ঢাকা, রবিবার   ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঈদের আগেই ঢাকা-বেনাপোল রুটে চালু হচ্ছে রেল সার্ভিস

প্রকাশিত : ২১:৪২, ৩০ জুন ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

রেলপথে যাত্রী সেবা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে বেনাপোল-ঢাকা রুটে চালু হতে যাচ্ছে এক্সপ্রেস রেল সার্ভিস। এই রেল সার্ভিস চালুর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ঈদুল আযহার আগেই বেনাপোল-ঢাকা রুটে এক্সপ্রেস রেল চালু হতে যাচ্ছে।

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর আবারও বেনাপোল-ঢাকার মধ্যে রেল চালু এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন হওয়ায় খুশি সবাই। ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ চালু হলে ব্যবসা বাণিজ্যের পাশাপাশি পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াতের ব্যাপক সুবিধা হবে।

প্রতিদিন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভারতে ছয় থেকে সাত হাজার পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করে থাকে। ঈদ পূজা পার্বণে এ সংখ্যা বেড়ে যায়। যাত্রীদের সিংহভাগ আসে ঢাকা থেকে। বেনাপোল থেকে পরিবহন সঙ্কট, মালিক শ্রমিকদের অবরোধ, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যানজটের কারণে যাত্রীরা নানামুখি হয়রানির শিকার হয়। রেল চালু হওয়ায় সেই হয়রানি লাঘব হতে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসার জন্য বেনাপোল দিয়ে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এই পথে দেশের সিংহ ভাগ মানুষ যাতায়াত করে থাকে। তাই রেল চালু হলে যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে। সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

রোববার ভারতে যাওয়ার পথে বেনাপোল চেকপোস্টে ঢাকার পাসপোর্টযাত্রী আলমগীর হোসেন জানান, আরিচা ঘাটের যানজটের কারণে আমাদের নাজেহাল হতে হয়। শনিবার রাত ১০টায় ঢাকা থেকে বাসে উঠে বেনাপোল রোববার বেলা ২টার সময় নেমেছি। এতে অসুস্থতা বোধ করছি।

একই বাসের আরেক যাত্রী উর্মিলা সেন বলেন, আমার অসুস্থ পিতাকে নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা করি। বেনাপোল পর্যন্ত আসতে আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে। সারারাত বাসের ভিতর বসে আরও অসুস্থ হয়ে গেছে। রেল চালু হলে পথ বেশি হলেও অন্তত যানজটের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। নিরাপদ এ যাত্রায় কমবে জীবনহানির ঘটনা।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য চিকিৎসার জন্য আমাদের ভারতের উপর বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু ভারতের সাথে আমাদের যোগাযোগের মাধ্যম শুধু বাস। ঢাকা-বেনাপোল রুটে রেল চালু হলে শুধু বেনাপোল নয় গোটা দেশ এগিয়ে যাবে।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড কমার্সের ল্যান্ডপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, খুব তাড়াতাড়ি বেনাপোল-ঢাকা রুটে রেল চালু হবে। আমাদের স্বপ্ন স্বার্থক হবে। রেল সেবা চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে। বেনাপোল স্থল বন্দর ও ঢাকার মধ্যে আগে কেবল বাসই ছিল ভরসা।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, প্রথম পর্বে আসছে বেনাপোল-ঢাকা রুটে এক্সপ্রেস রেল। এরপর বুলেট ট্রেন। ভারতের সাথে রেল কার্গো সার্ভিস। এ সেবা চালু করতে এর আগে গত ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের যৌথ ইশতেহার এবং উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য কাঠামোগত চুক্তির আওতায় (রেলপথ বিষয়ে) উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সংক্রান্ত একসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। সভায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা, রেলের মহাপরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা, ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ও অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বেনাপোল রেল স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান বলেন, ঈদুল আযহার আগে বেনাপোল-ঢাকা রেল চালু হবে। এই রেলটিতে ১০টি বগি থাকবে। তবে রেলের কোনও নাম এখনও নির্ধারণ হয়নি। প্রাথমিকভাবে বেনাপোল এক্সপ্রেস, বন্দর এক্সপ্রেস ও ইছামতি এক্সপ্রেস এই তিনটি নাম পছন্দ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ১০টি বগির মধ্যে দুটি কেবিন, দুটি এসি চেয়ার ও বাকিগুলো চেয়ার থাকবে। কেবিনের ভাড়া প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২০০ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া এক হাজার টাকা ও নন এসি চেয়ার ভাড়া হবে ৫০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এটি সামান্য কয়েকটি স্টপিজে থামানো হবে। এক কথায় ননস্টপ হিসেবে এ রেলটি চলবে। বেনাপোল-ঢাকা রেল রুটে যাত্রী সেবার ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ সিট অনলাইনে যাত্রীরা সংগ্রহ করতে পারবেন।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা পেলেই আগামী ঈদের আগে এই সেবা চালু হবে। এর জন্য ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’ আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি বেনাপোলের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ দ্রুত সহজতর করার। যাতে করে ভারতের সাথে যোগাযোগও সহজ হবে। পাশাপাশি বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রফতানির কাজে নিয়োজিত ব্যবসায়ীদেরও যাতায়াত সহজতর হবে।

উল্লেখ্য, বেনাপোল-কলকাতা রুটে ভারতের সাথে এর আগেও যাত্রী সেবায় রেল সার্ভিস চালু ছিল। তবে দেশ স্বাধীনের পরপরই তা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বছর দশ আগে দুই দেশের সরকারের প্রচেষ্টায় আবারও চালু হয় রেল চলাচল। প্রথমে পণ্য পরিবহণে কার্গো সার্ভিস চালু হয়। পরে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটে বন্ধন রেলের যাত্রীসেবা চালু হয়।

কেআই/

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি