তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার থেকে সরে যাবো: আসিফ মাহমুদ
প্রকাশিত : ১৩:৫৫, ১৩ আগস্ট ২০২৫

আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার থেকে সরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীনের টকশোতে তিনি এ কথা জানান।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ২০১৮ সাল থেকে আমি রাজনীতিতে যুক্ত। রাজনীতিতে আছে, এমন কারও নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা উচিত না। তাই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার থেকে সরে যাবো।
এরপর রাজনীতিতে যুক্ত হলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা, জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দেবেন কিনা এসব বিষয় স্পষ্ট করেননি জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মুখ আসিফ মাহমুদ।
খালেদ মুহিউদ্দীন সঞ্চালিত টকশোতে একক অতিথি হিসেবে ছিলেন জুলাই আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে থাকা এই উপদেষ্টা। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন ও এক বছরের কার্যক্রম, এই সময়ের সরকার ও রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা, জুলাই আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর মধ্যে বিভাজন, আগামী জাতীয় নির্বাচন, নিজের রাজনৈতিক গন্তব্য, মুরাদনগরের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী– এমন নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আসিফ মাহমুদ।
পতাকাবাহী গাড়ি নয়, ক্ষমতার মোহ নয় বরং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে সোচ্চার থাকা নিশ্চিত করতেই সরকারে আছেন, এমন দাবিও করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এই উপদেষ্টা বলেন, এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। এরমধ্যে বড় মাইলফলক জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া সম্ভব হলো। এখনও জুলাই সনদ বাকি আছে। স্থানীয় সরকারের সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয় আছে। এসব দায়িত্ব শেষ করে যেতে না পারলে ঐতিহাসিক দায় থেকে যাবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রথমে মানতে চাননি, মাস কয়েক আগে এমন একটি ভিডিও বক্তব্য দিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এটা সরকার গঠনের আগের ঘটনা। তখন বঙ্গভবনে একটি বৈঠক হয়েছিল। যেখানে সরকারপ্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করা হলে সেনাপ্রধান এর বিরুদ্ধে মত দেন। তার যুক্তি ছিল, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তাকে পছন্দ করে না। এক পর্যায়ে তিনি মেনে নিলেও ‘বুকে পাথরচাপা দেওয়া’ শব্দ ব্যবহার করেন।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের বা আমার কোনও ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। ৫ আগস্টের পর বা গণঅভ্যুত্থানের আগে সেনাবাহিনীর যে অবদান তা আমরা স্বীকার করি। তবে সেনাপ্রধানের সঙ্গে দ্বিমত শুধু আওয়ামী লীগ প্রশ্নে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নানা দিকে নানা শক্তি সক্রিয়, সেই ইঙ্গিত করে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, একটি মহল জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনার তোড়জোড় করছে। এই দলটিকে প্রধান বিরোধীদল হিসেবে সামনে আনতে চায় তারা। আওয়ামী লীগের যেসব নেতার ইমেজ ভালো, তাদেরও জাতীয় পার্টির (জাপা) হয়ে নির্বাচনে নিয়ে আসার পাঁয়তারা চলছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ড. ইউনূস সরকারের ভেতরও সরকার আছে। একক সরকার নেই, বরং একাধিক সরকার চলছে। ৫ আগস্টের পর সামরিক বাহিনী ক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তিও আছে। উপদেষ্টারা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন।’
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আরও বলেন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এর দায়টা পড়ছে আমার ওপর। অথচ শুধু আমি না, আমাদের সরকারের ইচ্ছে থাকলেও স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজন করতে পারছি না। সব দল রাজি থাকলেও বিএনপি ও তাদের সহযোগী কিছু দল মূলত এই নির্বাচনে রাজি হচ্ছে না।
কুমিল্লার মুরাদনগরে মবের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড, শিক্ষক নিপীড়ন, চাঁদাবাজি– এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন। গত কিছুদিনে এমন আলোচনায় সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এগুলোকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ‘অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিতে চান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা। এসবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন টকশোতে জানালেন তিনি। আসিফ মাহমুদের ভাষ্যমতে, কেউ কেউ মনে করছেন, তিনি মুরাদনগর থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। এটা ঠিক নয়।
আসিফ মাহমুদ যোগ করেন, আমি জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করতে চাই। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরে গিয়ে নির্বাচন করা, রাজনীতি করা সুবিধাজনক হবে না। জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্র হিসেবে ঢাকা শহরই আমার জন্য সুবিধাজনক স্থান।
এএইচ
আরও পড়ুন