হরমুজ প্রণালি এড়িয়ে গেলো তেল-কেমিক্যালবাহী ৩ জাহাজ
প্রকাশিত : ২০:২৯, ২৩ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় হরমুজ প্রণালীকে এড়িয়ে চলছে তেল ও কেমিক্যাল ট্যাংকারগুলো। সামুদ্রিক জাহাজ পর্যবেক্ষণ প্ল্যাটফর্ম ‘মেরিন ট্রাফিকের’ তথ্য অনুযায়ী, তিনটি ট্যাংকার হরমুজ প্রণালীর কাছাকাছি গিয়েও পথ বদলে অন্যদিকে চলে গেছে।
মেরিন ট্রাফিক বলছে, মার্শাল আইল্যান্ডসের পতাকাবাহী ‘মেরি সি’ ও পানামার পতাকাবাহী ‘রেড রুবি’ নামের দুটি ট্যাংকার প্রণালির দিকে অগ্রসর হয়েও গন্তব্য পরিবর্তন করে সংযুক্ত আরব আমিরাত উপকূলের ফুজাইরাহ অঞ্চলের কাছে নোঙর ফেলেছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের পতাকাবাহী ‘কোহজান মারু’ ট্যাংকারটি হরমুজ প্রণালির মুখে না গিয়ে ওমান উপসাগরে ওমানের জলসীমার কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে বলে দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, দুটি খালি তেলবাহী সুপারট্যাংকার হরমুজ থেকে ফিরে গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, মার্শাল আইল্যান্ডসের পতাকাযুক্ত ‘মেরি সি’ এবং পানামার পতাকাবাহী ‘রেড রুবি’ নামে দুটি ট্যাংকার সংযুক্ত আরব আমিরাত উপকূলের ফুজাইরাহ বন্দরের কাছে নোঙর ফেলেছে। এর আগে তারা হরমুজ প্রণালির দিকে যাত্রা করেছিল।
এদিকে যুক্তরাজ্যের পতাকাবাহী ‘কোহজান মারু’ ওমান উপসাগরে ওমানের জলসীমার কাছে পৌঁছে নিজের রুট পরিবর্তন করে বলে জানা গেছে।
এদিকে ব্লুমবার্গ বলছে, ‘কোসউইজডম লেক’ ও ‘সাউথ লয়্যালটি’ নামে দুটি বিশাল তেলবাহী সুপারট্যাংকার হরমুজ প্রণালীর মাঝপথ থেকে আচমকা ফিরে গেছে। প্রতিটি জাহাজে প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, চলমান উত্তেজনার মধ্যে এসব জাহাজের হঠাৎ দিক পরিবর্তন করা এ অঞ্চলে সামুদ্রিক রুটে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রথম সংকেত হতে পারে। জাহাজ মালিক ও ব্যবসায়ীরা সম্ভাব্য জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় নতুন বিকল্প রুটের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন।
এই ট্যাংকারগুলোর চলাচলে হঠাৎ এ ধরনের পরিবর্তন এলো, যখন ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালি বন্ধের বিষয়ে একটি প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। যদিও এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ক্ষমতা রয়েছে কেবল ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের হাতে।
জাহাজগুলোর চলাচল বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার চলমান উত্তেজনার জেরে হরমুজ প্রণালীর ওপর নির্ভরতা কমাতে চাচ্ছেন জাহাজ মালিকরা। বিশেষত, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তেহরান। এরপর থেকেই কার্যত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে জ্বালানির প্রায় ২০ শতাংশই এই হরমুজ প্রণালী হয়ে পরিবাহিত হয়, যা একে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় অত্যন্ত কৌশলগত রুটে পরিণত করেছে। কৌশলগত এই রুট নিয়ে ইরান আগে থেকেই একাধিকবার হুমকি দিয়ে আসছে। বিশেষ করে অঞ্চলটিতে যদি সামরিক উত্তেজনা বাড়ে, তাহলে ইরান এই প্রণালী পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অঞ্চলের যেকোনো সামান্য অস্থিরতাও বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে বড় ধরনের অভিঘাত সৃষ্টি করতে পারে। ফলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে আগামী কয়েক দিনের কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার গতিপথের ওপর।
এমবি//
আরও পড়ুন