বিনোদন জগতে আমূল পরিবর্তন আনছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম
প্রকাশিত : ১০:৫২, ৩০ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১১:০৬, ৩০ আগস্ট ২০১৯
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বিনোদন জগতে। দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। দর্শকদের জন্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার পাশাপাশি তরুণ নির্মাতাদের দিয়েছে নির্মানের স্বাধীনতা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা।
প্রচারের স্বাধীনতা থাকায় দারুণ সব গল্প যেমন উঠে আসছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের পর্দায়, তেমনি অভিনয় শিল্পীদেরও সুযোগ বাড়ছে নিজেকে উজাড় করে দেবার। আর এ সব কিছুর মিশেলে বিনোদন জগতে সময় আর স্থানের স্বাধীনতাই নয়, পুরো শিল্পেই আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ওয়েবসাইট আর মোবাইল অ্যাপ নির্ভর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো।
বিশ্বখ্যাত পরিচালক কোয়েন্টিন টারান্টিনোর সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ সিনেমার প্রচারণায় লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওকে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রসঙ্গে।
উত্তরে তিনি জানান- সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসবে দর্শকের অপেক্ষার ক্ষেত্রে।
একটা সিনেমা তৈরি হলে এর টিজার, ট্রেইলার প্রভৃতির মাধ্যমে আগ্রহ জমে উঠেছে দর্শকদের। অপেক্ষার প্রহর শেষে সিনেমা হলে হুড়োহুড়ি বাড়ছে।
আমাদের জীবনধারাতে এসেছে বিপুল পরিবর্তন। অবসর সময় পাওয়াটাই এখন বিলাসিতা আমাদের জন্যে। বিশেষ করে আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে একটি রুটিন মেনে নির্দিষ্ট সময় বের করাই দিনদিন মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তাই এই পরিবর্তিত বাস্তবতায় খুঁজে নিতে হচ্ছে এমন সব উপায় যেখানে সময় পেলেই বিনোদন গ্রহণের সুযোগ থাকবে। থাকবে হাজারো ধরণের কন্টেন্ট। এমন চাহিদার প্রেক্ষিতেই জন্ম ডিজিটাল বিনোদন প্ল্যাটফর্ম।
এভাবেই বিনোদন জগতে স্থান করে নিতে থাকে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হুলু, এইচবিও নাও এর মতো সব প্ল্যাটফর্ম। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই দেশীয় ও আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মসমূহও। আন্তর্জাতিক সব প্ল্যাটফর্মের ভীরে দেশীয় প্ল্যাটফর্মগুলোও এখন বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। বঙ্গবিডি, বায়োস্কোপ এর মতো স্থানীয় প্ল্যাটফর্মসমূহের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলা কন্টেন্ট জগতে স্থান করে নিয়েছে ‘হইচই’, জি-ফাইভ এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোও।
বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য এ দেশে কার্যালয় খুলেছে কলকাতা ভিত্তিক ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হইচই। সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের জন্য এই অ্যাপ। আর বাংলাদেশের মেধাবী নির্মাতাদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দিতেই এখানে অফিস নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিছুদিন আগেই হইচইয়ে মুক্তি পেয়েছে অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘ঢাকা মেট্রো’। যা দর্শকদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে। এছাড়া, সম্প্রতি শেষ হয়েছে হইচই-এর দ্বিতীয় অরিজিনাল সিরিজ ‘মানি হানি’-এর প্রথম সিজন। তানিম নূর ও কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ওয়েব সিরিজটি প্রথম সিজনেই করেছে বাজিমাত। মূলত, সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই ক্রাইম থ্রিলারটি পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
উল্লেখ্য যে, হইচইয়ের ঝুলিতেও রয়েছে নতুন পুরাতন মিলিয়ে অসংখ্য চলচ্চিত্র। এই প্ল্যাটফর্মটির আরও ইতিবাচক দিক হচ্ছে দর্শকেরা যৎসামান্য মাসিক এবং বাৎসরিক সাবস্ক্রিপশন ফি’র বিনিময়েই হইচইয়ের সকল কন্টেন্ট উপভোগ করতে পারেন। এই ফি প্রচলিত সকল মাধ্যম ব্যবহার করে পরিশোধ করা যায়। বাংলাদেশ থেকে দর্শকেরা ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও ডিজিটাল ওয়ালেট ছাড়াও অফলাইন সাবস্ক্রিপশন স্ক্র্যাচ কার্ডের মাধ্যমে ‘হইচই-এ সাবস্ক্রাইব করতে পারবেন যা পাওয়া যাচ্ছে ঢাকার সকল মীনাবাজার ও গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার আউটলেটে।
কোটি কোটি সাবস্ক্রাইবার, বিপুল অর্থের সমাহার আর অরিজিনাল কন্টেন্ট তৈরির প্রয়োজনীয়তা থেকে প্রচুর সিনেমা আর সিরিজের ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে এই প্ল্যাটফর্মগুলো। ফলে মুষ্টিমেয় প্রযোজকের হাতে আর আবদ্ধ থাকছেনা চলচ্চিত্র আর টিভি সিরিয়াল জগত। এখন যেহেতু প্রচারমাধ্যমগুলো থেকেই বিপুল চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে সেদিক থেকেও চলচ্চিত্র নির্মাণ শিল্পে সুদিনের আগমনী বার্তা মিলছে বলে মনে করেন অনেকেই।
এসএ/