ঢাকা, শনিবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আসামের বন্দিশিবিরে আরেক ‘বাংলাদেশির’ মৃত্যু, দেহ নিয়ে জটিলতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪৯, ২৭ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ১৪:৫২, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

ভারতের আসাম রাজ্যে আরও এক ব্যক্তি বন্দিশিবিরে মারা গেছেন, যাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবার বলছে, তাকে যখন বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তখন মৃতদেহ তারা নেবেন না।

মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম ফালু দাস। ৭২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি গ্রেফতার করে গোয়ালপাড়ার বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছিল। দিনকয়েক আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানেই মারা যান তিনি।

রাজ্যের নলবাড়ি জেলার প্রত্যন্ত এলাকা সুতিমারি গ্রামে তার ছেলে মেয়ের কাছে খবর পাঠানো হলে তারা দেহ নিতে অস্বীকার করেন।

ফালুর বড় ছেলে ভগবান দাস বিবিসিকে বলেন, বাবাকে যেহেতু বাংলাদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, তাহলে দেহ নিয়ে এসে কী করব? বাংলাদেশেই যাক দেহ।

যেহেতু ফালু দাসকে ট্রাইবুনাল ‘বিদেশি’ বলে ঘোষণা করেছিল, তাই নিয়ম অনুযায়ী তার ছেলে মেয়েদের কারও নামই নাগরিকপঞ্জিতে ওঠেনি।

প্রশাসনের কাছে পরিবারটির দাবি, যতক্ষণ না তাদের সবার নাম এনআরসিতে তোলা হচ্ছে এবং ভারতীয় বলে ঘোষণা না করা হচ্ছে, ততক্ষণ তারা বাবার মৃতদেহ নেবেন না।

তাদের দাবি, ১৯৫১ সালের প্রথমনাগরিক পঞ্জিতে যে তার বাবার নাম ছিল। এছাড়াও তারা যে ভারতীয়, সেই তথ্য প্রমাণ হিসেবে ১৯৭১ সালের আগের অনেক নথিই তারা জমা দিয়েছিলেন।

গতকাল শনিবার ওই পরিবারের কাছে গিয়েছিল বাঙালি নেতাদের একটি দল। তাদের মধ্যেই ছিলেন সারা আসাম বাঙারি ছাত্র যুব ফেডারেশনের বাকসা জেলার নেতা মদন সাহা।

তিনি বলেন, ফালু দাসের বাবার নাম ছিল ভুলু রাজবংশী। অনেকের মতোই পদবি বদল করেছিলেন ফালু দাস। সেখানেই সমস্যাটা হয়েছে। যদিও ১৯৫১ সালের প্রথম এনআরসি বা ৬৬ সালের ভোটার লিস্টের সার্টিফায়েড কপি সবই দেখলাম আমরা। কিন্তু ট্রাইবুনালে সেগুলো গ্রাহ্য করেনি। সেজন্যই বন্দি শিবিরে এভাবে মারা যেতে হলো তাকে।

প্রশাসন চেষ্টা করছে পরিবারটিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে দেহ নিতে রাজী করাতে। নলবাড়ি জেলার ডেপুটি কমিশনার ভরত ভূষণ দেব চৌধুরী বলছিলেন, পরিবারটির সঙ্গে কথা বলতে তিনি নিজে দুবার গিয়েছিলেন।

দেব চৌধুরীর কথায়, তারা তিনটি দাবি করেছে- সরকারকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে পরিবারের প্রত্যেকের নাম এনআরসিতে তুলে দেওয়া হবে, দ্বিতীয়ত, পরিবারের কাউকে বিদেশি বলে আটক করা হবে না আর তৃতীয়ত কিছু আর্থিক সাহায্যের কথা জানিয়েছে।

‘সমস্যা হল এনআরসিতে নাম তোলা বা বাদ দেওয়ার অধিকার প্রশাসনের নেই। এটি সুপ্রিম কোর্টের নজরদারীতে হয়েছে আর এনআরসিতে নাম না থাকা কাউকে যে এখনই গ্রেফতার করা হবে না সেই আশ্বাস তো আগেই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলো তো লিখিতভাবে আমরা দিতে পারি না। তবে আর্থিক সাহায্য করা যেতেই পারে,’ বলছিলেন দেব চৌধুরী।

এর আগে শোনিতপুর জেলার বাসিন্দা দুলাল পাল নামের এক ব্যক্তিও একইভাবে বিদেশি বলে চিহ্নিত হয়ে বন্দি থাকাকালীন মারা যান।

তার পরিবার বলেছিল তাকে যেহেতু বাংলাদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তাই মৃতদেহও সেদেশেই পাঠিয়ে দেওয়া হোক।

মৃত্যুর দশদিন পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়ালের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে অবশ্য পালের দেহ নিয়ে সৎকার করেছে ওই পরিবারটি।

(বিবিসি অবলম্বনে)

একে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি