলার লগ্নি করা রয়েছে হেডস্পেসে। যদিও এর সিংহভাগ মালিকানা অ্যান্ডি ও রিচার্ডের হাতেই। শুরুতে অ্যান্ডি ও রিচার্ড দু'জনই ব্যবসার সব অংশের দেখভাল করতো। কিন্তু ব্যবসা বড় হওয়ার পর থেকে তারা কাজ ভাগ করে নেয়।

প্রধান নির্বাহী হয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও কর্মরত ৩০০ কর্মীর তত্বাবধানের দায়িত্ব নেন রিচার্ড। আর অ্যান্ডির মূল কাজ অ্যাপের সম্প্রসারণের বিষয় চিন্তা করা এবং নেপথ্য কন্ঠ দেয়া।

হেডস্পেসের ৩০০'র বেশি ব্যবসায়িক ক্লায়েন্ট রয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছে গুগল, লিঙ্কড ইন, জেনারেল ইলেকট্রিক এবং ইউনিলিভার। এসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও কর্মীদের ধ্যান করতে সাহায্য করেন অ্যান্ডি।

এছাড়া হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন গবেষণায় সহায়তাও করেন অ্যান্ডি।

সূত্র : বিবিসি

এএইচ/
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি