ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়াতেও

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:১৪, ২২ মার্চ ২০২২

সিঙ্গাপুরের একটি সুপারমার্কেটের চিত্র

সিঙ্গাপুরের একটি সুপারমার্কেটের চিত্র

সিঙ্গাপুরের একমাত্র রাশিয়ান সুপার মার্কেটের মালিক জিয়া রুইয়িং। পূর্ব ইউরোপ থেকে খাবার ও পানীয় এনে বিক্রি করেন তিনি। দুই বছরেরও বেশি সময় আগে সিঙ্গাপুরে এসে এই ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তারপরই আঘাত হানে কোভিড মহামারী। যে কারণে তার ব্যবসা আগে থেকেই ধুঁকছিল।

ইউক্রেনে রুশ হামলা এখন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। জিয়া জানান, রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে রাশিয়া থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

জিয়া রুইয়িং জানান, সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত রুশ, ইউক্রেনীয় ও বেলারুশের মানুষজন সংকটের বিষয়টি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই যুদ্ধ শুরুর আগে ও পরে তারা দোকানে এসে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিত্যপণ্য কিনে নিয়ে গেছেন। এর ফলে মজুত করা পণ্য দ্রুত শেষ হয়ে গেছে।

এদিকে, পূর্ব ইউরোপ থেকে পণ্য আসা বন্ধ থাকায় এখন ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিকল্প উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা করছেন তিনি।

সেক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে সংকট। ইউক্রেনে হামলা শুরুর জেরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনকারী ব্যবস্থা সুইফটে কয়েকটি রুশ ব্যাংকের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতে পূর্ব ইউরোপ থেকে পণ্য আমদানিতে সমস্যায় পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।

শুধু সিঙ্গাপুর নয়, সবে করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে শুরু করা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতিতেও পড়েছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। 

জিয়া রুইয়িং

মহামারীর আগে নাইকি, এডিডাস, পুমার মতো বিশ্বখ্যাত স্পোর্টস ব্র্যান্ডগুলো উৎপাদন খরচ কমাতে চীন ছেড়ে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় কারখানা সরিয়ে নেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার জেরে বিভিন্ন কোম্পানি কারখানা সরিয়ে নেয়ায় ২০১৯ সালে ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো রেকর্ড ১৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পায়।

এছাড়া দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের বেশিরভাগই আমদানি করে থাকে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে। তাই ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর রুশ জ্বালানি খাতের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় তারা হয়তো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না।

তবে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে পেট্রোলের দাম বেড়ে গিয়েছে। বেড়েছে পণ্য পরিবহন ও আমদানির খরচও।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশ্লেষক ও বন্দা ইনসাইটসের প্রতিষ্ঠাতা বন্দনা হরি বলেন, যেখান থেকেই জ্বালানি তেল ক্রয় করে থাকুন, আপনাকে বিগত ১০ বছরের থেকেও বেশি দাম পরিশোধ করতে হবে। সব দেশের জন্যই এটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

বন্দনা হরি

এদিকে, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাসিক জ্বালানি ব্যয় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে জাস্টিন কুয়েক নামে সিঙ্গাপুরের এক আবাসন এজেন্টের। তাই বিকল্প হিসেবে তিনি এখন ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহারের কথা ভাবছেন। 

তবে সেটাও আগের চেয়ে অনেক ব্যয়বহুল। কেননা, ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারিতে রাশিয়া থেকে আমদানি করা নিকেল ব্যবহৃত হয়। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় যার সরবরাহ নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

ভারতীয় এই জ্বালানি বিশ্লেষক বলেন, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশই উদীয়মান অর্থনীতির ও জনবহুল। এসব দেশের অনেক মানুষ নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের। রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাতে জ্বালানি তেলসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সূত্র- বিবিসি।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি