ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৮ জুলাই ২০২৫

ভারতে বন্দী শিবির

ছাড়া পেলেন ১০২ বছরের বৃদ্ধ ‘বিদেশি’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪৯, ৩০ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১৫:০২, ৩০ জুন ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

ভারতের আসামের বরাক উপত্যকার বাসিন্দা ১০২ বছর বয়সী চন্দ্রধর দাস ছিলেন একজন দিনমজুর। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে এসে তিনি বসবাস শুরু করেন। প্রথমে ত্রিপুরায়, তারপর আসামের কাছাড়ে। সেই সময়ে জারি করা নাগরিকত্বের সার্টিফিকেটও রয়েছে তার, নাম ছিল ভোটার তালিকাতেও।

ভারতীয় নাগরিকত্বের একাধিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করেছিল এক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। পাঠিয়ে দেওয়া হয় তথাকথিত `বিদেশি বন্দী শিবিরে।`

চন্দ্রধর দাসের আইনজীবী সৌমেন চৌধুরী জানান, বয়সের কারণে কয়েকবার ভোট দিতে যেতে পারেননি তার মক্কেল, তাই তাকে সন্দেহজনক ভোটার বা `ডি-ভোটার` বলে চিহ্নিত করা হয়। পরে নির্বাচন কমিশনের ভেরিফিকেশনে দেখা যায় যে তিনি আসল ভোটার। তাই আবারও তার নাম উঠেছে ভোটার তালিকায়। কিন্তু ওই যে একবার `ডি-ভোটার` হয়ে গিয়েছিলেন, সেই ভিত্তিতেই পুলিশ তার নামে কেসটা জিইয়ে রেখে দিয়েছিল।

গত মার্চ মাসে পুলিশ তাকে আটক করে। কারণ আসামের বিদেশি ট্রাইব্যুনাল একতরফা রায় দিয়ে তাকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করে দিয়েছিল। অথচ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে যারা ভারতে এসেছেন, তাদেরই শুধু বিদেশি বলে চিহ্নিত করার কথা।

প্রায় তিনমাস পর, বুধবার দাসকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন আদালত।

আইনজীবী সৌমেন চৌধুরী বিবিসিকে বলছিলেন, ‘যেভাবে এই মামলাগুলো হচ্ছে, সম্পূর্ণভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। রাষ্ট্র যখন কোনও অভিযোগ করবে, তখন রাষ্ট্রেরই দায় যে সেই অভিযোগ প্রমাণ করার। কিন্তু এই আইনে অভিযুক্তকে আটক করা হবে, আবার তাকেই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি আসল ভারতীয় নাগরিক। এই মানুষটির ভাগ্যক্রমে নথি ছিল, তাই জোরের সঙ্গে তার কেসটা লড়তে পেরেছি। বহু ভারতীয় নাগরিক রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ছেন হঠাৎ করেই।’

বিবিসিও এর আগে প্রচার করেছিল এমন বেশ কয়েকজনের কথা, যারা বৈধ ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বিদেশি বলে চিহ্নিত হয়ে গিয়ে বন্দীশিবিরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।

আসামে এখন জাতীয় নাগরিক পঞ্জী হালনাগাদ করার কাজ চলছে, ১৯৫১ সালের পর এই প্রথমবার। ৩০ জুন চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জী প্রকাশ করার কথা থাকলেও বন্যার কারণে সেই কাজ পিছিয়ে গেছে কিছুদিনের জন্য।

লক্ষ লক্ষ বাংলাভাষী মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে কি-না তা নিয়ে।

সমান্তরালভাবে, বেশ কয়েকবছর ধরেই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে `বিদেশি` চিহ্নিতকরণের কাজও চলছে।

রাজ্যের ছয়টি জেলের ভেতরেই তৈরি হয়েছে বন্দী শিবির বা ডিটেনশন ক্যাম্প। সেখানে আটক রয়েছেন ৮৯৯ জন। এদের প্রায় সবাই বাংলা ভাষী।

এই ডিটেনশন ক্যাম্পগুলো তৈরি হয়েছে জেলের ভেতরেই। তথাকথিত এসব বিদেশি বন্দীদের দিয়েও বিনা পয়সায় কাজে লাগানো হচ্ছে বলে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন।

মানবাধিকার কর্মী আব্দুল বাতিন খন্দকার বলছিলেন বন্দী শিবিরগুলোর জন্য আলাদা কোনও জেল কোড যেমন নেই, তেমনই বিদেশি বলে চিহ্নিত হওয়া ব্যক্তিদের ভবিষ্যৎ কী, সেটাও স্পষ্ট নয়।

‘একজনকে আটক করলেন, কিন্তু কতদিনের জন্য আটক করা হচ্ছে, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই, কোনও নীতি নেই। সে কি চিরজীবন আটক থাকবে? নাকি বিদেশিরা যে দেশ থেকে এসেছেন, অর্থাৎ বাংলাদেশ, সেখানে ফেরত পাঠানো হবে! বাংলাদেশ তো ঘোষণাই করেছে যে আসামে কোনও বাংলাদেশি নাগরিক নেই। তাহলে তারাই বা ফেরত নেবে কেনও!’ বলছিলেন  খন্দকার।

বিদেশি বলে চিহ্নিত হওয়া মানুষদের রাখার জন্য আসামে যে বন্দী শিবির তৈরি হয়েছে, সেগুলোর অবস্থা খতিয়ে দেখতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দায়িত্ব দিয়েছিল মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মন্দারকে। তিনি ওই শিবিরগুলো ঘুরে গিয়ে যে দুর্বিষহ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছিলেন, তা মানবাধিকার কমিশন বিবেচনায় নিচ্ছে না, এই অভিযোগে  মন্দার সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন।

সূত্র: বিবিসি

একে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি