ঢাকা, রবিবার   ১৯ মে ২০২৪

ট্যাক্স রিটার্ন যাচাইয়ের সুযোগ কম থাকায় করদাতাদের ভোগান্তি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৩৯, ৭ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২৩:৪৩, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

জনবলের অভাবে প্রান্তিক কার্যালয় থেকে নিরীক্ষার জন্য আসা ট্যাক্স-রিটার্ন যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আর এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ করদাতারা।

রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে রাজস্ব বোর্ডের সার্কেল কার্যালয়গুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে ট্যাক্স-রিটার্ন বোর্ডের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু এত রিটার্ন যাচাই-বাছাই করার সক্ষমতা নেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিরীক্ষণ, গোয়েন্দা এবং তদন্ত শাখার।

এরফলে আঞ্চলিক কর কার্যালয় থেকে যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয় তাই অনুমোদন দিতে হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। আর এই সুযোগে আঞ্চলিক কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার ‘হয়রানির’ শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলছেন করদাতারা। কর-রিটার্ন ফাইল নিরীক্ষণের নামে করদাতাদের একরকম জিম্মি করছে এসব অসাধু কর্মকর্তারা।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে, কিছু জ্যেষ্ঠ্য কর কর্মকর্তারা এহেন অবস্থার কথা শিকারও করেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যথাযথ যাচাই-বাছাই করার সক্ষমতা না থাকার সুযোগ নিয়ে কতিপয় কর্মকর্তারা এমনটা করে থাকেন বলে মন্তব্য করেন তারা।

আরও অভিযোগ আছে যে, কর কর্মকর্তাদের অদক্ষতা এবং অনিচ্ছার কারণে গুরুত্বপূর্ণ রাজস্বের ফাইলও অবহেলায় পরে থাকে। পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা এবং রাজস্ব আদায়ের স্বদিচ্ছা-মানসিকতা না থাকায় প্রতি বছর বড় অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তবে সবাই সব কিছু জেনেও কেন যেন নিরুপায় রাজস্ব প্রশাসন।

বোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর অন্তত ২৫ হাজার ফাইল অডিটের জন্য দাখিল করা হয়। আর অডিটের মাধ্যমে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি আয় হয় সরকারের।

রাজস্ব বোর্ডের এক জ্যেষ্ঠ্য কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বয়ংক্রিয় নিরীক্ষণ ব্যবস্থা চালু করে করদাতাদের হয়রানি বন্ধ করা সম্ভব। যাচাই এর জন্য ফাইলগুলো বাছাই করার সময় মাঠ পর্যায়ের কর্মতাদের আরও সাবধান হতে হবে।

তিনি আরও বলেন যে, কিছু মাঠ কর্মকর্তাদের কর আদায় বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষা ও দক্ষতা নেই।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ এ বিষয়ে বলেন, সরকার সার্বিক স্ব-মূল্যায়নের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে কর-রিটার্ন দাখিলের প্রতি উৎসাহিত করে। কিন্তু তা আবার অডিট করার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া শুরু করে বোর্ড। আর এটিই বোর্ডের আসল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে।

করদাতাদের প্রতি কর কর্মকর্তাদের বিশ্বাস স্থাপনের প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন রাজস্ব বোর্ডের সাবেক এই চেয়ারম্যান। তিনি আরও বলেন, “অডিটের নাম করে যদি হয়রানি বৃদ্ধি পায় তাহলে করদাতারা রিটার্ন দাখিল করতে উৎসাহিত হবেন না।

পাশাপাশি বড় অংকের কর দাতাদের প্রতি মনযোগ না দিয়ে নিম্ন আয়ের করদাতাদের হয়রানি করার মাধ্যমে কর কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ সময়ও নষ্ট করছেন বলে মন্তব্য করেন ড. মজিদ। এসময় কর-রিটার্ন অডিট করতে সরকারের যে খরচ হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

২০০৭-০৮ অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চালু করা “স্ব-মূলায়ন ভিত্তিতে” শতকরা ৯০ভাগ কর-রিটার্ন দাখিল হয়। একটি সমীক্ষায় জানা যায়, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা গড়ে ৩ শতাংশ কর-রিটার্ন যাচাই এর জন্য বাছাই করে। আর এ বাছাই প্রক্রিয়া হয় যথিচ্ছা ভিত্তিতে।

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, “যথার্থতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কর কর্মকর্তাদের উচিত যাচাই এর জন্য রিটার্ন নির্ধারণের সময় ঝুকি’র বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। এলোমেলো খেয়াল খুশি মত রিটার্ন ফাইল যাচাইয়ের জন্য না পাঠানোই ভাল। এতে সচেতন এবং দায়িত্ববান করদাতারা হয়রানি থেকে মুক্তি পাবেন”।

তিনি আরও বলেন, “যাচাই করার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এগুলো করদাতাদেরও জানানো উচিত। এতে করে তারা (করদাতারা) নিজেদের প্রস্তুত করতে পারবে”।

অন্যদিকে মাঠ কর্মকর্তাদের প্রতি রাজস্ব বোর্ডের এসব দিক নির্দেশনা পালন না করার অভিযোগও আছে।

বোর্ডের নির্দেশনা মোতাবেক, ত্রুটি ধরা না পরলে একই করদাতার রিটার্ন এক সাথে তিন বছরে অডিটের জন্য পাঠানো যাবে না।

বোর্ডের নির্দেশনায় আরও বলা আছে যে, একজন করদাতা যদি আগের বছরের থেকে তার আয় অন্তত ১৫ শতাংশ বেশি বলে ঘোষণা দেন তাহলে তার রিটার্ন অডিটের জন্য সুপারিশ করা যাবে না।

করদাতাদের অভিযোগ, কর আইনজীবীদের সাথে আতাত করে মাঠ পর্যায়ের কর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা একটি ভুয়া তালিকা তৈরি করেন। এ তালিকায় থাকা কতিপয় করদাতাদের তাদের রিটার্ন যাচাই-বাছাই এর জন্য নির্ধারিত হয়েছে মর্মে জানানো হয়। এতে করে ভীত সন্ত্রস্ত করদাতারা ঐ সব কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা দিতে বাধ্য হন।

সোলায়মান পারসি নামের পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, “পুরান ঢাকার কর অঞ্চলের এক আইনজীবী আমাকে একটি তালিকা দেখান। সেখানে আমারও নাম ছিল। তালিকায় থাকা আমাদের সবাইকে জানানো হয় যে, আমাদের রিটার্নগুলো যাচাই-বাছাই এর জন্য নির্ধারিত হয়েছে। সেই আইনজীবী আমাদের সকলের কাছ থেকে টাকা নেন। সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করার কথা বলে এ টাকা নেন তিনি।”

উল্লেখ্য, বিগত ছয় বছরে, রাজস্ব বোর্ড বিশ হাজার কোটি টাকার মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকাই পায় ‘আয়কর’ খাত থেকে। এর ৩০শতাংশের মত কর আসে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) থেকে। আর বাকি কর পাওয়া যায় দেশের ৩১টি কর অঞ্চল থেকে।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি