ঢাকা, শুক্রবার   ১৮ জুলাই ২০২৫

সৌদি দূতাবাসেই খুন হন খাশোগগি: তুরস্ক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১৯, ৭ অক্টোবর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

সৌদি দূতাবাসের ভেতরেই খুন হয়েছেন নিখোঁজ সাংবাদিক জামাল খাশোগগি। পরে তাঁর লাশ গুম করা হয়েছে। এমনটিই মনে করছে তুর্কি কর্তৃপক্ষ। দেশটির দুজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এই তথ্য জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। যদিও সৌদি আরব এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

তুরস্ক পুলিশের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানান, পুলিশের প্রাথমিক পর্যালোচনায় মনে হচ্ছে, খাশগোগিকে দূতাবাসের ভিতরেই খুন করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এ হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত এবং পরবর্তীতে মৃতদেহটি দূতাবাসের বাইরে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাতকার তুর্কি সরকারের মুখপাত্র বলেন, পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত থেকে জানা গেছে যে খাশোগগিকে দূতাবাসেই হত্যা করা হয়েছে।

তবে কিভাবে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে সেটা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তারা।

তবে সৌদি দূতাবাস এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তুরস্কের দাবি ভিত্তিহীন। সৌদি দূতাবাসের কনস্যুল জেনারেল মোহাম্মদ আল-ওতাবিয়া বলেন, আমি নিশ্চিত করতে চাই, জামাল খাশোগগি দূতাবাসের ভেতরে নেই। তাকে খুঁজে পেতে আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছি।

এদিকে, সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, খাশোগগির নিখোঁজ হবার বিষয়ে দূতাবাসের ভিতরে অনুসন্ধান চালাতে তুরস্ককে অনুমতি দেবে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

তুরস্কে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদক জানান, চার দিন আগে যেদিন খাশগোগি নিখোঁজ হয়েছিলেন সেদিনই ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ‍তুরস্কে এসেছেন। তারা দেশটির কূটনৈতিক না নিরাপত্তারক্ষী দলের সদস্য তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সৌদি দূতাবাস ইতোমধ্যে কিছু সাংবাদিককে ভবনটির ভেতরে ঢুকতে অনুমতি দিয়েছে। তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা খাশগোগির নিঁখোজ হওয়ার বিষয়টি উন্মোচন করবে। তারা এ ব্যাপারে গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে ও সৌদি রাষ্ট্রদূতকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করেন জামাল খাশোগগি। আগামী মাসে বিয়ে করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে খাশোগগি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশ করেছিলেন। তার হবু স্ত্রীও সঙ্গে ছিলেন, কিন্তু তাকে খাশোগগির সঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

কনস্যুলেটে প্রবেশের আগে খাশোগগিকে মোবাইল ফোনও রেখে যেতে হয়েছে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তুরস্কে আসার আগে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন এই সাংবাদিক। সৌদি যুবরাজের কঠোর সমালোচক হিসেবেই তিনি পরিচিত। 

জামাল খাশোগগি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করতেন। নিজ দেশের নীতিমালার কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনি।

এক সময়ে সৌদি রাজপরিবারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা খাশোগগি গত বছর দেশ ছেড়ে যান। সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের ওপর দমনাভিযান শুরুর পর দেশ ছাড়েন তিনি। গত মার্চে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, সৌদি আরবে বিতর্কের কোনও জায়গা নেই। সরকারের নীতিকে প্রশ্ন করলেই নাগরিকদের আটক করে কারাবন্দি করা হচ্ছে।

কাতার, কানাডা, ইয়েমেন যুদ্ধ এবং সংবাদকর্মীদের ওপর দমনাভিযান নিয়ে সৌদি নীতির কড়া সমালোচক ছিলেন জামাল খাশোগগি। ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে ভ্রমণ এবং সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি।

আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী লড়াই নিয়ে লেখালেখি করতে তিনি ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে বিন লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ১৯৯০ দশকের প্রথম দিকে তিনি বিন লাদেনের সঙ্গে সৌদি রাজপরিবারের বিরোধ মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন। তাকে সুদান থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিজ দেশে ফেরার অনুরোধ জানালেও আল কায়েদা নেতা তা প্রত্যাখান করেন।

সূত্র : আলজাজিরা।

/এআর /


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি