ঢাকা, রবিবার   ১৯ মে ২০২৪

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে বৈবাহিক অবস্থা লিখতে বাধ্য করা যাবে না

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২৮, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বৈবাহিক অবস্থা লেখা বাধ্যতামূলক করা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত রিটের রুল আংশিক মঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খাইরুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনিক আর হক। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত, তিনি রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘মেয়েটি এখন কী করবে?’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী ফারিহা ফেরদৌস ওনাহিদ সুলতানা জেনি। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৬ জুন দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ধর্ষণের শিকার হন মেয়েটি। ধর্ষকের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেওয়ার জন্য গ্রামের লোকজন চাপ দিতে থাকেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে এ নিয়ে সালিসও হয়। কিন্তু সেখানে অভিযুক্ত যুবক সবকিছু অস্বীকার করেন। সালিস ভেঙে যায়। প্রতিপক্ষের হুমকির মুখে মেয়ের পরিবার মামলা করতে পারে না। একপর্যায়ে সন্তানসম্ভবা হলে মেয়েটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। তখন ওসিসি থেকেই ধর্ষণ মামলা করা হয়। মামলার পর পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করে। এরপর ওই যুবক, মেয়ে এবং তার সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় প্রমাণ হয় ওই যুবকই শিশুটির বাবা। আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়। আদালত ওই মেয়েটিকে ‘মহিলা সহায়তা কর্মসূচির’ রাজশাহী বিভাগীয় আবাসনকেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেখানে থাকা অবস্থায় মেয়েটির এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা চলাকালে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেয়েটি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।  

আবাসনকেন্দ্রে থাকতেই এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৪.১৯ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। পরে সেখানেই থেকে এইচএসসি পরীক্ষাও অংশ নেন। পরবর্তীতে আইনজীবী আশুরা খাতুন এবং জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী দিল সেতারার সহযোগিতায় মেয়েটিকে বাড়িতে রেখে আসেন। এরই মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এবার জিপিএ-৩.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।  

এদিকে ২০১৭ সালের ৩০ মে আদালতের রায়ে ধর্ষকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। আদালতের রায়ে সন্তানের দায়ভার বাবাকে নিতে বলা হয়েছে। সেসঙ্গে বাবার ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সন্তান হওয়ার কারণে বিবাহিত না হলেও তাকে ফেলা হয়েছে বিবাহিত নারীর কাতারে। তিনি নার্সিং কলেজের ফরমই পূরণ করতে পারবেন না। বিয়ে না করলেও তার সন্তান রয়েছে। তাকে এখন বিবাহিত নারী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। অথবা ফরমে তাকে স্বামী পরিত্যক্তা লিখতে হবে। মেয়েটি কোনো দলেই পড়েন না।

এ অবস্থায় রিটের পর হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর রুল জারি করেন। রুলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বৈবাহিক অবস্থা জানতে চাওয়া কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এবং এ বিষয়ে একটি অর্থপূর্ণ নীতিমালা কেন করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন। এছাড়াও মেয়েটিকে অবিলম্বে নার্সিং কলেজে ভর্তি করতে নির্দেশ দেন। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দেন হাইকোর্ট।

এমএম/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি