ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

বেসরকারি খাত চাঙ্গা করতে বাড়ালো এডিআর সমন্বয়ের সময় 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:১৭, ১১ অক্টোবর ২০১৯

দেশের বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করতে এ খাতের ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি ও  পুঁজিবাজারকে সঙ্কট কাটিয়ে চাঙ্গা করতে বাড়ানো হয়েছে কগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত বা এডিআর সীমা। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এক সার্কুলার জারি করে এডিআর বাড়িয়ে আগের অবস্থানে এনেছে। এর ফলে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ল।

এর আগে এডিআর কমানোর পর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যায় এবং শেয়ারবাজারে সংকট বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে নির্দেশনা জারির পর এডিআর সমন্বয়ে চার দফা সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ চলতি মাসের ৩০ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। 

গত বছরের ৩০ জানুয়ারি এক নির্দেশনার মাধ্যমে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর এডিআর ৮৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়। ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ৯০ শতাংশ থেকে নামিয়ে আনা হয় ৮৯ শতাংশ। যেসব ব্যাংকের এডিআর সীমার ওপরে ছিল ধীরে ধীরে তা নামিয়ে আনতে বলা হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে সময় দেওয়া হয় গত বছরের ৩০ জুন। তবে অনেক ব্যাংক তা বাস্তবায়ন করতে না পারায় দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়।

ব্যাংকাররা জানান, বাজারে তারল্য জোগান স্বাভাবিক থাকায় ২০১৬ ও \'১৭ সালে অনেক ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ দিচ্ছিল ব্যাংকগুলো। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে আমদানি বাড়তে থাকায় ঋণের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ায় বাজারে তার প্রভাব পড়ে। আমানত সংগ্রহে অসম প্রতিযোগিতা থেকে সুদহার বেড়ে দুই অঙ্কে উঠে যায়। এখন এক অঙ্কে নামাতে দফা দফায় চিঠি দিয়েও সুদহার কমছে না। আবার বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি অনেক কমে গত জুলাইতে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশে নেমেছে। বাড়তি সুদ দিয়েও ঋণ পেতে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। শেয়ারবাজারে দরপতনের পেছনে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমানোর কারণে বাজারে তারল্যপ্রবাহ কমছে বলে মনে করেন অনেকে। অবশ্য ওই সময় এডিআর কমানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সিদ্ধান্ত জানার পর না কমানোর অনুরোধ জানিয়ে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি চিঠি দেয় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি। তবে তাদের অনুরোধ আমলে না নিয়ে ৩০ জানুয়ারি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জুনভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত সীমার ওপরে রয়েছে ১৫ ব্যাংকের এডিআর। তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে দুটি সরকারি এবং ১৩টি বেসরকারি খাতের ব্যাংক। অবশ্য তিন মাস আগে মার্চ পর্যন্ত ১৯টি ব্যাংকের এডিআর বেশি ছিল। এ সময়ে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের এডিআর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এর প্রধান কারণ গত এপ্রিল-জুন সময়ে তিন মাসে ব্যাংক খাতের আমানত বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। আর ঋণ বেড়েছে ৪০ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। এর আগের তিন মাসে আমানত বেড়েছিল মাত্র ৪ হাজার ১৮ কোটি টাকা। ঋণ বেড়েছিল যেখানে ১১ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। বর্তমানে যেসব ব্যাংকের এডিআর সীমার ওপরে রয়েছে প্রতিটিই রয়েছে ৮৫ শতাংশ ও ৯০ শতাংশের ওপরে। ফলে জরিমানা এড়াতে চাইলে এখন সীমার ওপরে থাকা ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আলাদাভাবে সময় নিতে হবে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে আমানত পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ এখন আর আগের মতো উচ্চ সুদ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে না। যথাসময়ে আমানত ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার বিষয়টি মাথায় রেখে তারা ব্যাংকের স্বাস্থ্যের বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে টাকা রাখছেন। এতে করে সামগ্রিক পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও খারাপ অবস্থার ব্যাংকগুলো চাপের মধ্যে আছে। উচ্চ সুদসহ নানাভাবে চেষ্টা করেও অনিয়মের কারণে আলোচিত ব্যাংকগুলো আমানত পেতে হিমশিম খাচ্ছে।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি