ঢাকা, সোমবার   ১৪ জুলাই ২০২৫

`আঙ্গরে আব্বা নাই ঈদে জামা দিবো কেডা`

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২০:৪২, ১০ আগস্ট ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

‘হেই যহন ছোট আছিলাম তহন বলে আঙ্গরে আব্বা ঈদের নিগা নতুন জামা কিনা দিসিলো। বুঝ ওবার পর ৫ বছর ধইরা ঈদে আর কেউ জামা কিনা দেয় না। আঙ্গরে আব্বা মইরা গ্যাছে। ঈদ আইলে পুরান জামা গায় দিয়াই ঈদ করি। ম্যানসের বাড়ি যায়া সেমাই খাই। এই ঈদেও আঙ্গুরে একই অবস্থা। আব্বা নাই তাই জামা দিবো কেডা।'

 শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জের যমুনার দুর্গম চর চৌহালী উপজেলার চালুহারা গ্রামে সরেজমিনে চরের মানুষের ঈদ আনন্দের কথা জানতে গিয়ে মৃত ইউসুফ আলীর ৮ বছরের শিশু কন্যা উর্মি ও তার ছোট সন্তান নয়ন (৬) জানালেন এমনি হতাশার কথা। তারা জানান, ঈদ আমাগোরেও কুরমানী দিয়ার মন চায়। আটে থিকা গরু ছাগল কিনা ব্যাবাকে দ্যাহায়। আমাগোরেও তো শখ করে। 

কিন্তু প্যাটেই ভাত জোটেনা, জামা পাইনা। আর ওগনা পামু কোনে।  উর্মির মা জ্যোসনা খাতুন জানান, গত ৫ বছর আগে এনায়েতপুর হাটে কুলির কাজ করতে গিয়ে ভারী জিনিস-পত্র টানতে গিয়ে ঘাড় ভেঙ্গে মারা যান। এর পর থেকে মাটি কাটা শ্রমিক ও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোন রকমে ৫ সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলছে অতি অভাবের সংসার। 

ঈদ এসেছে ছেলে মেয়েরা নতুন পোশাক দাবী করছে। সেমাই, চিনি, দুধ কিনতে বলছে। এমন পাবো কোথায়। পেটে ভাত জোটেনা ঈদ দিয়ে কি হবে আমাদের। আল্লাহ ছাড়া আমাদের সাহায্যের কেউ নাই।

তাদের মত এমনি কথা জানালেন গ্রামের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০টি অসহায় পরিবারের শিশু ছেলে মেয়েরা। চৌহালীতে এবারের বন্যায় অন্তত অর্ধ-লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। হাজারও মানুষের নদীতে ভেঙ্গে গেছে ঘর-বাড়ি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে থাকার ঘর ও আবাদী জমি। তাদের এই ঈদ এখন অনেকটাই নিরানন্দের। বিশেষ করে স্থল, সদিয়াচাঁদপুর, উমরপুর, ঘোরজান ইউনিয়নে এর প্রভাব বেশী। 

এদিকে উন্নয়ন সংস্থা মানবমুক্তির নির্বাহী পরিচালক হাবিবুল্লাহ বাহার ও চৌহালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক সরকার এদের পাশে সহায়তায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, আমরা সাধ্যানুযায়ী এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। হৃদয়বানরাও এগিয়ে আসলে ওদের ঈদ আনন্দ পূর্ণতা পেত।

এনএম/কেআই
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি