ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সীমান্তে চীন, তবুও নিরাপদ নেপাল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৮, ২৮ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১২:২৪, ২৮ মার্চ ২০২০

কোয়ারেন্টিন জোন তৈরী করেছে নেপালের সেনাবাহিনী। ছবি: নেপালি টাইমস

কোয়ারেন্টিন জোন তৈরী করেছে নেপালের সেনাবাহিনী। ছবি: নেপালি টাইমস

বিশ্ব করোনা ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত। আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষে মধ্যে। আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ হাজার ৩৫৯ জন। ২ শতাধিক দেশে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ১৮৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে নেপালে এখন পর্যন্ত কোন মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আজ শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে নভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত মোট রোগী পাওয়া গেছে মাত্র চার জন।

নেপালিদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেক বেশি বলে অনেকেই মনে করেন। তারপরও করোনা সংক্রমণের এ তথ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে খোদ দেশটির অভ্যন্তরেই। এ নিয়ে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন এপিডেমিওলজি অ্যান্ড ডিজিজ কন্ট্রোল ডিভিশনের সাবেক পরিচালক বাবুরাম মারাসিনির বক্তব্য, কভিড-১৯-এর ঘটনা কম থাকার বিষয়ে গোটা বিশ্বই এখন নেপাল নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এর আগেও চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া দুই মহামারী—২০০২ সালের সার্স এবং এইচ১এন১ (এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা) সংক্রমণের সময়েও নেপালে মৃত্যুর তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়েছিল মাত্র তিনজনের নাম। 

কোয়ারেন্টিন জোনগুলো সম্পূর্ণভাবে দেখভাল করছে দেশটির সেনাবাহিনী- নেপালি টাইমস

ইমিউনোলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সমীর দীক্ষিতের বিশ্বাস, মানুষ ভয়াবহ পর্যায়ে আক্রান্ত না হওয়ার কারণ হচ্ছে, নেপালে ভাইরাসটির স্ট্রেইন তুলনামূলক দুর্বল এবং/অথবা নেপালিদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেক বেশি। তবে নেপালিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার তত্ত্বকে সরাসরি বাতিল করে দিয়েছেন দেশটির পাতান হাসপাতালের চিকিত্সক বুদ্ধ বাসনিয়াত। তিনি মনে করেন, আমরা যে কোনোভাবে রোগ প্রতিরোধী, তা এ মুহূর্তে ভাবাটাই বোকামি। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। 

নেপালিয়ান টাইমস একটি ঘটনা উল্লেখ করে, নেপালের প্রথম কভিড-১৯-এ আক্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন ৩২ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী। চীনের উহান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। সম্পূর্ণ সুস্থ এ ব্যক্তির অন্য কোনো বড় অসুখে (কোমরবিডিটি) ভোগার তেমন কোনো ইতিহাসও নেই। গত ৩ জানুয়ারি প্রথম তার শরীরে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। এর ছয়দিন পর নিজ দেশে ফিরে যান ওই শিক্ষার্থী। কাঠমান্ডুর সুকরারাজ ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ হসপিটালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন ১৩ জানুয়ারি। সে সময় তার দেহের তাপমাত্রা খুব একটা বেশি ছিল না। ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। আর ছিল শুকনো কাশি। এছাড়া আর কোনো লক্ষণের তেমন একটা উপস্থিতি ছিল না। উহানের তথাকথিত ওয়েটমার্কেটের সঙ্গেও তার কোনো সংস্রব পাওয়া যায়নি। এর পরও সন্দেহ হওয়ায় তার গলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে হংকংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। সেখানে রিয়েল টাইম আরটি-পিসিআর অ্যাসে পরীক্ষা করানোর পর ধরা পড়ে ওই শিক্ষার্থী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।

দ্রুত ওই শিক্ষার্থীকে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। বেশকিছু অ্যান্টিবায়োটিক ও থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু হয় তার। ভর্তির ৬ ঘণ্টা পর তার মধ্যে মৃদু শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। কমে যায় অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা। ভর্তির সময়ে করানো বুকের রেডিওগ্রাফি চিত্রে দেখা যায়, ফুসফুসের বাম দিকের ওপরের অংশ মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হয়েছে। পরদিন ১৪ জানুয়ারি তার দেহের তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। ১৫ জানুয়ারি একেবারে সটান শুয়ে থাকা অবস্থায়ও শ্বাস গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে তার জন্য। ওইদিনই ফুসফুসের ডান দিকের নিচের অংশে ঘড়ঘড়ে ভাব চলে আসে (ক্রেপিটেশন) তার। ১৬ জানুয়ারির মধ্যে তার পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। সে সময় তার দেহে আর জ্বরের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ল্যাবরেটরি টেস্টে আর কোনো অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া না যাওয়ায় পরদিনই স্বেচ্ছা ঘরবন্দিত্বের উপদেশ দিয়ে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর ২৯ ও ৩১ জানুয়ারি ফলোআপ পরীক্ষা চালিয়ে তার শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।

নেপালের প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর সংক্রমণ খুব একটা মারাত্মক কিছু ছিল না। পূর্ণ পরিচর্যা ও যথোপযুক্ত চিকিৎসার পরও তাকে সুস্থ করতে সময় লেগেছে ১৩ দিন।

করোনায় আক্রান্ত এমন সন্দেহভাজনদের পরীক্ষাকালে প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরিধান করছেন চিকিৎসকরা- নেপালি টাইমস

নেপালে করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯-এ যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে মারাত্মক পরিস্থিতিতে গেছেন মাত্র ১০-১৫ শতাংশ। কমসংখ্যক পরীক্ষা করানোর বিষয়টি একটি বড় ব্যাপার হতে পারে তবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে, বয়স্কদের মধ্যে মারাত্মক অসুস্থ রোগীর সংখ্যা ভয়াবহ হারে বেড়ে যেত। 

এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জ এ এইচ১এন১ মহামারীর সময়ে বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছে ৭০ থেকে ১৪০ কোটি মানুষ। মৃত্যু হয়েছে দেড় লাখ থেকে ছয় লাখ মানুষের। অন্যদিকে নেপালে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৭৩ জন। মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এর আগে ২০০৩ সালের সার্স মহামারীর সময়েও নেপালে এ রোগে কেউ আক্রান্ত হওয়ার বা মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এমএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি