ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

একসময়ের কবুতর ব্যবসায়ী এখন সফল উদ্যোক্তা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২৭, ১ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১৩:৫৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সৈয়দ নুরুল ইসলাম

সৈয়দ নুরুল ইসলাম

‘স্কুলজীবনে বাড়ির আঙিনায় নিয়মিত সবজি চাষ করতাম। শীতে আলু, বেগুন, টমোটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও কাঁচামরিচ আর কত কি। বর্ষায় কচু লাউ কাকরল। সাথে কবুতর পালন করতাম। সংসারের প্রয়োজন মেটাতে বাড়তি সবজি বিক্রি করতাম। কয়েকটি হাটে বিক্রির টাকা জমিয়ে গ্রামের বন্ধুদের নিয়ে গোপনে চলে যেতাম চট্টগ্রাম শহরে। আলমাস, লায়ন, সিনেমা প্যালেস, খুরশীদ মহল, রঙ্গম জলসা ইত্যাদি নামকো সব সিনেমা হলে ছবি দেখতাম। গ্রামের বখে যাওয়া ছেলেরা পয়াসা খেলা নামের এক প্রকার জুয়া বসতো যততত্র হরহামেশা। মাঝে মাঝে সিকি আধুলি হাতে তাদের সাথেও ওই পয়সা খেলায় নেমে পড়তাম আমিও।

একদিন সবজি আর নিজের পোষা কিছু কবুতর ছানা নিয়ে গেলাম কাজির বাজারে বেচাবো বলে, সাথে আর কবুতর ছানা কোনেকাচাই আর বিক্রি হয়নি। মনে খারাপ। সবকিছু গুছিয়ে বাড়ি ফিরবে এমন সময় এক ভদ্রলোক বললেন ২০০ টাকা দেবো। তাতেই রাজি হয়ে গেলাম। ভদ্রলোক আবার শর্ত দিলে তার বাড়ি পর্যন্ত যেতে হবে আমাদের। ওতেও রাজি হয়ে গেলাম।

গ্রামের কাঁচা পথ। চার পাশে ঘুটঢ়ুটে অন্ধকার। মাথায় সবজির খাঁচা, হাতে কবুতর ছানা। ভদ্রলোক সামনে আমরা তার পিছু পিছু হাটঁছি।... প্রায় ২০ মিনিট হাঁটার পর ভদ্রলোক বললেন, এখানে দাঁড়াও। আমি টাকা নিয়ে আসছি।  সবজির খাঁচা আর কুবতর কার হাতে তুলে দিয়ে আমরা দুজন অপেক্ষায় থাকলাম। ভদ্রলোক আর আসেন না। ঘুটঘুটে অন্ধকারে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ভ্রগ্ন মনোরথে বাড়ি ফিলে দেখি মা লণ্ঠন হাতে উঠানে দাড়িয়ে আছেন আমার পথ চেয়ে। নিজের ৩০ বছর ব্যবসায়ী জীবনে কত হাজার কোটি টাকার পণ্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেছি তার সঠিক হিসাব রাখা হয়নি। কখনো ডিসকাউন্ট কখনো অর্ডার বাতিল কখনো এয়াফ্রেইট কখনও নন-পেমেন্ট, সব মিলিয়ে কত কোটি টাকা যে কতদিকে চলে গেছে, মনে রাখিনি। কিন্তু এখনো ঠিক মনে রেখেছি সেদিনের সেই ২০০ টাকা খোয়ানোর কথা। কখনো ভুলবো না সবজি আর কয়েকটি কবুতর ছানা নিয়ে প্রতারিত হওয়ার কথা।

জীবনের প্রতিটি পাতায় যেন নতুন বাঁক। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হল, ফলাফল নিয়ে নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই। কারণ এই মধ্যে ফ্রিজ-টেলিভিশনের মিস্ত্রি হিসেবে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে সার্টিফিকেট পেয়ে গেছি। মা’য়ের অজানাতে মামাকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলাম ভিসা পাঠানোর জন্য। মামা আমার সে চিঠি পেয়েছিলো কি না জানিনা। ইতোমধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক রেজান্ট রেরুলো। দ্বিতীয় শ্রেনিতে পাস করলাম। একদিন সন্ধ্যায় আমার প্রিয় বন্ধু আইয়ুব আমাদের বাড়িতে এসে হাজির। দৈনিক আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে বলল, দোস্ত তুই কোন সাবচেক্টে পড়বি। আমার দুবাই যাওয়ার স্বপ্নের কথা বন্ধু মহলে তখনো অজানা। প্রথমে আইয়ুব জানালো আমি দুবাই নিয়ে ভাবছি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে না। চোখ কপালে তুলে আইয়ুব আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ তারপর যা বলল তার অর্থ হচ্ছে তাকে ছেড়ে আমি দুবাই যেতে পারব না। কিন্তু কি আশ্চর্য! আমি আইয়ুবকে ছাড়িনি। আইয়ু্ব আমাকে ছেড়ে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছে  কোন অজানায়। প্রিয় বন্ধু আমার....

আইয়ুবের পীড়াপীড়িতে অবশেষে রাজি হলাম। ও সমাজবিজ্ঞান নিয়ে অর্নাস করবে । আমি  অ্যাকাউন্টিং এবং ম্যানেজমেন্টে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। অবশেষে দুবাই যেতে প্রস্তুত গরিবের ঘরে জন্ম নেওয়া যুবকের উড়োহাজটি থাকলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আমার পিতৃতুল্য বড়ভাই এই একবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয় দশকের মধ্যপর্বে চট্টগ্রাম উন্নয়নের রূপকার চট্টগ্রামে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তখন শহিদ সোহরাওয়ার্দী সড়কের দানু মিয়া মার্কেটে দুই রুমের অফিস ভাড়া নিয়ে কামফ্যাক্টারি নামে চালাত সেলাই সুতো প্যাঁচানোর কারখানা। সব সময় এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন ভাই আমার। ভাইয়ের নতুন ও কুটির ব্যবসার কথা শুনে গেলাম ভাইয়ের কাছে। মিনিট দশেক ‍বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমার সবকিছু উজাড় করে তোর পড়াশুনা চালাব। তারপর থেকে আর পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি……………..চলবে

লেখক: সৈয়দ নুরুল ইসলাম,চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী (ওয়েল  গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ)

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি