মাল্টিরোল যুদ্ধ বিমান / বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ইউরো-ফাইটার টাইফুন কেনার ব্যাপারে সর্বশেষ যা জানা গেছে
প্রকাশিত : ১৬:২০, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২২:৩৫, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
২০২৭ সালের মধ্যে ইতালি থেকে ১০টি ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট ইউরোফাইটার টাইফুন কেনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে কয়েকটি জাতীয় গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। এর আগে বিভিন্ন সুত্রের বরাতে জানা গিয়েছে বাংলাদেশ ২০ টি চীনা J10CE ভিগোরাস ড্রাগন মাল্টিরোল কম্ব্যাট এয়ারক্রাফট কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আসলেই বাংলাদেশ এতোগুলো ফাইটার জেট কিনতে যাচ্ছে কি না?
বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ ২০ টি চীনা J10C কিনিতে যাচ্ছে, এতে তেমন সংশয় নেই। কিন্তু একইসাথে ইতালি থেকে ইউরোফাইটার টাইফুন কিনিতে যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নের অবকাশ আছে। তবে এটা সত্য যে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান ইতালি গিয়ে ইউরোফাইটার টাইফুন উড়িয়েছেন, টেস্ট ফ্লাইট সম্পন্ন করেছেন। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় ইউরোফাইটার টাইফুন কেনার ব্যাপারটা বিবেচনায় ছিলো বলে বিভিন্ন সুত্র জানিয়েছিলো। এখন জানা যাচ্ছে, ইউরোফাইটার টাইফুন কেনার উদ্যোগের নীতিগত অনুমোদন ও ইতালি সরকারের সম্মতিতে চুক্তিপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ইতালির সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করা হবে।
দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, পাক-ভারত ও চীন-ভারত সীমান্তে চলমান উত্তেজনা, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর ও মায়ানমারের সংকট বিবেচনায় বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন জরুরি। সামরিক সক্ষমতা শক্তিশালী করাই এখন সরকারি অগ্রাধিকার—গত কয়েক বছরে আধুনিকায়ন পিছিয়েছিল বলেও তারা মনে করেন।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ যদি সত্যি ইউরোফাইটার টাইফুন কিনিতে পারে তবে এটি হবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য একটি বিগ মুভ। এই বিমান অত্যন্ত্য আধুনিক ও স্টেট অফ দ্য আর্ট টেকনোলোজি দ্বারা প্রস্তুত করা। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইউরোফাইটার টাইফুন বহুমুখী ক্ষমতাসম্পন্ন একটি যুদ্ধবিমান। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি ও স্পেনের সম্মিলিত কনসোর্টিয়াম উদ্যোগে এটি তৈরি করা হয়েছে। আকাশে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন, শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ভাঙন, স্থল আক্রমণ, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার—সব ক্ষেত্রে টাইফুন দক্ষতার স্বাক্ষর রাখে। ন্যাটো মানসম্পন্ন টাইফুনে রয়েছে দুটি ইউরোজেট ইজে-২০০ টার্বোফ্যান ইঞ্জিন যা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে। রিফুয়েলিং ছাড়া একটানা ৩০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম এটি। টাইফুন সর্বোচ্চ উড়তে পারে ৫৫ হাজার ফুট উচ্চতায়।
বিমানের ডেল্টা-ডানা ও কানার্ড নকশা এটিকে দেয় অতুলনীয় গতিশীলতা। এক আসনের হলেও রয়েছে দুই আসনের সংস্করণ। দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ মিটার, ডানার প্রস্থ ১১ মিটার, খালি অবস্থায় ওজন ১১ টন এবং সর্বোচ্চ টেক-অফ ওজন ২৩.৫ টন। এ ছাড়া প্রযুক্তি, রাডার ও সেন্সর সুবিধা, অস্ত্র বহনের সক্ষমতা, স্টেলথ প্রযুক্তি থাকায় শত্রুর রাডারে সহজে ধরা পড়ে না এবং উচ্চতাপ সহনশীল হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ লড়াইয়ের সক্ষমতা আছে এই বিমানের।
তবে এখনো বাংলাদেশ বিমান বাহিনির কোনো দায়িত্বশীল সুত্র ইউরোফাইটার টাইফুন কেনার ব্যাপারটা স্বীকার করেনি এমনকি অস্বীকার করতেও দেখা যায় নি। অনেক সমালোচক সম্প্রতি প্রধান উপদেষতার ইতালি সফর ও বিমান বাহিনির প্রধানের ইতালি সফরকে টেনে আনছেন। তবে একটি গণমাধ্যমকে উদৃত করে সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহামুদ সম্প্রতি ১০টি ইউরোফাইটার টাইফুন কেনার ব্যাপারে তার ভেরিফায়েড আইডি থেকে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন আন্তর্জারিক ডিফেন্স ফোরামগুলোতেও বাংলাদেশের ইউরোফাইটার টাইফুন কেনার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। সামনে ইতালির প্রধানমন্ত্রি জর্জিয়া মেলোনি বাংলাদেশ সফরে আসলে এই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে প্রধানউপদেষ্টার কার্যালয় কিংবা বিমান বাহিনির দায়িত্বশীল কেউ ইউরোফাইটার টাইফুন কেনার ব্যাপারে কোনো তথ্য দেয়ার আগ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, বাংলাদেশ আসলেই এই শক্তিশালী যুদ্ধ বিমান কিনতে যাচ্ছে কি না।
আরও পড়ুন