ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪

‘দুই মাসে ৪০ রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়েছে মিয়ানমার সেনারা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও রোহিঙ্গা নিধনের স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি দাবি করেছে যে, সর্বশেষ দুই মাসে অর্থাৎ অক্টোবর ও নভেম্বরে আরও ৪০টি গ্রামের বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। ২৫ আগস্টের পর রাখাইনে এ নিয়ে ৩৫৪টি গ্রাম আংশিক বা পুরোপুরি পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

এই সময়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রতিবেশি বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। স্যাটেলাইটে তোলা ছবি বিশ্লেষণের পর যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এসব কথা বলছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, স্যাটেলাইট ছবিগুলো প্রমাণ করছে যে, এই ধ্বংসযজ্ঞ এমন সময়েও চালানো হয়েছে, যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে মিয়ানমার। ২৩শে নভেম্বর ওই সমঝোতা হয়। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের সময়েও রাখাইন গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ চালানো থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার এই প্রতিশ্রুতি স্রেফ একটি প্রচারণা।
গত ২৫শে নভেম্বর রাখাইনের মংডুর কাছে মিয়াও মি চ্যাঙ গ্রামে আগুন আরও ঘরবাড়ি ধ্বংসের ছবি তুলেছে স্যাটেলাইট। পরের এক সপ্তাহের মধ্যে চারটি গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
সংস্থাটির এশিয়ার বিষয়ক পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলছেন, সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের সময়েও রাখাইন গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ চালানো থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার এই প্রতিশ্রুতি স্রেফ একটি প্রচারণা। রোহিঙ্গা গ্রামগুলো ধ্বংসের যেসব অভিযোগ মিয়ানর সেনাবাহিনী অস্বীকার করে আসছে, সেটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে এসব স্যাটেলাইট ছবি।`
মিয়ানমারের মংডু, বুথিডাং আর রাথিডাং শহরে আশেপাশের ১০০০ গ্রামের উপর স্যাটেলাইটের তোলা ছবি বিশ্লেষণ করেছে এসব তথ্য পেয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এ বছর অগাস্ট মাসের শেষের দিকে রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরুর পর এসব গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়।
 সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫৪টি গ্রামের মধ্যে অন্তত ১১৮টি গ্রামে হামলা হয়েছে ৫ই সেপ্টেম্বরের পর, যখন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের অফিস থেকে ঘোষণা দেয়া হয় যে, রাখাইনে অভিযানের সমাপ্তি হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, অগাস্ট থেকে রাখাইনে শুরু করা এই অভিযানের সময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হত্যা, ধর্ষণ, গ্রেপ্তার আর ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড চালিয়েছে। জাতিগত নির্মূলের এই অভিযান মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গেই সমতুল্য বলে সংস্থাটি দেখতে পেয়েছে।
১৪ই ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠান মেদসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ে (এমএসএফ) বলছে, মিয়ানমারে আগস্টে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর এক মাসে অন্তত ৬ হাজার ৭`শ রোহিঙ্গা হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৬ হাজার ৭`শ মৃত্যুর কারণ সহিংসতা, যার মধ্যে পাঁচ অথবা তার চেয়ে কম বয়সের শিশু ছিল ৭৩০ জন।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে সববেশি বেশি মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে মিয়ামারে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর ইতিহাসের ভয়াবহতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা নাফ নদী হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে প্রবেশ করেছে। এর আগেও বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করে আসছে।  

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি