ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৮ অক্টোবর ২০২৪

যে কারাগারে শিশুরা পায় প্রাপ্তবয়স্কদের সাজা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:১১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ০৯:১১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ছবি: প্রতীকী

ছবি: প্রতীকী

অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি আরোপের দিক থেকে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে একটি অস্ট্রেলিয়া। প্রতিবছর দেশটিতে হাজারও অভিবাসীকে মানব-পাচারের অভিযোগে কারাবন্দী করা হয়।

অস্ট্রেলিয়ার সেই সব অভিবাসী কারাগারে গিয়ে দেখা যায় প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে শিশু-কিশোরদেরও আটকে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর ধরে।

আর এ বিষয়ে ওই শিশুদের স্বজনদেরও কিছু জানানো হয়নি। মানবাধিকার কর্মীদের বিষয়টি চোখে পড়লে তারা আইনি লড়াইয়ে নামেন। আর তাতে বেরিয়ে আসে এমন কয়েকজনের দু:সহ অভিজ্ঞতার কথা।

তেমন একজনের মা সিটি রুডি। থাকেন ইন্দোনেশিয়ার রট দ্বীপের ওয়েলাবা গ্রামে। যার অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার বেশ কাছাকাছি। তার ছেলে আবদুল একদিন কাজে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। সেটা ২০০৯ সালের কথা।

নিখোঁজ হওয়ার কয়েকমাস পর্যন্ত সন্তানের কোনও খবর না পেয়ে সিটি রুডি ভেবেছিলেন তার ছেলে হয়তো সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে। তারপর একদিন হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে।

‘অনেকদিন পর আবদুল আমাকে ফোন করে। জানায় যে সে অস্ট্রেলিয়ায় আছে। সেখানকার কারাগারে। ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। দিন রাত শুধুই কেঁদেছি। কারণ ছোট ছেলে হিসেবে একমাত্র সেই আমার দেখাশোনা করতো।’

সে সময় ভাল বেতনের কারণে নৌকায় চাল আনা নেওয়ার কাজ নিয়েছিলেন আবদুল। এই চাল কোথা থেকে আসে এবং কোথায় যায়, তার কিছুই জানতেন না।

এভাবে এক পর্যায়ে অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ তাকে সমুদ্র সীমার কাছ থেকে আটক করে এবং তাকে মানব-পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করে।

যারা কি-না আশ্রয় প্রত্যাশীদের সমুদ্র পথে অবৈধভাবে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে আসে। সে সময় আবদুলের বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। অস্ট্রেলিয়া পুলিশ ওই বয়সেই তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

প্রাপ্ত বয়স্কদের আইন অনুযায়ি আদালত আবদুলকে দোষী সাব্যস্ত করে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। কঠোর নিরাপত্তায় ঘেরা যেই কারাগারে সব প্রাপ্তবয়স্ক আসামীদের সঙ্গে কিশোর আবদুলকে আড়াই বছর থাকতে হয়েছিল।

‘শুরুর দিকে আমার অনেক ভয় লাগতো। আতঙ্কে থাকতাম, হয়তো আমাকে অনেক মারধোর করা হবে। কারণ সেখানকার সবাই আমার চেয়ে বয়সে আর অপরাধেও অনেক বড় ছিল। ধীরে ধীরে আমি কারাগারের জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি ঠিকই তবে পরিবারের থেকে এতো দূরে এভাবে থাকা অনেক কঠিন ছিল।’

হাতেগোনা কয়েকটি দেশের মতো অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত আইন বেশ কড়া হলেও ২০০৯ সালে প্রচলিত সীমান্ত নীতি অনুযায়ী যদি সমুদ্র সীমায় উদ্ধারকৃত কোন আরোহী শিশু হয় তাহলে তাকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে। কোন অভিযোগ দায়ের করা যাবে না।

আবদুল এখন পরিণত যুবক। ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে তারমতো ১২০ জনের বেশি শিশুকে অবৈধভাবে কারাবন্দি করেছিল অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে অস্ট্রেলিয়ার আইনজীবীরা আবদুলের গ্রামের বাড়িতে যায়।

আবদুলকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে এখন তারাও একটি মামলা দায়ের করেছে যেন তারা মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী, অস্ট্রেলিয়া কমনওয়েলথ ও বয়স পরীক্ষার চিকিৎসকের থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারে।

অস্ট্রেলীয় আইনজীবী মার্ক ব্যারো মনে করেন, কর্তৃপক্ষের থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারে তারা যথেষ্ট শক্ত অবস্থানে আছে।

‘শিশু কিশোরদের এভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের কারাগারে বা সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানোর কোনও নিয়ম জাতিসংঘে নেই। তাকে তার পরিবারের সঙ্গে রাখাই নিয়ম।’

ব্যারো বলেন, ‘যদি কোনও অস্ট্রেলীয় শিশু ইন্দোনেশিয়ায় আটকা পড়তো তাহলে দ্রুত তার পরিচয় শনাক্ত করে, শিশুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হত।’

কারাবন্দি শিশুদের অনেকেই শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন ওই আইনজীবীরা। অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অনেকে সেই মানসিক উদ্বেগ কাটিয়ে উঠতে পারেননি। যদিও সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে মুখ খোলেনি জেল ফেরতরা।

সূত্র: বিবিসি

এমএইচ/একে/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি