ঢাকা, রবিবার   ১৯ মে ২০২৪

রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে কাঁদলেন এমিন এরদোয়ান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৫১, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২২:৪৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে কাঁদলেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোয়ান।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শনের সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে এক মধ্যবয়স্ক রোহিঙ্গা নারী কাঁদতে কাঁদতে তার দিকে এগিয়ে এলে ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোয়ান তাকে বুকে টেনে নেন। এসময় ওই নারীকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তিনি নিজেও কেঁদে ফেলেন।   

ক্যাম্পে অবস্থানরত আহত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেখানে উপস্থিতি রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তাও এমিন এরদোয়ান।  

তার সঙ্গে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেগলুত কাভাসোগলু, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ ৬০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রয়েছে।

মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকায় পৌঁছান তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোয়ান।

তার সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেগলুত কাভাসোগলু। এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের অভ্যর্থনা জানান।

বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে উখিয়ার কুতুপালংয়ে পৌঁছে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধিত ক্যাম্প ও অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেন এমিনি এরদোয়ান ও মেগলুত কাভাসোগলু। কাদামাটিতে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা পায়ে হেঁটে ক্যাম্পগুলো সরেজমিনে দেখেন তারা। এসময় রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের সঙ্গে তারা কথা বলেন এবং তাদের দেশত্যাগের কারণ, দুর্ভোগ, নির্যাতনের বর্ণনা ইত্যাদি শোনেন।

কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা মুখপাত্র ইউনুস আরমান জানান, তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুতুপালং ও আশপাশের এলাকার বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। এসময় তারা পায়ে হেঁটে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থা ঘুরে ঘুরে দেখেন। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দোভাষীর সহায়তায় কথা বলেন এবং তাদের পরিস্থিতি ও নির্যাতনের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হন। এসময় একাধিক নারীকে বুকে টেনে নিয়ে সান্ত্বনা দেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোয়ান।

রোহিঙ্গাদের এই বিপদের সময় ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি এমিনি এরদোয়ান। এছাড়াও তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন ফার্স্ট লেডি এমিলা।

তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান বলেছেন, আমরা রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে যাওয়া পাশবিকতার কথা শুনেছি। তাদের (রোহিঙ্গাদের) ওপর ঘটে যাওয়া নিপীড়ন বড়ই অমানবিক, বর্বর। নিজ দেশে এভাবে পাশবিকতার শিকার হওয়া কখনো কাম্য নয়। এটি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে জাতিসংঘের আগামী অধিবেশনে তুলে ধরা হবে।

বিপদাপন্ন রোহিঙ্গাদের জীবনমান বিবেকসম্পন্ন যে কাউকে আপ্লুত করবে। অমানবিকতায় মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করলেও মানবিকতায় প্রতিবেশী বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করে আসছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে তুরস্কের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

এসময় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেগলুত কাভাসোগলু বলেন, রোহিঙ্গারা অত্যন্ত অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য যা করছে সেজন্য তুরস্কের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। তুরস্ক রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। ভবিষ্যতেও এ সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন শেষে তারা বিকাল ৩টার দিকে বিমানযোগে ঢাকায় ফিরে আসেন।

আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেগলুত কাভাসোগলু।

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে গত শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তিনি একে ’গণহত্যা’ বলেও উল্লেখ করেন। গত সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে ফোন করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তার অঙ্গীকার করেন।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কক্সবাজার ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, তুরস্কের ফার্স্ট লেডি চাল, ডাল ও তেলসহ নানা ভোগ্যপণ্য মিলিয়ে প্রায় একশ টন ত্রাণ এনেছেন। তা বিতরণের জন্য রেড ক্রিসেন্ট’র সঙ্গে একটি চুক্তি হচ্ছে। তবে এসব ত্রাণ সম্পর্কে প্রশাসনের পূর্বানুমতি না নেয়ায় ত্রাণগুলো গ্রহণে আমাদের বিলম্ব হচ্ছে।

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি