ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বর্ণাঢ্য জীবন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৪৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ব্রিটেনের দীর্ঘতম রাজত্বকারী শাসক ছিলেন তিনি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) তার মৃত্যু হয়েছে। বাকিংহাম প্যালেস থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে রাজত্ব করা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেলেন ৯৬ বছর বয়সে। ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনের ১৭ ব্রুটন সেন্টে জন্মগ্রহণ করেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেই বছরের ২৯ মে বাকিংহাম প্যালেসের ব্যক্তিগত চ্যাপেলে তার নামকরণ করা হয়।

চাচা অষ্টম এডওয়ার্ড ১৯৩৬ সালের ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করলে এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ব্রিটিশ সিংহাসনে বসে। ওই সময় এলিজাবেথের বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। সেসময় তার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর গ্রীক যুবরাজ এবং নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ফিলিপ মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে বিয়ে হয় দ্বিতীয় এলিজাবেথের। এই দম্পতির চার সন্তান ছিল- প্রিন্স চার্লস (জন্ম ১৯৪৮), প্রিন্সেস অ্যান (১৯৫০), প্রিন্স অ্যান্ড্রু (১৯৬০) এবং প্রিন্স এডওয়ার্ড। (১৯৬৪)। ২০২১ সালের এপ্রিলে রানির স্বামী ফিলিপ ৯৯ বছর বয়সে মারা যান।

১৯৫২ সালে বাবার মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।  ১৯৫৩ সালের ২ জুন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে তার মাথায় রাজমুকুট পরানো হয়। এটি ছিল টেলিভিশনে প্রচারিত প্রথম রাজ্যাভিষেক।

দীর্ঘ এই শাসনকালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৫ জন প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা, অ্যান্টিগুয়া, বারমুডা, বাহামা, বেলিজ, গ্রেনাডা, পাপুয়া নিউ গিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্টসহ ১৫টি রাজ্যের রানি ছিলেন।

২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রানি তার শাসনের ৭০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছিলেন।

হাজার বছরের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে রাজা-রানি এসেছে অনেক, তবে তাদের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

৭০ বছর আগে এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহনের ক্ষেত্রে তার নিজের কৃতিত্ব বলে কিছু ছিল না। বংশানুক্রমেই তার স্থান পাকা হয়েছিল।

কিন্তু রাজদণ্ড হাতে নেওয়ার পর তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়, তাই মৃত্যুর পর তাকে স্মরণ করছে গোটা বিশ্ব।

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান লিখেছে, নিয়মের অধীনে সিংহাসন পেলেও দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার দীর্ঘ শাসনকালের পট এঁকেছেন প্রায় নির্ভুলতার সঙ্গে।

বিবিসি মূল্যায়ন করেছে এভাবে, কর্তব্য নিষ্ঠা আর সিংহাসন আর জনগণের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার উদাহরণ তৈরি করে গেছেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএন লিখেছে, যুদ্ধের ধাক্কায় যখন উপনিবেশিক সাম্রাজ্য ধসে একের পর এক আধুনিক রাষ্ট্রের জন্ম হচ্ছিল, তখনও নেতৃত্বের গুণে সবার শ্রদ্ধার আসন অটুট রেখেছিলেন রানি এলিজাবেথ।

১৯৫২ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সফরে বেরিয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ। সঙ্গে প্রিন্স ফিলিপ। পথে কেনিয়া নেমেছিলেন। সেখানেই রাজার মৃত্যুর খবর। দ্রুত দেশে ফেরেন, হাতে নেন রাজদণ্ড। তখন তিনি ২৫ বছরের তরুণী।

তিনি যখন ব্রিটেনের দায়িত্ব নেন ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত যায় না’ প্রবাদ তখন প্রায় ডুবে গেছে।  যুদ্ধপরবর্তী কঠিন সময়। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন, ‘এই দায়িত্ব একা পালনের শক্তি হয়তো আমার নেই।’ সবার সহায়তা চান তিনি।

এরপর কেটে গেছে সাত দশকেরও বেশি সময়। টেমসের পানি গড়িয়েছে বহু দূর। ব্রিটেনের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হিসেবে তার কার্যকালে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসেছেন ১৫ জন। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে বসেছেন ১৪ জন। তিনি দেখেছেন মানুষের চাঁদে পা রাখা, বার্লিন প্রাচীরের ভাঙন কিংবা কোভিডের মতো মহামারি।

১৯৫৩ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড দিয়ে এলিজাবেথের ছয় মাসের কমনওয়েলথ সফর শুরু। ১৯৬১ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ সফর করেন তিনি। তার আগে ৫০ বছর ব্রিটেনের কোনও শাসক এ অঞ্চলে পা রাখেননি। এলিজাবেথের আগে কোনও ব্রিটিশ শাসক দক্ষিণ আমেরিকাতেও যাননি। সেদিক থেকে পূর্বসূরীদের রক্ষণশীলতা অনেকটাই ভেঙেছিলেন তিনি।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি