ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

৪ বছরের শিশু বাঁচালো মায়ের প্রাণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৮, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১১:৩২, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

মায়ের কাছে শিশু সবথেকে নিরাপদ এটা আমরা সবাই জানি। তবে সম্প্রতি  যুক্তরাজ্যে এর  উল্টো একটা ঘটনা ঘটেছে। একটি শিশুর বুদ্ধিমত্তার কারণে বেঁচে গেছে তার মায়ের জীবন। শিশুটির বয়স চার বছর। ভালো করে কথাও ফোটেনি। এই বয়সেই বিশ্ব গণমাধ্যমগুলোর শিরোনামে আসছে ছোট্ট শিশুটি। মেয়েটির নাম কেইটলিন রাইট। যুক্তরাজ্যের ডোরসেট অঞ্চলের ছোট গ্রাম আসকার্সওয়েলে বসবাস করে কেইটলিন রাইট ও তার পরিবার।

গত মাসের শুরুর দিকে কেইটলিনের মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যান। ঘটনার দিন কেইটলিন তার মা শার্লিনের সঙ্গে বাড়িতেই ছিল। এক পর্যায়ে মা শার্লিন ভীষণ অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারান।এমন ঘটনায় ঘাবড়ে যায়নি কেইটলিন। বরং সে স্থানীয় জরুরি নম্বরে ৯৯৯ এ ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে নেয়। এতো ছোট বয়সে এমন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়ায় কেইটলিনের প্রশংসা এখন সবার মুখে মুখে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সাউথ ওয়েস্টার্ন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস- সোয়াস কর্তৃপক্ষ জানান, `এতোটুকু বয়সে এই মেয়েটি যে বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে, সেটা তুলনাহীন। সে যেভাবে ফোনের অপর-প্রান্তে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে, তার মায়ের অবস্থা ব্যাখ্যা করেছে সেটা আশ্চর্য হওয়ার মতোই। পরে প্যারামেডিক্সরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে শার্লিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এরইমধ্যে ওই অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসটি শিশুটির সঙ্গে তাদের টেলিফোনের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছে। সেখানে কেইটলিনকে বলতে শোনা যায়, `মা অজ্ঞান হয়ে পড়েছে এবং তার দেখাশোনা করা প্রয়োজন।

অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসটির মুখপাত্র জানান, চার বছরের শিশু আমাদের ফোন করে তার উপস্থিত বুদ্ধি, প্রজ্ঞা আর ভীষণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। এ ব্যাপারে শার্লিন রাইট তার মেয়ে কেইটলিনকে `লিটল গার্ডিয়ান এঞ্জেল` বা `ক্ষুদে রক্ষাকারী পরী` হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, `সেই দিনের কথা আমার এতোটুকুই মনে আছে যে, কেইটলিনের বাবা কেইটলিনকে বাসায় নিয়ে এসেছেন আর আমার কাছে জানতে চেয়েছেন বাজার করার প্রয়োজন আছে কি-না। তারপর কেইটলিনের বাবা চলে গেলেন। পরে শুধু এটাই মনে আছে যে একজন প্যারামেডিক আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

শার্লিন রাইট প্রায়ই এভাবে অসুস্থ হয়ে হাত পা কাঁপিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। এ কারণে তার এমন পরিস্থিতির বিষয়ে আশেপাশের মানুষ বেশ সচেতন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, `আমি প্রায় দিনই এভাবে অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার তিন সন্তানই জানে যে সে সময়ে ঠিক কি করতে হবে। আমরা তাদের সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শিখিয়ে-পড়িয়ে রেখেছি। শার্লিন রাইট আরও বলেন,`আমার প্রথম চিন্তা এটাই ছিল যে, আমি আমার তিন সন্তানের সাথেই নিরাপদ। এটি সম্ভবত বিশ্বের সেরা অনুভূতিগুলির মধ্যে একটি।

তিনি বলেন,`আপনি যদি অসুস্থ বা বিপর্যস্ত থাকেন, দুর্বল হন বা শারীরিক পরিস্থিতি ভাল না হয়, তাহলে এ বিষয়টা খুবই ভীতিকর। কিন্তু আমি জানি যে আমার এই ছোট মেয়েটাও আমার জীবন বাঁচাতে পারে। সে আমাকে সেদিন বাঁচিয়েছে, আসলে এমন অনেক কিছুই ঘটতে পারতো যখন সেখানে কেউ ছিল না। কেইটলিনের বাবা সায়মন রাইট এ বিষয়ে বলেন, `আমরা কেইটলিনকে এটুকুই শিখিয়েছি যে, টেলিফোনের একটি ছোট বোতাম তিনবার চেপে এবং এরপর একটি সবুজ বোতাম চেপে, কীভাবে সাহায্য চাইতে হয়। এই ছোট শিক্ষাটাই আজ শার্লিনকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে এনেছে। যদি কেইটলিন এমনটা না করতো, তাহলে তো আমাদের আজকে এভাবে একসঙ্গে বসে থাকা সম্ভব হতো না। এটা সত্যিই বিস্ময়কর।

কেইটলিনের সেই জরুরি ফোন কলটির জবাব দিয়েছিলেন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের কর্মকর্তা জেস হডকিনসন। তিনি জানান, ঘটনার দিন তিনি এই ছোট্ট শিশুর বুদ্ধিমত্তা দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, `কেইটলিনের সেই বাচ্চা কণ্ঠের আধো আধো বোল শুনে আমি প্রথমে খুব অবাক হয়েছিলাম। তাই শুনেই বুঝেছি যে, একটি ছোট শিশু ফোন দিয়েছে। তবে কেইটলিন ছিল ভীষণ সাহসী। সে আমার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর স্পষ্টভাবে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দিয়েছে এবং সে জানত যে জরুরি অবস্থায় কী করতে হয়। কেইটলিনের এমন কাজের জন্য তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশংসা করে কর্তৃপক্ষ। এরপর ব্রিস্টলের বাছে সোয়াসের ৯৯৯ কন্ট্রোল সেন্টারে ঘুরতে যায় কেইটলিন।

সূত্র: বিবিসি

 

টিআর/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি