ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৫ মে ২০২৫

৬৮ বছর পর দুই কোরিয়ার স্বজনদের সাক্ষাৎ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:০৯, ২০ আগস্ট ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

দীর্ঘ ৬৮ বছর পর দুই কোরিয়ার স্বজনদের মধ্যে সাক্ষাতের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ১৯৫০ সালে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যেকার যুদ্ধের পর দুই দেশে বিভক্ত হয়ে থাকা আত্মীয়স্বজনদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন দুই কোরিয়ার নাগরিকেরা।

আজ সোমবার সকালে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে উত্তর কোরিয়া যান দক্ষিণ কোরিয়ার ৮৯ জন নাগরিক। এদের বেশিরভাগই বেশ প্রৌঢ এবং প্রবীণ। সাক্ষাতের জন্য দক্ষিণ থেকে উত্তর কোরিয়া যাওয়া ব্যক্তিদের ৬০ শতাংশের বয়সই ৮০ বছর বা তার থেকে বেশি। এদেরকে সঙ্গ দিচ্ছে তাদের নাতি-নাতনি অথবা অন্য কোন না কোন স্বজন।   

প্রায় সাত দশক আগের কোরিয়া যুদ্ধে দুই দেশের অনেক নাগরিকই তাদের পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। দীর্ঘ এই সময় একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ তো হয়নি; সুযোগ ছিলো টেলিফোন কথোপকথনেরও। আর তাই এতদিন পরের এই ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ বেশ তাতপর্যপূর্ণ।

চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন এবং উত্তর কোরিও নেতা কিম জং উন এর মধ্যেকার এক চুক্তির আওতায় এই সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন কোরিও নাগরিকেরা। প্রথমে ৯৩টি পরিবারকে উত্তর কোরিয়া প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও শেষ মুহুর্তে শারীরিক অসুস্থতার কারণে চারজনকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে এর জন্য আবেদন করেছিলেন ৯৩ হাজার দক্ষিণ কোরিও নাগরিক।

যেভাবে উত্তর কোরিয়া যায় দক্ষিণ কোরিওরা

উত্তর কোরিয়া যাওয়ার অনুমতি পাওয়া ব্যক্তিদের প্রথমে সীমান্তবর্তী শহর সকচো’র একটি হোটেলে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে তাদেরকে বাসে করে বেসামরিক অঞ্চল (ডিএমজি)-এ নিয়ে যাওয়া হয়।

তার আগে হোটেলটিতে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের নাম-পরিচয় নিবন্ধন করা হয়। এরপর হয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এরপর তাদেরকে পুরো সফর সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। এসময় তাদেরকে উত্তর কোরিয়া গিয়ে এমন কোন মন্তব্য বা কথা না বলার পরামর্শ দেওয়া হয় যা উত্তর কোরিয়ার পছন্দ হবে না।

সবশেষে বাসে ওঠার আগে এসব নাগরিকদের ছবি তুলে তার একটি প্রিন্ট আউট কপি দেওয়া হয়। তারা যেন উত্তর অংশে স্বজনদেরকে নিজেদের ছবি উপহার দিতে পারেন তাই এই ছবি তোলার ব্যবস্থা করা হয়।

উত্তর কোরিয়া প্রবেশের সময় তাদেরকে রেড ক্রসের সদস্যরা অভ্যর্থনা জানান। সেখানে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে স্বাগত ব্যানারে লেখা ছিলো- “আলাদা হয়ে যাওয়া পরিবারের পুনঃমিলনে আমরা আন্তরিক সাধুবাদ জানাই”।

 এই সাক্ষাতে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার নাগরিকেরা নিজেদের এমন স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন যারা একসময় তাদের স্বামী বা স্ত্রী, ভাই-বোন এমনকি অভিভাবক-সন্তান ছিলেন।

যুদ্ধের সময় উত্তর থেকে দক্ষিণ অংশে চলে আসা এক নারী সিওম তার ছেলেকে দেখতে উত্তর কোরিয়া গিয়েছেন। সেখানে ছেলের সাথে আছেন ৯২ বছর বয়সী তার স্বামী লি কিয়াম। তিনি যখন দক্ষিণে চলে আসেন তখন ছেলের বয়স ছিলো মাত্র চার বছর। তাই ছেলের সাথে আবার সাক্ষাৎ হওয়া নিয়ে বেশ উত্তেজিত এই দম্পতি।

৭২ বছর বয়সী সিওম বলেন, “আমার পরিবার উত্তর কোরিয়ায় বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। তাই আমি আমার ছেলের স্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করতাম। আমি তাকে কী জিজ্ঞেস করব? আমি তাকে জিজ্ঞেস করব তার বাবার তাকে আমার বিষয়ে কী বলেছে? তার বাবা নিশ্চই তাকে বলেছে যে, আমরা কীভাবে আলাদা হয়েছিলাম। এ বিষয়ে আমার তাকে জিজ্ঞেস করা উচিত’।

তবে এত অল্প সংখ্যক দক্ষিণ কোরিওকে উত্তর কোরিয়া যাওয়ার অনুমতি দেওয়াকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দক্ষিণ কোরিও রেড ক্রসের প্রধান পার্ক কিয়ং সিও। তিনি বলেন, “যারা উত্তর কোরিয়া যাওয়ার অনুমতি পাননি তাদের হয়ে আমি গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছি। উত্তর কোরিয়ায় আমাদের সহযোগীদের সাথে আমি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি যেন অন্য কোন সমাধান বের করা যায়। অনেক মানুষ অপেক্ষা করছে। তবে সুযোগ পাওয়া লোকের সংখ্যা খুব কম”।

তিনি আরও বলেন, “কেউ কেউ ৭৩ বছর যাবত জানে না তার স্বজন আদৌ বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে। কোন খবর নেই। কোন ভালোবাসা বা রাগ নেই। এটা আসলেই একটা মানবিক বিপর্যয়”।

সূত্রঃ সিএনএন

//এস এইচ এস//    

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি