ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৯ জুলাই ২০২৫

‘গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সেবা দেয়া চিকিৎসকরা জুলাই বিপ্লবের নায়ক’ 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৪৯, ২৮ জুলাই ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

গণঅভ্যুত্থানের সময় আহতদের সেবায় যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আপনারা কেবল চিকিৎসক নন, এই জুলাই বিপ্লবের অন্যতম নায়ক। আপনারা যেভাবে এই দুঃসময়ে সেবা দিয়েছেন, জাতি তা কোনোদিন ভুলবে না।

আজ সোমবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত জুলাই স্মরণ আয়োজনে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন সেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা, যারা আহত আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা দিয়েছেন।

বক্তব্যের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, জাতির জন্য এটি গভীর বেদনাদায়ক। আমি এই ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। যারা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা আমাদের আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের অবদান, তাদের পেশার মাহাত্ম্য। যখন চারপাশে কান্না, আতঙ্ক এবং অজানা আশঙ্কা, তখন আপনারাই আমাদের আশার আলো। এই কঠিন সময়ে যারা ক্লান্তি ভুলে আহতদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আমি জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘যুদ্ধের সময় আক্রান্ত ও আহতদের চিকিৎসা বন্ধ করা যায় না। এটা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। এর ব্যতিক্রম দেখেছি আমরা বাংলাদেশে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু এ দেশের ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়ে থেমে থাকেনি। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে যাতে কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা না পায়।

জুলাইয়ের আমাদের চিকিৎসকদের গল্প কোনো যুদ্ধ ক্ষেত্রের ডাক্তারদের গল্পকেও হার মানায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাস্তায় ছাত্রদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে মেডিকেলে ঢুকেও তাদের ওপর হামলা করেছিল। ডাক্তার নার্সদের হুমকি-ধামকি দিয়ে নানা রকম বাধা দেওয়া হয়েছিল। শতশত ছেলে-মেয়ে অন্ধত্ব বরণ করেছে, কারণ তারা সঠিক সময়ে চিকিৎসা পায়নি। নির্দেশ ছিল- আন্দোলনে আহত কাউকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, আপনারা আহতদের গোপনে চিকিৎসা দিয়েছেন। হাসপাতালে হাসপাতালে নিজের জীবন বিপন্ন করে জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়েছেন। রোগীর কোনো তথ্য তারা নথিভুক্ত করে রাখেনি, কারণ এই নথির সূত্র ধরে আহতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছিল। বিনামূল্যে দিনরাত গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারীদের জীবন বাঁচাতেআপনারা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়েছেন।

‘দুই চিকিৎসক বোনকে আমরা দেখেছি নিজ উদ্যোগে গ্যারেজের মধ্যে অস্থায়ী ক্লিনিক তৈরি করে চিকিৎসা দিয়েছেন। অনেকেই নিজের ঘরের মধ্যে অস্থায়ী ক্লিনিক তৈরি করে চিকিৎসা দিয়েছেন। আপনারা নিজেরা ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন, আপনাদের পরিবার ঝুঁকির মধ্যে ছিল। তবুও পাহাড়সম বাধা পার করে আপনারা মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন’, যোগ করেন প্রধান উপদেষ্টা। 

তিনি বলেন, আহতদের জন্য রক্তের সংকট ছিল, প্রশাসনের রক্তচক্ষু এড়িয়ে আপনারা রক্তের ব্যবস্থা করেছেন। আহতদের পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবস্থাপত্রে অন্য নাম, অন্য রোগ লিখে তাদের পুলিশের কাছ থেকে আড়াল করেছেন। প্রাইভেট ডাক্তাররা প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে হাসপাতালে গিয়ে গোপনে চিকিৎসা দিয়েছেন। রক্ত দেওয়ার সরঞ্জামের সরবরাহ ছিল না, আপনারা নিজেরাই এগুলো ব্যবস্থা করেছেন। এন্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ওষুধ আপনারা নিজেরাই সরবরাহ করেছেন।

শেষে ড. ইউনূস বলেন, আপনারা শুধু একজন পেশাদার চিকিৎসক নন-এই জাতির বিবেক, সাহস আর মানবতার প্রতীক। এই অসামান্য অবদান ইতিহাসের পাতায় চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি