ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ আগস্ট ২০২৫

বিশিষ্টজনদের সঙ্গে সার্চ কমিটির দুটি বৈঠক সম্পন্ন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৫৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৫:৩২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

Ekushey Television Ltd.

দেশের ২৫ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন সংক্রান্ত সার্চ কমিটি। 

শনিবার সকাল ১১টা ২৫ মিনিট থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দেশের ১৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা হলেন, বিশিষ্ট আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এ এফ হাসান আরিফ, ফিদা এম কামাল, মনসুরুল হক চৌধুরী, এম কে রহমান, ড. শাহদীন মালিক, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মাকসুদ কামাল, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান।

দুপুর ১টার দিকে দ্বিতীয় বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা আড়াইটার দিকে। দ্বিতীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল বাবু, ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দৈনিক জাগরণের সম্পাদক আবেদ খান, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম, প্রখ্যাত সাংবাদিক স্বদেশ রায় ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সুপ্রিমকোর্টের কনফারেন্স রুমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সার্চ কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বৈঠকে সভাপতিত করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সার্চ কমিটির সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।

বৈঠক থেকে বের হয়ে বিশিষ্ট নাগরিকগণ গণমাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, “অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। সেখানে তারা আগামী ইসি গঠন বিষয়ে তাদের স্ব স্ব মতামত দিয়েছেন।”

ইসি যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ মোট ২৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করেছে। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নাম দেয়ার অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছিল ইসি গঠন সংক্রান্ত সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি।

সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, “২৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন। এ ছাড়া ছয়টি পেশাজীবী সংগঠন থেকে প্রস্তাব এসেছে। এই পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ), কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন ও ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনও আছে।” এর বাইরেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক বড় সংখ্যায় প্রস্তাব পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম। এগুলো এসেছে মূলত ই-মেইলে। 

শফিউল আজিম বলেন, “নামগুলোর তালিকা করে এখন সার্চ কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হবে।”

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর ঠিকানায় গত বুধবার চিঠি দিয়ে নাম দেয়ার অনুরোধ করে সার্চ কমিটি। চিঠিতে প্রতিটি দলকে শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে অনধিক ১০ জনের নাম (প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি) পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনে দলগুলোর যে কার্যালয়ের ঠিকানা দেয়া আছে, সে ঠিকানায় ওই চিঠি দেয়া হয়।

নাম জমা দেয়ার শেষ দিনে আওয়ামী লীগের পক্ষে শুক্রবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গিয়ে নাম জমা দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অধ্যাপক সেলিম মাহমুদ ও উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রস্তাবকৃত নাম খামে দিয়ে আসেন।  

শুক্রবার শেষ দিনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি)সহ বেশির ভাগ দল নাম জমা দেয়। বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ (জাসদ) অন্তত পাঁচটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করে জমা দেন।

ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে শনিবার দুই দফায় এবং রোববার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করছেন সার্চ কমিটি। ইতিমধ্যে বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের আমন্ত্রণ পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী শনিবার প্রথম দিনে দুই দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববারও বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে বৈঠকে মিলিত হবেন সার্চ কমিটি।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিমকোর্ট জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত সার্চ কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক শেষে অনুসন্ধান কমিটিকে সাচিবিক সহায়তার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি ওইদিন বলেন, “সার্চ কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বুধবার দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সমূহের কাছে ইসির জন্য নাম চাওয়া। দলগুলো ইমেইলে সে নাম পাঠাতে পারবেন। আবার সরাসরিও নাম দিতে পারবেন মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে। শুক্রবার বিকেলের মধ্যে নাম দিতে হবে। এজন্য মন্ত্রীপরিষদ সচিবালয়ের অফিস শুক্রবার ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এ সংক্রান্ত চিঠি রিসিভে প্রয়োজনীয় জনবল সেখানে থাকবে।”

তিনি বলেন, “বিভিন্ন পেশাজীবিসহ বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে শনিবার ও রোববার বসবে সার্চ কমিটি। এ সংখ্যা ৬০ জনের মতো হতে পারে।” কম বেশিও হতে পারে বলে তিনি জানান। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের চিঠি দেয়া হবে। সে অনুযায়ীই কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে।

এর আগে রোববার ৬ ফেব্রুয়ারি কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। ওইদিনও সুপ্রিমকোর্ট জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অনুসন্ধান কমিটিকে সাচিবিক সহায়তার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় সুপ্রিম কোটর্েূর জাজেস লাউঞ্জে বৈঠক হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব ওইদিন জানান, যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে, তাদের কাছ থেকে নাম চাইবো। তাদের কোনো চয়েজ আছে কিনা, প্রপোজাল আছে কিনা সেটা জানতে চাইবো। তারা ই-মেইল বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও দিতে পারবে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ দিতে চাইলেও দিতে পারবে। আইনে উল্লেখিত সময়ের মধ্যেই সার্চ কমিটি তার দায়িত্ব সম্পন্ন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সচিব। ওইদিন মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, বিশিষ্টজনদের সঙ্গে  বৈঠক করবে সার্চ কমিটি। 

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মতামত ও নাম চেয়ে ই-মেইল যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক হবে না।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেয়ার জন্য নাম সুপারিশ করতে সার্চ কমিটি গঠন করে শনিবার ৫ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২-এর ধারা ৩ মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেয়ার জন্য আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার লক্ষ্যে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করা হলো। ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এই কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পন্ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দেবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মনোনীত করার পর রাষ্ট্রপতি তা চূড়ান্ত করেন। তবে এবার নতুন আইনানুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করা হলো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গেল ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুমোদন দেয়া হয়। গত ২৭ জানুয়ারি বিলটি জাতীয় সংসদে পাসের পর ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আইনটিতে সম্মতি দেন। ৩০ জানুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল, ২০২২’ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।  

আইনানুযায়ী, আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠিত হবে। সে অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে।

আইনে বর্ণিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। ১০ জনের মধ্য থেকেই পাঁচজনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, “রাষ্ট্রপতি যে দায়িত্ব দিয়েছেন সংবিধান ও আইন অনুযায়ি সে দায়িত্ব পালন করবো।”

আন্তরিকতা ও ন্যায্যতার সঙ্গে দায়িত্বপালনে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন সার্চ কমিটির প্রধান। 
সূত্র: বাসস

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি