ঢাকা, শুক্রবার   ২২ আগস্ট ২০২৫

ট্রাম্পের মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব, এরপর বদলে গেল যুবকের ভাগ্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:০৩, ২২ আগস্ট ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মাইকেল বুলোস, একসময় উদীয়মান ব্যবসায়ী ছিলেন। বর্তমানে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে জামাই। কলেজ পাসের পর বুলোস ২০২১ সালে হাঁটু গেড়ে ট্রাম্পের মেয়ে টিফানি ট্রাম্পকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ঘটনাস্থলটি ছিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেন। 

টিফানি ওই প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় ট্রাম্প-বুলোস পরিবারের। এরপর থেকেই হবু শ্বশুরবাড়ির প্রভাব খাটিয়ে নানা আর্থিক সুবিধা ভোগ করতে শুরু করেন মাইকেল বুলোস, তাঁর পরিবার ও সহযোগীরা।

প্রথম ঘটনাটি ছিল স্বজনদের মধ্যে। মাইকেল বুলোস তাঁর চাচাতো ভাইয়ের একটি ইয়ট ব্রোকারেজ কোম্পানিতে কাজ করতেন। সে সময় ইভাঙ্কা ট্রাম্পের (ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরেক মেয়ে) জামাই জ্যারেড কুশনারকে একটি সুপারইয়টে বিনিয়োগ করতে রাজি করান বুলোস। কিন্তু সুপারইয়টটির আসল দাম গোপন করে কুশনারের কাছে থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করা হয়। যেটির পরিমাণ প্রায় ২৫ লাখ ডলার। সে সময় লেনদেন হওয়া এ সংক্রান্ত খুদেবার্তা ও এক আইনজীবীর লিখিত বর্ণনা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

দ্বিতীয় ঘটনাটি আরও চমকপ্রদ। সৌদি আরবের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বুলোসের চাচাতো ভাইয়ের। ওই চাচাতো ভাই সৌদি ব্যবসায়ীকে একটি লোভনীয় অফার দেন। সেটি হলো টিফানি ও বুলোসের বিয়েতে দাওয়াত পাওয়ার সুযোগ। ওই ব্যবসায়ীকে আরও লোভ দেখানো হয় যে, বিয়েতে অংশ নিয়ে ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে ছবি তুলতে পারলে সেটি পরে কাজে লাগানো যাবে। জিমি ফ্রাঙ্গি নামে বুলোসের ওই চাচাতো ভাই সৌদির ব্যবসায়ীকে লিখেছিলেন, ‘আমরা চাই আপনি বিয়ের অতিথির তালিকায় শীর্ষে থাকুন।’

ইয়ট জালিয়াতি ও বিয়ের দাওয়াতের নামে প্রতারণার কথা অভিযুক্তরা অস্বীকার করেছেন। জেরার্ড কুশনারের ইয়ট এখন গ্রীসে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। আর সৌদি ব্যবসায়ীও বিয়েতে দাওয়াত পাননি। তবে বুলোস ইয়ট বিক্রি থেকে প্রায় ৩ লাখ ডলার এবং সৌদি ব্যবসায়ীর কাছে থেকে ১ লাখ ডলার পেয়েছিলেন বলে জানা গেছে জিমি ফ্রাঙ্গির খুদেবার্তা থেকে।

বুলোস ও টিফানি ট্রাম্পের একজন মুখপাত্র বলেন, বুলোস কেবল ইয়ট চুক্তিতে আগের নির্ধারিত একটি ফাইন্ডারস ফি পেয়েছিলেন। পরে ইয়ট ব্রোকার হিসেবে জিমি ফ্রাঙ্গির সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক সম্পর্ক শেষ হয়। 

সৌদি ব্যবসায়ীর কাছে থেকে অর্থ নেওয়া প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, এর সঙ্গে ট্রাম্প পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এটি (অর্থ) একটি ঋণ নিষ্পত্তির জন্য দেওয়া হয়েছিল। খুদে বার্তায় জিমি ফ্রাঙ্গি যে পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন, সেটির সঙ্গেও বুলোসের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

টিফানি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রাক্তন স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসের সন্তান। নিউ ইয়র্ক টাইমস চুক্তিপত্র, আদালতের নথি, প্রাসঙ্গিক খুদেবার্তা ও প্রয়োজনীয় সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এগুলো থেকে দেখা যায়, যখনই টিফানিকে মাইকেল বুলোস বিয়ের প্রস্তাব দেন; এরপর থেকেই তিনি, তাঁর পরিবার ও সহযোগীরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে শুরু করেন। 

বিয়ের অনুষ্ঠানটি ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্টের মার-এ-লাগো গলফ ক্লাবে হয়েছিল। পরে মাইকেল বুলোসের বাবা মাসাদ বুলোসকেও ট্রাম্প নিজের নির্বাচনী প্রচারণার একজন গুরুত্বপূর্ণ মুখপাত্র বানান। সংবাদমাধ্যমে তাঁকে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। যদিও তাঁর নিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও উল্লেখযোগ্য সম্পদ থাকার কোনো প্রমাণ নেই। তাঁর শ্বশুরবাড়ির একটি নাইজেরিয়ান ট্রাক কোম্পানিতে মাসাদ বুলোসের শেয়ার ২ ডলারেরও কম।

২০২৪ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হলে মাসাদ বুলোস সরকারি দায়িত্ব পান। তিনি প্রথমে প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপদেষ্টা এবং পরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আফ্রিকাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হন। বুলোস পরিবার ক্ষমতার কাছাকাছি চলে আসায় তাদের সহযোগীরাও সুযোগ খুঁজতে শুরু করে। প্রেসিডেন্টের অভিষেকের সময়, বুলোস পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়ী হাবিব সাইদি মার-এ-লাগোতে মাইকেল বুলোসের পাশে বসেছিলেন। তখন তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক থাকা কেসি গ্রিনে নামের এক ফাইন্যান্সারকে টেরেসে রাতের খাবার খেতে দেখেন। হাবিব সাইদি তখন মাইকেল বুলোসের পাশ থেকে উঠে কেসি গ্রিনের কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, হাবিব সাইদি কেসি গ্রিনেকে জানান, তিনি (সাইদি) ও তাঁর বন্ধুরা আমেরিকার ক্ষমতার কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকাকালে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসা করার সুযোগ নিতে চান। বিশেষ করে সৌদি আরবে নির্মাণ প্রকল্পের কথা তিনি উল্লেখ করেন। 

এ প্রসঙ্গে হাবিব সাইদি বলেন, তাঁর ওই কথোপকথনের কথা মনে নেই। আর কেসি গ্রিনে বলেন, তিনি নিজের ব্যবসায়িক আগ্রহ নিয়ে কোনো আলাপ করতে রাজি না।

২০২২ সালের ২২ জুন। মাইকেল বুলোস ও জিমি ফ্রাঙ্গি এক ধনী সৌদি ব্যবসায়ীর ভার্জিনিয়ার বাড়িতে যান। আব্দুলেলাহ আল্লাম নামের ওই ব্যবসায়ীকে ফ্রাঙ্গি ইয়ট ব্যবসার মাধ্যমে চিনতেন। আব্দুলেলাহর কাছে থেকে কয়েক কোটি ডলার ঋণও নিয়েছিলেন ফ্রাঙ্গি। 

ভার্জিনিয়ায় আল্লাম স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন। ২০১৭ সালে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সৌদি সরকার তাঁর কয়েক বিলিয়ন ডলারের রিয়েল এস্টেট জব্দ করে। এরপর থেকে তা ফেরত পেতে মরিয়া ছিলেন আল্লাম। একটি খুদে বার্তার তথ্য অনুযায়ী, জিমি ফ্রাঙ্গি একটি পরিকল্পনা নিয়ে আল্লামের বাসায় গিয়েছিলেন। মাইকেল বুলোস ও ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে তিনি আল্লামকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, ট্রাম্প পরিবারের প্রভাব খাটিয়ে সৌদি সরকারের কাছে থেকে আল্লামের সম্পদ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা। বিনিময়ে আল্লাম তাঁর ঋণ মওকুফ করবেন।   

ভার্জিনিয়ার ওই বৈঠকের আগে আল্লামকে একটি খুদে বার্তা পাঠিয়েছিলেন জিমি ফ্রাঙ্গি। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘তার ২৫ হাজার ডলার দরকার। এটা ঋণ।’ বার্তায় মাইকেল বুলোসের নাম ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যও পাঠানো হয়। ভার্জিনিয়ার বৈঠকের দিন আব্দুলেলাহ আল্লাম খুদে বার্তায় জানান যে, তিনি মাইকেল বুলোসের অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ডলার জমা দিয়েছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ওই অর্থ লেনদেন করে কোনো প্রভাব কেনার উদ্দেশ্য ছিল না। 

আব্দুলেলাহ আল্লামের আশপাশের লোকজন তাঁকে সতর্ক করেছিলেন যে পরিকল্পনাটি (ট্রাম্প পরিবারের ঘনিষ্ঠ হওয়া) কাজ করার সম্ভাবনা খুব কম। মূলত তারাই সঠিক ছিলেন। আল্লাম এরপর আর বিয়ের দাওয়াত পাননি। ফেরত পাননি সম্পত্তিও।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি