ঢাকা, শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

‘ডেথ ওভার’ বোলিং নিয়ে অস্বস্তিতে দল, করণীয় কী?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৫৪, ২৫ অক্টোবর ২০২২

তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান

তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান

Ekushey Television Ltd.

টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটারদের যেমন দ্রুত চার-ছক্কা হাঁকানোর সুযোগ থাকে, ঠিক তেমনি বোলারদেরও থাকে দ্রুত উইকেট নেয়ার সুযোগ। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগানোর কৌশল, প্রতিভা থাকাটাও জরুরী। 

বাংলাদেশ যেন এই ফরমেটে কোনোভাবেই হারের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। কিন্তু কেনো? সর্বাধিক রান করলেও হারতে হয়, নিম্নমানের রান করলেও হারতে হয়। এই হারটা যেন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জন্য সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

তবে বাংলাদেশের বোলিং অ্যাটাকে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো ডেথ ওভার। ডেথ ওভারে বাংলাদেশ কখনও ভালো পারফর্ম করতে পারেনি। যদিও কিছু ম্যাচে ভালো করতে দেখা গেছে। বলা যায়, যতগুলো ম্যাচে বোলিংয়ে ডেথ ওভারে ভালো করেছে, ঠিক ততোগুলো ম্যাচেই বাংলাদেশ জয়ও পেয়েছে। 

একটা সময় মোস্তাফিজুর রহমান যখন বাংলাদেশ দলের বোলিংয়ের প্রাণ ভোমরা হিসেবে আবির্ভূত হলেন, তখন অনেকটা ধরে নেয়া হলো যে, মোস্তাফিজ হয়তো বাংলাদেশের সেই কাঙ্খিত ডেথ ওভারের বোলিং দুর্বলতা ঘোঁচাতে পারবেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশও প্রতিপক্ষ দলকে ডেথ ওভারে কাবু করতে পারবে।

ঠিক হলোও তাই। মোস্তাফিজও দিচ্ছিলেন আস্থার প্রতিদান। দলও পাচ্ছিলো জয়, দর্শকরাও ছিলেন দারুণ খুশি।

কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পরই যেন হারিয়ে গেলেন সেই মোস্তাফিজ। তিনি আর কাবু করতে পারেন না প্রতিপক্ষকে। ফলে ভিন্ন হয়ে গেলো পুরোটা দৃশ্য। এখন উল্টো যেন মোস্তাফিজকেই কাবু করে ছাড়েন প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটাররা। 

কিন্তু বিসিবির পক্ষ থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যাচ্ছে না ধারাবাহিকভাবে সফল হতে পারেন এমন ডেথ বোলার।

অথচ, এই মুস্তাফিজই ছিলেন এক সময়ের সেরা ডেথ ওভার বোলার। ২০০৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেথ ওভারে ওভারপ্রতি সবচেয়ে কম রান দেয়া বোলারদের তালিকায় ৭ নম্বরে ছিলেন মুস্তাফিজ। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেথ ওভারে (১৭-২০ ওভার) ওভারপ্রতি ৭.৭৩ করে রান দিয়েছিলেন ফিজ। 

অথচ এর পর থেকে মুস্তাফিজ রান দিয়েছেন ৯.০৪ করে। ২০২১ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৩১ ইনিংসে বল হাতে নিয়ে ৩৬টি উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। সংখ্যাটা দেখতে মোটাতাজা হলেও এর পিছনে মিরপুরের উইকেটই ছিল মুস্তাফিজের টার্নিং পয়েন্ট। কারণ দেশের মাটিতে এই সময়ে মুস্তাফিজের বোলিং ইকোনমি যেখানে ৫.০১, সেখানে বিদেশের মাটিতে তা ৯.১৭! এমনকি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ওভার প্রতি ৯.৫৪ করে রান দিয়েছেন ফিজ। মিরপুরেই কেবলমাত্র সফল কাটার মাস্টার (ইকোনমি ৫.০১)।

২০২১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩১ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ১২ ম্যাচে মুস্তাফিজের ওপর আস্থা রেখে ইনিংসের শেষ ওভারে (২০তম) বল তুলে দেয়া হলেও ওভারপ্রতি ১১.৮২ করে রান দিয়েছেন বাঁহাতি এই পেসার।

পিছনে ফিরে গিয়ে যদি ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরবর্তী সময়টা দেখি, সেখানেও মোস্তাফিজ ছিলেন সেরা ফর্মে। টি-টোয়েন্টিতে তখনকার সময়ে ডেথ ওভারে, অর্থাৎ ১৬-২০ ওভারে ইকোনমি রেট বিবেচনায় করা তালিকায় চার নম্বরে আছেন বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমান।

ডেথ ওভারে ওভারপ্রতি সবচেয়ে কম রান দেয়ার এই তালিকায় মোস্তাফিজের ঠিক ওপরেই আছেন ভারতের জাসপ্রীত বুমরাহ। শীর্ষে থাকা নামটি অবশ্য চমকে দিতে পারে আপনাকে! তিনি হলেন টিমাল মিলস, ইংলিশ বাঁহাতি পেসার। সময়ের আলোচিত বোলারদের মধ্যে ছয় নম্বরে আছেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির এবং দ্বিতীয় ওয়াহাব রিয়াজ।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ইকোনমি রেটের দিক থেকে সেরা পেসার-
টিমাল মিলস- ৭.৩৬
ওয়াহাব রিয়াজ- ৭.৪২
জাসপ্রীত বুমরাহ- ৮.০৬
মোস্তাফিজুর রহমান- ৮.১২
জুনাইদ খান- ৮.১২
মোহাম্মদ আমির- ৮.১৪
জফরা আর্চার- ৮.১৫
ক্রিস মরিস- ৮.৩৯
ইসুরু উদানা- ৮.৪৯
সিদ্ধার্থ কৌল- ৮.৫১

কিন্তু হঠাৎ করে ইনজুরিতে পড়ে মোস্তাফিজের যেন বোলিং ধার কমে গেছে। মোস্তাফিজ ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৩ ম্যাচ খেলে বোলিং করেছেন ৪৩ ওভার। ৩৫৯ রান দিয়ে নিয়েছেন মোটে ৮টি উইকেট। ইকোনমি রেট ৮.৩৪। 

অথচ ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার বোলিংয়ে কি শক্তিশালী ধারটাই না ছিলো! আর সময়ের ব্যবধানে তা হারিয়ে গিয়ে হয়ে গেছে ঠিক উল্টোটা।  

এই পরিসংখ্যান থেকে বুঝা যাচ্ছে, মোস্তাফিজ একটা সময় দলকে ডেথ ওভারে অনেক ভালো কিছু এনে দিলেও বর্তমানে ডেথ ওভারে তার ব্যর্থতা দলের জন্যও ডেকে আনছে ভরাডুবি। যার জন্য বাংলাদেশ সর্বাধিক রান করেও টি-টোয়েন্টিতে পরাজিত দল।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের এশিয়া কাপ ২০২২-এর কিছু পারফরম্যান্স দেখলে আরো স্পষ্ট হবে ডেথ ওভারে বাংলাদেশের বোলিং কতটা অসহায়।  

এশিয়া কাপ ২০২২-এ দুটি ম্যাচ জয়ের দারুণ সম্ভাবনা থাকলেও হারতে হয়েছে ওই ডেথ ওভারেই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৪৭ রান করেও ম্যাচ হাতের মুঠোয় এনে হেরে যায় বাংলাদেশ। শেষ দুই ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান ১৭ রান দেয়ার পর সাইফউদ্দিনের দেয়া ২২ রানেই জয় বঞ্চিত হয় দল।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও একই দশা। ১৮৩ রানের বিশাল সংগ্রহ করেও হারতে হয়েছে ২ উইকেটে। শেষ দুই ওভারে যখন শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ২৫ রান, তখন ১৯তম ওভার করতে আসেন এবাদত হোসাইন। অভিষেকে এবাদত দুই ওভারে ৩ উইকেট নিলেও শেষ দিকে হয়ে ওঠেন বেশ খরুচে।

১৯তম ওভারে এবাদত দেন ১৭ রান, ওভারে ছিল একটি নো বল ও একটি ওয়াইডও। আর ইনিংসের শেষ ওভারে যখন ৮ রান সেভ করা দরকার, তখন শেখ মাহেদীর প্রথম দুই বলেই আসে ৫ রান, তৃতীয় বলে দেন নো বল। আর ওই বলেই দুই রান নিয়ে চার বল বাকি রেখেই ম্যাচ জিতে যায় আফগানরা।

অতি সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজেও দেখা যায় একই চিত্র। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই ওভারে ১৯ রান দেয়া মোস্তাফিজ ডেথ ওভারে অর্থাৎ শেষ ২ ওভার করে দিয়েছেন ২৯ রান (ইনিংসের ১৭তম ওভারে দিয়েছেন ১৬ রান এবং ২০তম ওভারে দিয়েছেন ১৩ রান)।

২০২২ সালে ডেথ ওভারে মোস্তাফিজ ৯ ইনিংসে বোলিং করে ওভার প্রতি দিয়েছেন ১০.৯১ রান। দলের আরেক পেসার তাসকিন আহমেদও ডেথ ওভারে অর্থাৎ ১৬ থেকে ২০ ওভারের মধ্যে রান দেন আরও বেশি। চলতি বছর ৫ ইনিংসে বল করে ওভার প্রতি ১১.৫০ করে রান দিয়েছেন তিনি।

আরেক বোলার ইবাদত হোসাইনও হেঁটেছেন একই পথে। এ বছরেই অভিষেক হওয়া এই পেসার ডেথ ওভারে ৩ ইনিংস বল করে ওভারপ্রতি দিয়েছেন ১০.৬৬ রান। অর্থাৎ ম্যাচের শেষ দিকে চাপের মুখে ভালো বোলিংয়ে কাউকেই ভরসা হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে না।

এমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ বোলিং পারফরম্যান্স দলকে কখনও কোনো ম্যাচে স্বস্তি দিচ্ছে না। তাইতো সব সময় পরাজয়ের বৃত্তেই ঘুরপাক খেতে হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন ডেথ ওভারে ভালো ধারাবাহিক বোলিং। যার অভাব বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছে। 

তাই বিসিবির এখনই উচিৎ চাপের মুখে ডেথ ওভারে ভালো বোলিং করতে সক্ষম ও পারঙ্গম বোলার খুঁজে বের করা। না হলে মাঝে মধ্যে ভাগ্যজোরে দুই-এক ম্যাচে জয় পেলেও ধারাবাহিক সাফল্যের নাগাল পাবে না বাংলাদেশ।

লেখক- মাজহারুল ইসলাম শামীম। শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি