আজ সরকারের পঞ্চম বছর শুরু
প্রকাশিত : ০০:০০, ১২ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৮:১৯, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ধারাবাহিক দ্বিতীয় মেয়াদে আজ শুক্রবার পঞ্চম ও শেষ বছরে পদার্পণ করছে। এ সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে অর্থনীতি, অবকাঠামো, কূটনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক উন্নয়নে দেশ ব্যাপক অগ্রগতি অর্জনের দিকে এগিয়েছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। এই শুভদিন উদযাপন উপলক্ষে আজ সন্ধ্যায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এ ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনে সম্প্রচার করবে।
আশা করা হচ্ছে, পূর্ববর্তী বছরগুলোর ন্যায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকার প্রধান সাফল্যগুলো এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণে আগামী বছরে তাঁর বিরামহীন ও জোরালো প্রচেষ্টা ও অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো ভাষণে তুলে ধরবেন।
গত ৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বড় অর্জন ছিল। এ সময়ে আন্তর্জাতিক মর্যাদা, সুনাম ও নানামুখী স্বীকৃতি অর্জন করেছে তাঁর সরকার। পালিয়ে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের মাধ্যমে তিনি ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ এবং ‘নিউ স্টার অব দ্য ইস্ট’ হিসেবে অনন্য স্বীকৃতি অর্জন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ গতবছর অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্র নিরসন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পুষ্টি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা এবং নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
আর্থ-সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রের সূচকে বাংলাদেশ সন্তোষজনক অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ সময়ে অব্যাহত প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাবিদরা শেখ হাসিনাকে ‘অ্যাম্বাসেডর অব গ্লোবাল পিস’ এবং ‘মেইন লিডার অব দ্য হিউম্যানিটারিযান ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির হার্ভার্ড ডিভাইনিটি স্কুলের ডিন ডেভিড হ্যাম্পটন বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তির ক্ষেত্রে নতুন গতি এসেছে। ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধীন পিস এ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান ড. হেনরিক উরদান বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য শেখ হাসিনা বিশ্ব শান্তির নেতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।
বিশ্ব সম্প্রদায় ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে (ইউএনজিএ) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের ভূয়শী প্রশংসা করেছেন। এই ভাষণে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৩২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার এবং রফতানির পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে।
মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬১০ ডলার। এ সময়ে মুদ্রাস্ফীতি বিগত ৫৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। দারিদ্র্য হার ৫৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশ। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ বছর। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্য পূরণের সুবাদে দেশের ১৬২ মিলিয়ন জনসংখ্যা একটি ডিজিটালাইজড জ্ঞানভিত্তিক সমাজে পরিণত হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য-আয়ে দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ উন্নত দেশে পরিণত করতে চায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এ সমযে প্রধান খাদ্য ভাতের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের (বারি) মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারের কিছু কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ ও সমযমতো তাতে সহযোগিতা প্রদান করায় কৃষিক্ষেত্র এখন বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।’
সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি সম্প্রসারণ ও তাতে অর্থ-সহায়তা বৃদ্ধি করায় ৫৭ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের দারিদ্র্য থেকে মুক্তিলাভ সহজ হয়েছে।
বর্তমানে দেশের প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে এবং বাংলাদেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট।
গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৬ অনুযায়ী লিঙ্গ সমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষে এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে।
গতবছর পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, মেট্রো- রেল, রামপাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও দোহাজারী-কক্সবাজারগ- গুনদুম রেললাইনের মতো মেগা প্রকল্পগুলোতে গতি সঞ্চার হয়েছে।
গতবছর ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহু প্রতীক্ষিত দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্রুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন, যার মাধ্যমে দেশ বিশ্ব পারমাণবিক জগতে প্রবেশ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প এবং দেশের সবচেয়ে বৃহৎ অবকাঠামো পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে এবং ইতোমধ্যে এর ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফেনী জেলার মহীপালে দেশের প্রথম ছয় লেনের ফ্লাইওভারের কাজ নির্দিষ্ট সময়েই শেষ হয়েছে এবং গত ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী গত ১০ ডিসেম্বর যশোরে নবনির্মিত ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’-এর উদ্বোধন করেন, যা দেশের আ্ইটি সেক্টরে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। সূত্র: বাসস
আর
আরও পড়ুন