ফেসবুক লাইভে এসে প্রবাসী স্বামীর আত্মহত্যা, স্ত্রী গ্রেপ্তার

যশোরের শার্শায় ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে দোষারোপ করে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বিদেশ ফেরত রফিকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবক। বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত রফিকুল ইসলাম শার্শা উপজেলার নাভারন কাজিরবেড় গ্রামের দিদার আলীর ছেলে।

মৃত রফিকুলের স্বজনেরা জানান, অনেক স্বপ্ন, সাধ ও ইচ্ছা নিয়ে নিজ স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন রফিকুল ইসলাম। বিদেশ থেকে স্ত্রীর নামে পাঠিয়েছেন প্রায় ১৪ লাখ টাকা। তার ঘরে জন্ম নিয়েছে একটি কন্যা সন্তান। কিন্তু দেশে ফিরে তার সব স্বপ্ন, সাধ ও ইচ্ছা শেষ হয়ে গেছে। তাকে ছেড়ে অর্থ ও দামী আসবাবপত্র নিয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে প্রবাসী স্বামীর ঘর ছেড়েছে একই উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মনিরা ইয়াসমিন। স্ত্রীকে না পেয়ে ক্ষোভে অভিমানে বাড়িতে এসে ফেসবুক লাইভে দাঁড়িয়ে কয়েকজনকে দায়ী করে তাদের নাম স্ট্যাম্পে লিখে বিষ পান করেন রফিকুল।

স্বজনেরা আরো জানান, পরকীয়ায় জড়িয়ে ঘর ছাড়ে স্ত্রী মনিরা। রফিকুল বিদেশ থেকে ফিরে স্ত্রী সন্তানকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। বিভিন্নভাবে স্ত্রীকে বুঝিয়েও ফেরাতে পারেনি বাড়িতে। পায়নি সন্তানের দেখা। এ ব্যথা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করছে প্রবাসী রফিকুল। 

এর আগে বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে ফেসবুক লাইভে এসে প্রবাসী রফিকুল বলেন, আমি আর ১০ মিনিট পরে আত্মহত্যা করবো। আমার বাবাকে বলছি, আমার বালিশের নিচে স্ট্যাম্পে অভিযুক্তদের নাম লেখা আছে, তাদের নামে মামলা করতে। আমি এই লাইভে বলছি আমার মৃত্যুর জন্য আমার স্ত্রী মনিরা, শাশুড়ী আয়শা আক্তার, খালা রিনা পারভিন, খালু আব্দুল, মামাশ্বশুর মিঠু ও যশোরের লাইব্রেরী প্রিন্সিপ্যাল হাবিবুর রহমান দায়ী। 

পরে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে সন্তানকে দেখার ও দোয়া করার আকুতি জানিয়ে বিষপান করে সে। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীও জানিয়ে যায় রফিকুল। 

তাৎক্ষণিক স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে এলে পরিবারের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। 

এ বিষয়ে তার বোনের স্বামী রেজোয়ানুল ইসলাম সীমান্ত বলেন, বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা, স্ত্রী এবং মেয়েকে কাছে না পাওয়ার কারণে আত্মহত্যা করেছে রকিকুল। বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা ও বাড়ির দামি মালপত্র নিয়ে পালিয়ে যায় স্ত্রী মনিরা। পরে রফিকুল স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নিয়ে থানায় গিয়ে স্ত্রীকে অনুরোধ করলেও মনিরা বাড়িতে ফিরে আসেনি।

এ ব্যাপারে যশোরের নাভারন সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান জানান, মৃত রফিকুলের পিতা দিদার আলী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে শার্শা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে একটি মোবাইল ও স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে। ফোনে লাইভ ভিডিও ও স্ট্যাম্পের লেখা বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

পুলিশ সুপার আরও জানান, এরইমধ্যে ভিকটিমের স্ত্রী মনিরাকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হচ্ছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। 

এনএস/