নির্বাচনের আগে গণভোট চায় জামায়াত,বিএনপি-এনসিপি চায় নির্বাচনের দিন
প্রকাশিত : ২১:৩৭, ৫ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জনগণের অংশগ্রহণ ও সম্মতি নিশ্চিত করতে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে দেশের সব রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে। তবে কখন এই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর রয়েছে ভিন্নমত।
রবিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে। তবে বিএনপি ও এনসিপি বলছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই আলাদা ব্যালটে আয়োজন করতে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চায় নির্বাচনের আগেই গণভোট অনুষ্ঠিত হোক।’
তিনি আরও বলেন, এটি জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম ঐকমত্য। ভবিষ্যতেও অন্যান্য বিষয়ে এভাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আলী রীয়াজ জানান, কমিশন আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের কাছে এক বা একাধিক সুপারিশ জমা দেবে। এর আগে ৮ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরেক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ফেব্রুয়ারিতে গঠিতব্য নতুন সংসদ জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে যে সংস্কার করবে, তা যেন টেকসই হয় এ বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কার্যত ঐকমত্য রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের দিনই আলাদা ব্যালটে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘একটি অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে। অধ্যাদেশ জারি করে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বলতে পারবে। সেই জনরায় হবে চূড়ান্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের রায়ই চূড়ান্ত এটা আরোপিত নয়। ভবিষ্যৎ সংসদও সেই রায় অমান্য করতে পারবে না’
এদিকে গণভোটের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন,‘আমরা চাই, গণভোট নির্বাচনের আগেই হোক।’
জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচনে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না করে নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরে গণভোট হতে পারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেও হতে পারে। গণভোট হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই। জনগণকে জটিল অবস্থায় না ফেলে সহজভাবে এগোলে আমরাও বাঁচি, জাতিও বাঁচে।’
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী এ সরকারকেই বিষয়টি সমাধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটের পাশাপাশি গণভোটের জন্য আলাদা ব্যালট থাকবে। যেখানে সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে জনগণ মতামত দেবে। এ বিষয়ে বেশির ভাগ দল একমত হয়েছে।’
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ৮০ শতাংশ ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কমিশন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে। বাকি ২০ শতাংশ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট চেয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তিনবার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে এর মধ্যে দুইবার ছিল প্রশাসনিক গণভোট এবং একবার সাংবিধানিক গণভোট।
এমআর//
আরও পড়ুন