ঢাকা, রবিবার   ০৫ মে ২০২৪

ইরানে ‘৯ জন ইউরোপিয়ান’ নাগরিক গ্রেপ্তার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৩১, ১ অক্টোবর ২০২২

ইরানে নিরাপত্তা হেফাজতে তরুণীর মৃত্যুর জের ধরে গড়ে ওঠা রক্তক্ষয়ী প্রতিবাদ বিক্ষোভের মধ্যেই গোয়েন্দারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অন্তত নয় জন নাগরিককে আটক করেছে।

যাদের আটক করা হয়েছে তারা ‘বিদেশি সংস্থার গুপ্তচর’ এবং চলমান বিক্ষোভের পেছনে তাদের হাত আছে কিংবা তারা এই বিক্ষোভে জড়িত বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম খবর দিয়েছে।

তবে দেশটিতে সহিংসতা কমে আসার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং মৃত্যুর সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

নিরাপত্তা হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনি নিহত হবার পর রাজধানী তেহরান থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভের বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিক্ষোভকারীরা তাদের মাথার স্কার্ফ আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছেন। এসব বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা।

বাইশ বছর বয়সী এই তরুণী গত ১৩ই সেপ্টেম্বর দেশটির নৈতিকতা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যান। হিজাব বিষয়ক কঠোর আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছিলো তার বিরুদ্ধে।

এদিকে কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেননি যে ইউরোপিয়ান ওই নয় জন নাগরিককে কোথা থেকে আটক করা হয়েছে।

তবে তারা দশটি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, প্রতিবাদে বিদেশিদের কিংবা বিদেশে থাকা বিরোধী গোষ্ঠীর ইন্ধন আছে চলমান বিক্ষোভে।

আটক হওয়া এসব ব্যক্তিরা পোল্যান্ড, সুইডেন, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডসের নাগরিক বলে ইরানের গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

তারা বলছে, জার্মান, ফ্রান্স, ব্রিটিশ ও সুইডিশ দূতাবাসকে তাদের এজেন্টদের চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিলো।

তারা আরও দাবি করেছে যে, বিক্ষোভ চলার সময় এবং এর আগেও কয়েকবার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে হয়তো আন্দোলন তৈরি কিংবা বিশৃঙ্খলাকে উষ্কে দেয়ার জন্য। এর মধ্যে ছিলো সাইবার হামলা এবং বিবিসি পার্সিয়ান ও ইরান ইন্টারন্যাশনালের মতো কিছু বেসরকারি মিডিয়ায় 'দাঙ্গা পূর্ব ভুয়া সংবাদ' ছড়ানো।

মাহসা আমিনিকে পুলিশ আটক করে ডিটেনশন সেন্টারে নেয়ার পরেই তিনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন এবং পরে তিনদিন কোমায় থাকার পর তিনি মারা যান।

উনিশশো উননব্বই সালে আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হন এবং তখন থেকে দেশের শাসনক্ষমতার ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ রেখে চলেছেন তিনি।

তার পরিবারের বিশ্বাস যে তাকে কর্মকর্তারা মারধর করেছেন। তবে পুলিশ বলছে তিনি হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।

এরপর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিক্ষোভ ও সহিংসতায় বেশ কিছু মানুষের মৃত্যুর পর দেশটি এসবের জন্য 'বিদেশি শত্রুদের' কিছুটা দায়ী করে আসছিলো।

নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস সবশেষ যে হিসাব দিয়ে টুইটারে পোস্ট করেছে তাতে বলা হয়েছে বিক্ষোভ সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৮১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে শিশুও আছে।

শুক্রবার দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় সিসতান-বালুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী জাহেদানে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে আরও নয় জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নিহতদের মধ্যে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের একজন কর্নেলও আছেন বলে বার্তা সংস্থা এএফপি খবর দিয়েছে।

কিন্তু এটা পরিষ্কার নয় যে এই সংঘর্ষের সাথে মাহসা আমিনির নিহত হওয়ার ঘটনার কোন সম্পর্ক আছে কি না। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে আঞ্চলিক গভর্নর হোসেইন খাইবানি বলেছেন, নয় জন নিহত হয়েছে এবং কুড়ি জন আহত হয়েছে।

"ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রাদেশিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্নেল আলী মৌসাভিও নিহতদের মধ্যে আছেন," বলেছেন তিনি।

সিসতান-বালুচিস্তানের সাথে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত আছে। এই এলাকায় মাদক চোরাচালানীরা সক্রিয়। আবার সংখ্যালঘু বালুচ ও সুন্নি মুসলিমদের চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর সাথে এখানে সংঘর্ষ হয়ে থাকে।

এর আগে শুক্রবার রাষ্ট্রায়ত্ত মিডিয়া খবর দিয়েছিলো, একদল বন্দুকধারী জাহেদানে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা করলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুঁড়েছে। সূত্র: বিবিসি

এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি