চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর আচরণ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বিব্রতকর
প্রকাশিত : ০০:২৭, ২০ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১৫:১৬, ২০ জুলাই ২০২০

লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী
লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, বীর বিক্রম, এনডিসি, পিএসসি, পিএনজি (অবসরপ্রাপ্ত) আচরণ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর বলে জানিয়েছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে সেনানিবাসে প্রবেশ এবং সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যাচার করেন যা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে বলে জানায় (আইএসপিআর)
রোববার (১৯ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আইএসপিআর এসব তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী লেঃ জেনারেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর এনডিসির কমান্ড্যান্ট থাকাবস্থায় একাধিক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এনডিসিতে পরিচালিত বিভিন্ন কোর্সের সাথে বিদেশে ভ্রমণকালেও অনেক মেয়েকে নিয়ে চলাফেরা করেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তার এই অশোভনীয় আচরণ এবং মেলামেশার ছবি কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত হলে কর্তৃপক্ষ বিব্রত হয় এবং তাকে বিভিন্নভাবে উপদেশ দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তিনি এলপিআর এ থাকা অবস্থায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন এবং সেনা আইন বহির্ভূত মেসকিট (সামরিক পোষাক) পরে ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিবাহ করেন। কিন্তু তিনি বিবাহের পূর্বে তাকে নিয়ে ২০১৮ সালের ০৩ নভেম্বর থেকে একই বাসায় অনৈতিকভাবে অবস্থান করেন। এমনকি তিনি বিবাহের পূর্বে তাকে সঙ্গে নিয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন, সাজেক রিসোর্ট, খাগড়াছড়ি’তে অবকাশ যাপন, বিভিন্ন সময় ভারত, থাইল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডে ভ্রমণ ও অবস্থান করেন, যার সচিত্র আলামত সামরিক ও অসামরিক পরিমন্ডলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।
আরও বলা হয়, লেঃ জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী (অবসরপ্রাপ্ত) এর এ ধরণের আচরণ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর। এ ধরণের ঘটনা সেনাবাহিনীতে কর্মরত অফিসার এবং অন্যান্য পদবীর মধ্যে নেতিবাচক উদাহরণ হিসেবে কাজ করে ও বিরুপ প্রভাব ফেলে। সামগ্রিক বিবেচনায়, ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল উক্ত অফিসার’কে সেনানিবাস ও সেনানিবাস আওতাভূক্ত এলাকায় অবাঞ্ছিত (persona non grata) ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য সেনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক "অবাঞ্চিত ব্যক্তি’র জন্য সেনানিবাস ও সেনানিবাসের আওতাভূক্ত সকল স্থাপনা এবং সেনানিবাসের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা যেমনঃ সিএমএইচ এ চিকিৎসা সেবা, অফিসার্স ক্লাব, সিএসডি শপ ইত্যাদি’তে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ।
এদিকে সেনাসদর এজি শাখা (পিএস পরিদপ্তর) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, লেঃ জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী (অবসরপ্রাপ্ত) অফিসার এনডিসিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় অবসর গ্রহণের আনুমানিক এক বছর পূর্ব হতে বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং একই সাথে তিনি বিভিন্ন মহিলাদের সাথেও অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এরই ধারাবাহিকতায় জনৈক মিডিয়া ব্যক্তিত্বের সাথে অফিসারের সখ্যতা গড়ে উঠে এবং এক পর্যায়ে তা অনৈতিক সম্পর্কে রুপ নেয়। জানা যায়, তিনি উক্ত মিডিয়া ব্যক্তিত্বের সাথে দেশে-বিদেশে একাধিকবার প্রমোদ ভ্রমণে গিয়ে সময় কাটান। অফিসারকে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বারবার প্রয়োজনীয় উপদেশ প্রদান করা হলেও তিনি বিরত হন নি। বরং এলপিআর এ গমনের পরও তিনি উক্ত মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন মহিলার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, লে জেনারেল হাসান সোহরাওয়ার্দী বিবাহ বিচ্ছেদ ও পুনঃবিবাহ সংক্রান্ত নীতিমালা সম্পূর্ণ লংঘন করে গত ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট প্রথম স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেন। ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর সাভার গলফ ক্লাবে এলপিআর অবস্থায় মেসকিট পরিধান করে অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ছিলেন যা সেনানিবাসের পরিপন্থী। কোনো প্রকার অনুমতি ব্যতিত দ্বিতীয় বিবাহ এবং এমন অনভিপ্রেত আয়োজন করাটা সামরিক ও বেসামরিক অঙ্গনে নেতিবাচক হিসেবে আলোচিত হওয়ার পাশাপাশি এ সকল কর্মকান্ড বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। ফলে হাসি তামাসা ও মুখরোচক বিষয় হিসেবে সর্বমহলে অত্যন্ত বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে চলেছে।
এখানে আরও উল্লেখ্য যে, দ্বিতীয় বিবাহের পরও অফিসার বিভিন্ন মহিলার সাথে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ টেলিফোন কথোপকথনসহ অনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন যা তার চারিত্রিক স্খলনের প্রমাণ বহন করে। উল্লেখ্য বিষয়গুলো সেনা পরিমন্ডলে মুখরোচক আলোচনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত প্রমাণাদি অত্র দপ্তরে সংরক্ষিত রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একজন জেষ্ঠ্য অফিসার হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময় বর্তমান সরকার এবং দেশের প্রচলিত আইন আদালত নিয়ে বিরূপ এবং অনাকাঙ্খিত মন্তব্য করেন। যা তার মতো একজন জেষ্ঠ্য সেনা কর্মকর্তার কাছ থেকে অপ্রতাশিত।
উপরোক্ত বর্ণনার আলোকে অফিসারকে বাংলাদেশের সকল সেনানিবাস এবং সেনানিবাস আওতাভূক্ত এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার বিষয়ে বরাত ‘গ’ এর মাধ্যমে সুপারিশ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় বিএ-২০০৪ লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, বীর বিক্রম, এনডিসি, পিএসসি, পিএনজি, পিইচডি (এলপিআর ভোগরত) কে বাংলাদেশের সকল সেনানিবাসের আওতাভূক্ত এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।
এসি
আরও পড়ুন