ঢাকা, সোমবার   ০৬ মে ২০২৪

সন্তানকে হত্যা করে গর্ভবতী মায়ের আত্মহত্যা 

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২০:৩৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ২০:৩৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

একটি স্বর্ণের চেইনকে কেন্দ্র করে যশোরের শার্শার পল্লীতে জুলেখা খাতুন (২৪) নামে গর্ভবতী মা তার নিজের চার বছরের কন্যা সন্তান আমেনা খাতুনকে হত্যা করেছে। রোববার সকালে এই হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী শিকারপুর গ্রামে। জুলেখা খাতুন সাত মাসের অন্ত:সত্বা ছিলেন। শার্শা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

গর্ভবতী মাসহ সন্তানের মৃতের ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর ধারণা অপমানের বোঝা সইতে না পেরে জুলেখা তার নিজ কন্যা সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর নিজে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গ্রামবাসী সুষ্ঠু তদন্তের পর দোষীদের শাস্তি দাবি করেছে।

মৃত জুলেখার চাচা তরিকুল ইসলাম জানায়, ৬/৭ মাস পূর্বে শার্শা উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের আলাউদ্দিন গ্যাদনের মেয়ে জুলি বেগম নামে এক মহিলার একটি স্বর্ণের চেইন হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায়। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার সময় মৃত. জুলেখা খাতুনের চার বছরের কন্যা মৃত আমেনা খাতুন চকলেট কিনতে একই এলাকার আলাউদ্দিনের দোকানে গেলে তার মেয়ে জুলি বেগম আমেনার গলা থেকে তার চুরি যাওয়া স্বর্ণের চেইন মনে করে জোড়পূর্বক খুলে নেয় এবং এলাকার মানুষদের সামনে অপমান করেন। 

এঘটনা মেয়ে তার মাকে জানালে জুলেখা খাতুন জুলি বেগমকে বলে, এটি আমার মায়ের দেয়া চেইন। আমার মা এই স্বর্ণের চেইনটি আমাকে বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমার মা ঢাকায় চাকরি করে বিধায় শুক্রবার ছাড়া এলাকায় আসতে পারবে না বলে মোবাইল ফোনে তৎক্ষণাত জানায়। যথাযথ প্রমাণ না হওয়ায় স্বর্ণের চেইন খোয়া যাওয়া জুলি বেগম তার বাসায় ফিরে যান। এই ঘটনার জের ধরে হারানো স্বর্ণের চেইনের মালিক জুলি বেগম শিকারপুর গ্রামের জুলেখার স্বামী আল মামুনের বাসায় প্রমানের জন্য এলে জুলেখার সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার পর ক্ষোভে অপমানে রোববার সকালে সবার অগোচরে জুলেখা খাতুন নিজ সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করে।

জুলেখা খাতুনের মামাতো ননদ একই গ্রামের শরিফুল ইসলামের মেয়ে সীমা খাতুন জানায়, রোববার সকাল ৮টার দিকে তার ভাবীকে অনেক ডাকাডাকির পর কোন সাড়া শব্দ না দেওয়ায় সন্দেহ হয়। তখন জানালা দিয়ে উকি মারলে দেখতে পাই ভাবী বাশেঁর আড়ার সাথে ঝুঁলে রয়েছে। তখন আমার চিৎকারে আশপাশের পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙ্গে লাশটি নামানোর পর ঘাটের উপরে আমার ভাইয়ের মেয়ে আমেনার নিথর দেহটি পড়ে থাকতে দেখি। পরে এলাকাবাসী শার্শা থানায় ও স্থানীয় ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শষ্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

আত্মহত্যাকারী জুলেখার স্বামী আল মামুন বলেন, আমার শাশুড়ি রোজার মাসে আমার স্ত্রীকে একটি স্বর্ণের চেইন দিয়েছে। সে ব্যাপারে আমি অবগত আছি। আমার শাশুড়ি প্রমাণের জন্য শুক্রবারে আসার কথা। আমি রোববার সকালে রাজমিস্ত্রির কাজে যাওয়ার পর আমার ভাইয়ের মোবাইল কলের মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্ত্রী মেয়েকে মেরে আত্মহত্যা করেছে।

নাভারন সার্কেলের এএসপি জুয়েল ইমরান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জুলি বেগম ও তার মাকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় এখনো কোন মামলা হয়নি। 

কেআই/আরকে


 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি