ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪

চীনের ‘জিরো কোভিড পলিসি’র ধাক্কা তিব্বতিদের উপর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:১৩, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

তিব্বতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে চীন এ ভাইরাসের বিস্তার রোধে সেখানে তার তথাকথিত ‘জিরো কোভিড নীতি’সহ কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োগ করেছে। তিব্বতবাসীদের বেশ কয়েকটি ভাইরাল ভিডিও এবং পোস্টে সেখানে চীনের নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বাস্তবতা উঠে এসেছে।

ভারতীয় সংবাদসংস্থা এএনআইর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সংক্রমিত রোগীদের পাশাপাশি যাদের করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে তাদেরও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে সেখানে। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা খাবার পাচ্ছেন না। 

লোক বোঝাই বাসের লাইন, তাদের অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টারে নামানোর জন্য গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করা; এই দৃশ্যগুলো তিব্বতের রাজধানী লাসার বাসিন্দারা বর্ণনা করেছেন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের এক মাস ধরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের জন্য সমগ্র শহরসহ লকডাউন চীনে প্রায় সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তিব্বত থেকে সাহায্যের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে জিনজিয়াংয়ের দুটি সীমান্ত অঞ্চল যেখানে চীনা সরকার অত্যন্ত নিপীড়নমূলক নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেছে। সেখানে পরিস্থিতি কতটা মরিয়া পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে তা যেন কেউ জানতে না পারে সেজন্য সেখানকার বাসিন্দাদের নীরব থাকতে ভয় দেখানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু অনলাইনে দুর্ভোগের আরও বেশি গল্প প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোকে দমন করার প্রচেষ্টা বেড়েছে। অনেকে সতর্ক করেছেন যে ব্যবস্থাগুলো আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

আগামী ১৬ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসতে চলেছেন, যা তাকে ড্রাগন দেশের আধুনিক গ্রেটদের একজন করে তুলেছে। এর মধ্যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য ‘শূন্য কোভিড’ নীতি অর্জনের প্রচেষ্টা, যা শি একটি ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন, সেটি মসৃণ এবং সফল তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, এর ফলে কর্তৃপক্ষ সবসময় কঠোর কোয়ারেন্টাইন এবং সেন্সরশিপ নিয়ম প্রণয়ন করে। যা অন্যদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করছে। চীনজুড়ে কঠোর হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। 

গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে যে সমগ্র দেশে অক্টোবরের মধ্যে সমস্ত বাসিন্দার নিয়মিত করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে লাখ লাখ মানুষকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক ডজন মানুষের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর রাজধানী বেইজিং উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। 

তিব্বতের লাসা শহরের একজন খাদ্য বিতরণ কর্মী বলেন, ‘লাসার লোকেদের কাছ থেকে আপনি যে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলো দেখেন তা সবই ভোগান্তির বিষয়, কিন্তু এটাই আসল লাসা।’

চীনা সরকার কর্মকর্তাদের ইতিবাচক ভিডিও প্রচার করেছে ফ্রন্টলাইন কর্মীদের উত্সাহিত করতে এবং খাদ্য ও ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে খাদ্য সরবরাহকারী কর্মী বলেছিলেন যে তাকে একটি নির্মাণাধীন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল, যদিও তিনি করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ হননি। 

তিনি মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। কর্মকর্তারা অন্য একজনকে তাদের পরিবারে কোয়ারেন্টাইনে যোগ দিতে পাঠিয়েছিলেন, কারণ তারা সবাই হুই জাতিগত সংখ্যালঘু ছিল এবং যে লোকটি পরে যোগ দিয়েছিল তার করোনা পজেটিভ ছিল, বলেন তিনি। 

লাসায় প্রায় ৯ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ জাতিগতভাবে তিব্বতি। গত ৪ আগস্ট কয়েকজনের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর নির্দিষ্ট এলাকাগুলো বন্ধ করার আদেশ দেওয়া শুরু করে চীন। শিগগিরই শহরব্যাপী বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। জিনজিয়াংয়ের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইনিংয়েও আগস্টের শুরু থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তিব্বত অ্যাকশন ইনস্টিটিউটের পরিচালক লাডন টেথং বলেছেন, যে তিনি এই সপ্তাহে তিব্বতিদের পরিস্থিতি দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

প্রকাশিত বেশ কিছু ভিডিও মুছে ফেলা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া একটি লাইভ স্ট্রিম শেয়ার করায় এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

এসি
 


Ekushey Television Ltd.





© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি