ঢাকা, শনিবার   ১৬ আগস্ট ২০২৫

মুক্তির আগের তিন সপ্তাহ কেমন ছিলেন মহানায়ক? (ভিডিও)

আকবর হোসেন সুমন

প্রকাশিত : ১৩:০৩, ১০ জানুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৩:০৬, ১০ জানুয়ারি ২০২২

Ekushey Television Ltd.

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর থেকে বাহাত্তরের ৮ জানুয়ারি। এই ২২ দিন কেমন ছিলেন মুক্তির মহানায়ক? বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্নজনের গবেষণায় ধোঁয়াশাভাবে এলেও তার আদ্যোপান্ত এখনো অজানা। মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সাজ্জাদ জহিরের অভিমত, শেখ মুজিবের কারামুক্তির আগের তিন সপ্তাহ বাঙালি জাতীয় জীবনের অবিসংবাদিত অধ্যায়।

আজীবন সংগ্রামী শেখ মুজিব স্বপ্ন দেখেছিলেন বাঙালির শোষণ মুক্তির। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হয়েছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব।

৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ছিলো এদেশের মুক্তিকামী মানুষের জীবনের আলেখ্য।

২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে পাঠানো হয় পাকিস্তানের কারাগারে। এরইমধ্যে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। লায়ালপুর জেলে কোর্ট মার্শালের প্রস্তুতি নেয় সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক লে. কর্ণেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক বলেন, “ইয়াহিয়া খান সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার। একজন ল’ইয়ার এবং রাজনীতিবীদকে পাঠানো হয়েছিল লায়েলপুর জেলে বঙ্গবন্ধুর কাছে। তখন তারা ৭ই মার্চের ভাষণটি দেখাচ্ছে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, তাদের ভাতে মারব পানিতে মারব।’ আরেকটা ছিল ডিক্লেয়ার অব ইন্ডিপেন্ডেটস। তিনি কোর্টে কোন ডিফেন্স দেননি। সেই কোর্ট তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল।”
 
বঙ্গবন্ধুর জন্য ইয়াহিয়ার তৈরি ফাঁসির মঞ্চ মানসিক নির্যাতনের কৌশল ছিলো। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ মৃত্যুর প্রহর গুণতে হয়েছে দৃষ্টির দূরত্বে থেকে। কারাগারের অদূরে কবর খোঁড়া হলেও এতোটুকু ভয় পাননি জাতির জনক। ক্ষমতায় আসা জুলফিকার আলী ভুট্টো আন্তর্জাতিক সমর্থনের প্রয়োজনে ক্ষমতার অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে। 

কর্ণেল (অব.) সাজ্জাদ জহির আরও বলেন, “সাহেলিয়ার গেস্ট হাউজের একটি রুমে রাখা হয় তাকে। কিন্তু কোন খবর ছিল না ওনার কাছে। সেখানে ভুট্টো সাহেব দেখা করতে এসেছিলেন।”

রাওয়ালপিন্ডির গেস্টহাউজে সেই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বন্দী বঙ্গবন্ধু জাতির স্বার্থেই সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানের মতোই বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমের কাছে পরাজিত হয়েছিল সামরিক জান্তার নেতা ভুট্টো।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক বলেন, “বঙ্গবন্ধু কথা বলেন না ভুট্টোর সঙ্গে। কারণ সে তো লোক ভাল না। তখন ভুট্টো সাহেব বললেন, আমি সবকিছু করতে পারি আপনার জন্য। আমি এখানে বসে কমিটমেন্ট করতে পারি আপনি প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হবেন সেই চেয়ার আপনার। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, জনাব ভুট্টো আপনি কোন দিন শুধরাবেন না। এখানে বসে ভুট্টো সাহেব বলতে পারে তার পাকিস্তান কি চায়, আমি শেখ মুজিব তো ভুট্টো না। আমি জনগণের খাদেম এবং প্রতিনিধি মাত্র।”

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পুরো সময়টা কারাগারে থাকতে হয়েছে জাতির জনককে। আন্তর্জাতিক চাপ ও পরাজিত ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের ভাগ্য নির্ধারণে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। পাকিস্তান কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তি পান বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রথমে লন্ডন, অতপর দিল্লী হয়ে পা রাখেন স্বাধীন বাংলাদেশে। 

স্বাধীনতার মহানায়কের প্রত্যাবর্তনে পূর্ণতা পায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি