ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৫

আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ রুয়েটের ‘টেন্ডার মানিক’

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২০:০৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছেন সাবেক এক ছাত্রদল নেতা। বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারি সাবেক ওই ছাত্রদল নেতার সঙ্গে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির আওয়ামীপন্থী প্রভাবশালী দুই কর্মকর্তাও। মহানগর আওয়ামী লীগের আলোচিত সিন্ডিকেটবাজ এক শীর্ষ প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়াতেই রুয়েটের সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন তার। যাতে কয়েক বছরেই আঙ্গুল ফুলে হয়েছেন কলাগাছ। 

মোহাইমিনুল ইসলাম মানিক নামের ওই নেতা বর্তমানে রাবির প্রকৌশল বিভাগের সার্ভেয়ার পদে কর্মরত। গত কয়েক বছর ধরে তিনি রুয়েটের সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। বর্তমানে তিনি এলাকায় ‘টেন্ডার মানিক’ নামে পরিচিত। রাবিতে চাকরি করলেও তিনি দিনের বেশী সময় কাটান রুয়েটে। 

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মোহাইমিনুল। যদিও সরকারি চাকুরি বিধি ১৯৭৯ এর ১৭ ধারায় বলা আছে, কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে সরকারি কার্য ব্যতীত অন্য কোন ব্যবসায় জড়িত হতে অথবা অন্য কোন চাকরি বা কার্য গ্রহণ করতে পারবে না।

রাজশাহী নগরের মেহেরচন্ডি এলাকার বিএনপি কর্মী মনোয়ার হোসেনর ছেলে মোহাইমিনুল ইসলাম মানিক রাজশাহী সার্ভে কলেজের ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানিক তৎকালীন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের হাত ধরে ছাত্রলীগে ভেড়েন। এর পর তিনি বাগিয়ে নেন নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ। বর্তমানে তিনি মতিহার থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার আশীর্বাদে অনেক ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীকে পিছনে ফেলে রাতারাতি টেন্ডার মানিক হয়ে যান মতিহার থানা আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

বর্তমানে টেন্ডার মানিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে নিজেই রুয়েটের প্রায় ৭২ লাখ টাকার ছয়টি কাজ পরিচালনা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে আইকন এন্টারপ্রাইজের নামে ৩৫ লাখ ১৮ হাজার, মেসার্স জনি ট্রেডার্সের নামে ছয় লাখ ২৬ হাজার, মেসার্স মাবরুকা ট্রেডার্সের ১২ লাখ ৭৩ হাজার, বসুন্ধরা এন্টারপ্রাইজের নামে ১১ লাখ ৭০ হাজার ও মুক্তার হোসেনের নামে পাঁচ লাখ ৮২ হাজার টাকার কাজ। টেন্ডার ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে এ কাজগুলো হাতিয়েছেন টেন্ডার মানিক। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুয়েটের এক ঠিকাদার জানান, টেন্ডার মানিকের পার্টনার রয়েছেন রুয়েটের দুই কর্মকর্তা। এরা হলেন, রুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের সহকারি রেজিষ্টার ও অফিসার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুফতি মো: রনি এবং রুয়েটের সহকারি প্রকৌশলী, রুয়েট অফিসার্স সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হারুন-অর-রশিদ। 

রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বর্তমান প্রশাসনকে জিম্মি করে রুয়েটের এই দুই কর্মকর্তা টেন্ডার আহ্বান ছাড়াই সরকারি নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে টেন্ডার মানিকের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার কাজ করছে। 

তিনি আরও বলেন, রুয়েটের এই সিন্ডিকেটটি চাকুরীর পাশাপাশি বিভিন্ন ঠিকাদারের বিভিন্ন নামের লাইসেন্স ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। 
সম্প্রতি রুয়েটের শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও উপকরণের জন্য ৩৪০ কোটি ১৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। একনেক সভায় ‘রুয়েট অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের এই উন্নয়ন প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। 

এই প্রকল্পের আওতায় রুয়েটের তিনটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি ইনস্টিটিউট ভবন, একটি করে ছাত্র-ছাত্রী হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল পাঁচতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ, একটি শিক্ষক কোয়ার্টার, একটি শিক্ষক ডরমেটরি, একটি অফিসার্স কোয়ার্টার, একটি স্টাফ কোয়ার্টার, মেডিকেল সেন্টার ভবন ও উপাচার্যের বাসভন নির্মাণ করা হবে। 

এই প্রকল্পের আওতায় ১৩টি ভবন নির্মাণ করা হবে য়ার ১১টি হবে ১০ তলা বিশিষ্ট। রুয়েটের এই ব্যাপক উন্নয়ন কাজ সরকারি নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতে বিভিন্নভাবে তৎপরতায় রয়েছেন টেন্ডার মানিকের নেতৃত্বে এই প্রভাবশালী টেন্ডার সিন্ডিকেট।

রুয়েট কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দিন বলেন, টেন্ডার মানিকের মাধ্যমে রুয়েটের দুইজন কর্মকর্তা নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে কোটেশনের মাধ্যমে কাজ করিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তদন্ত করে এ বিষয়গুলোর প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে মোহাইমিনুল ইসলাম মানিক বলেন, তিনি কোন ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে জড়িত নন। রুয়েটের ৭২ লাখ টাকার কাজ যে প্রতিষ্ঠানগুলো পেয়েছে তার কোনটি তার নামে নেই। তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নিজের বক্তব্য না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে রুয়েটের সহকারি প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ বলেন, রুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে ঠিকাদারদের সঙ্গে তার দেখা বা কথা হয়। কিন্তু কোন কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। কেউ প্রমাণ দিতেও পারবে না বলে দাবি করেন তিনি।

রুয়েটের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন বলেন, রাজস্ব খাতে ছয় লাখ ও উন্নয়ন খাতে ১০ লাখ টাকার কাজ কোটেশনের মাধ্যমে করার নিয়ম রয়েছে। পাঁচটি গ্রুপে ৭২ লাখ টাকার কোটেশনের কাজের বিষয়ে তার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। 
 
এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি