ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ জুলাই ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে ৩শ’ বছরের ঐতিহ্য

নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৫৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

বড়তরফের রাজপ্রাসাদের পাশে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে ধ্বংসপ্রাপ্ত রানীমহল

বড়তরফের রাজপ্রাসাদের পাশে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে ধ্বংসপ্রাপ্ত রানীমহল

Ekushey Television Ltd.

‘অর্ধ বঙ্গেশ্বরী’ খ্যাত রানী ভবানীর ঐতিহাসিক নিদর্শনের একটি নাটোর রাজবাড়ি। ইতিহাসবিদদের মতে প্রায়  তিনশ’ বছর আগে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি। রানী ভবানীর মূল ভবন হচ্ছে ‘রানী ভবানীর রাজবাড়ি’ অর্থাৎ ঐতিহ্যবাহী নাটোর রাজবাড়ি। রাজবাড়ীর মূল ভবনের পাশেই রানী ভবানীর স্মৃতিবিজড়িত রানীমহল। সংস্কারের অভাবে সেই রানীমহলের সৌন্দর্য্য হারাতে বসেছে।

১৮০২ সালে রানী ভবানীর মৃত্যু হলে তাঁর দত্তকপুত্র রামকৃষ্ণের দুই পুত্র বিশ্বনাথ ও শিবনাথের মধ্যে জমিদারি ভাগাভাগি হয়। বড়ছেলে বিশ্বনাথের অংশের নাম হয় বড়তরফ। ছোটছেলে শিবনাথের অংশের নাম হয় ছোটতরফ। সেই থেকে তাঁদের উত্তরাধিকারীরা ছোটতরফ ও বড়তরফ নামে জমিদারি পরিচালনা করেন। নাটোর রাজবংশের ছোটতরফের শেষ রাজা ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ (১৮৯৭-১৯৫৫)। আর বড়তরফের রাজা ছিলেন যোগীন্দ্রনাথ (১৮৮৬-১৯৮১)। 

দেশভাগের সময় তাঁরা ভারতে চলে যান। ১৯৫০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার জমিদারি প্রথা বাতিল করলে তাঁরা রাজ্য হারান। এই রাজবাড়ি চত্বরের বড়তরফ ও ছোটতরফ রাজপ্রাসাদসহ অনেক কিছুই সংস্কার করা হলেও অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে রানীমহলটি। মহলটির সংস্কারের দাবি সর্বমহলের।

অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭০৬ খিষ্টাব্দে মতান্তরে ১৭১০ খ্রীষ্টাব্দে রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। ১৭৩৪ খ্রীষ্টাব্দে মৃত্যুর পর তার দত্তকপুত্র রামকান্ত রাজা হন। ১৭৩০ খ্রীষ্টাব্দে বগুড়ার আদমদীঘির ছাতিয়ান (ছাতিনা) গ্রামের আত্মরাম চৌধুরী ও জয়দুর্গার কন্যা মহীয়সী রানী ভবানীর সাথে রামকান্তের বিয়ে হয়। 

রানীমহলের ভগ্নদশা

১৭৪৮ খ্রীষ্টাব্দে রামকান্তের মৃত্যুর পর রানী ভবানীর ওপর জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এই রাজবাড়ি চত্বরে ছোট বড় ৮টি ভবন, ২টি গভীরসহ ৭টি ছোট বড় পুকুর রয়েছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি মন্দির। রাজবাড়ির চারদিকে ঘিরে আছে দুই স্তরের বেড়চৌকি। এসব ভবন সংস্কার করা হলেও রানী ভবানী যেখানে পূজা অর্চনাসহ বাস করতেন সেই রানীমহল এখন ধ্বংসের পথে। এখন রানীমহলটি আছে শুধু নামেমাত্র। রানীমহলের অস্তিত্বকে জানান দিতে টানিয়ে রাখা হয়েছে সাইনবোর্ড। 

জনশ্রুতি রয়েছে, মহারানী ভবানী এই মহলে বিশ্রাম নিতেন। এখানেই করতেন পূজা অর্চনা। এই মহলের দুই পাশে রয়েছে দুটি পুকুর। পুকুর দুটিতে শান বাঁধানো ঘাট ছিলো। এই ঘাট দুটির অস্তিত্বও বিলীন হতে চলেছে।  ঊনবিংশ শতাব্দিতে এক ভূমিকম্পে রানীমহলের সিংহভাগ মাটির নিচে দেবে গিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। 

বর্তমানে এই রাজবাড়ির দেখভালের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। রাজবাড়িটি দর্শনীর বিনিময়ে সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। অবশ্য করোনা মহামারির কারণে বেশ কয়েক মাস বন্ধ ছিল। এখন আবারও দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

নাটোর রাজবাড়ীর বড়তরফের প্রাসাদ

স্থানীয়রা জানান, নাটোর রাজবাড়ির স্থাপনাগুলো বেশ ইতিহাসসমৃদ্ধ। শুধুমাত্র অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটি। কিছু ভবন সংস্কার করা হলেও রানী ভবানী যেখানে বাস করতেন সেই রানীমহল এখন ধ্বংসের পথে। রানীমহলটি বর্তমানে যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তা সংস্কার করা হলে নাটোর রাজবাড়ির ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে। 

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, নাটোরের রানী ভবানীর রাজবাড়িটি সংস্কারের দায়িত্বে রয়েছেন প্রত্নতত্ব বিভাগ। তারা ইতিমধ্যে ছোট ও বড়তরফের দুটি ভবন সংস্কার করেছেন। এছাড়া রানীমহল ও মালখানাসহ অন্যান্যগুলোরও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রানীমহলটি সংস্কার করে আরও সুন্দর ও অকর্ষণীয় করা যায় সেজন্য প্রত্নতত্ব বিভাগের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি