ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

রূপপুরে ও রাশিয়ায় পুরোদমে চলছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ

রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা থেকে

প্রকাশিত : ১৬:৫৪, ১৯ জুলাই ২০২০

বাষ্প জেনারেটরের হাইড্রলিক টেস্টিং-এর একটি চিত্র।

বাষ্প জেনারেটরের হাইড্রলিক টেস্টিং-এর একটি চিত্র।

চলমান করোনা মহামারীর মধ্যেও পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে চলেছে পাবনার রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সাইটে চলমান নির্মাণ কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাশিয়ায়ও এগিয়ে চলছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রস্তুতের কাজ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে প্রকল্পের কাজে জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে দেশী ও বিদেশী প্রায় দশ হাজার মানুষ এ প্রকল্পে কাজ করছে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম ইউনিটের এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট হতে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, টেকনিক্যাল কন্ট্রোল প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সম্প্রতি রাশিয়ার ভলগাদন্সকে এইএম টেকনোলজি এটোমাস কারখানায় রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের জন্য প্রস্তুতকৃত রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল এবং একটি বাষ্প জেনারেটরের হাইড্রলিক টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এ দু’টি অংশের বেজমেটালের ও ওয়েল্ড জয়েন্টগুলোর দৃঢ়তা এবং নিশ্ছিদ্রতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলটি পুরোপুরি সীল করে একটি ভূগর্ভস্থ কেইসন-এ পরীক্ষা করা হয়। প্রেসার ভেসেলটি ডিসটিল্ড ওয়াটার দিয়ে পূর্ণ করার পর পানির তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে এবং অভ্যন্তরীণ চাপ ২৪.৫ মেগা প্যাসকেলে (ওয়ার্কিং প্রেসারেরর তুলনায় ১.৪ গুণ বেশী) উন্নীত করে পরীক্ষা চালানো হয়। উল্লেখ্য, রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল সিলিন্ডার আকৃতির একটি ভার্টিক্যাল কাঠামো যার ভিতরে থাকে রিয়্যাক্টর ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি।

বাষ্প জেনারেটরের প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্বে ওয়েল্ডিং

অনুরূপভাবে প্রথম ইউনিটের জন্য প্রস্তুতকৃত একটি বাষ্প জেনারেটরেরও হাইড্রলিক টেস্ট সম্পন্ন হয়। প্রথমে জেনারেটরের সকল ছিদ্র বন্ধ করে দেয়া হয় বিশেষ ঢাকনির সাহায্যে। এটির প্রথম ও দ্বিতীয় সার্কিট ডিসটিল্ড ওয়াটার দিয়ে পূর্ণ করা হয়। প্রথম সার্কিটে পানির তাপমাত্রা ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও অভ্যন্তরীণ চাপ ২৪.৫ মেগাপ্যাসকেল-এ উন্নীত করে পরীক্ষা চালানো হয়। দ্বিতীয় সার্কিটেও অনুরূপ পরীক্ষা চলে যেখানে পানির তাপমাত্রা ছিল ৩০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও অভ্যন্তরীণ চাপ ১১.৪৫ মেগাপ্যাসকেল। উভয় ক্ষেত্রেই চাপের পরিমাণ ওয়ার্কিং প্রেসারের তুলনায় ১.৪ গুণ বেশি ছিল।

বাষ্প জেনারেটর হিট এক্সচেঞ্জার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রূপপুর প্রকল্পের প্রতিটি ইউনিটে এমন চারটি বাষ্প জেনারেটর থাকবে; প্রতিটির ওজন ৩৫০ টন, দৈর্ঘ্য ১৪ মিটার এবং ব্যাস ৪ মিটারের বেশি।

ইতোপূর্বে বাষ্প জেনারেটরের প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্বে এটির তলদেশের ওয়েল্ডিং সম্পন্ন হয় একই কারখানায়। তলদেশ ওয়েল্ডিং-এর পূর্বে এর ভিতরে এসজি টিউব স্থাপন করা হয়। স্বয়ংক্রিয় ওয়েল্ডিং প্রক্রিয়ায় সময় লাগে ৫ দিন, ব্যবহৃত হয় ৭০০ কেজি ওয়েল্ডিং রড ও ৯০০ কেজি ফ্লাস্ক।

অন্যদিকে, এইএম টেকনোলজি ‘প্রেত্রাজাভোদস্ক’ কারখানায় প্রথম ইউনিটের জন্য চারটি কুল্যান্ট পাম্পের সংযোজন ও ওয়েল্ডিং সম্পন্ন হয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কুল্যান্ট পাম্পের কাজ হলো রিয়্যাক্টর থেকে কুল্যান্ট (শীতলীকরণ পদার্থ) বাষ্প জেনারেটরে পাম্প করে নিয়ে আসা। ১৬০ এটমোসফেয়ার চাপে কুল্যান্টের তাপমাত্রা থাকে ৩০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। একটি পাম্পের ওজন ৩১ টনের বেশী, উচ্চতা ৩.৫ মিটার এবং ব্যাস ৩ মিটারের অধিক। পরবর্তী পর্যায়ে এগুলোর গুণগত মান পরীক্ষা করা হবে।

রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রসাটমের মেশিন প্রস্তুত শাখা- এটমএনার্গোমাসের একটি অংশ হলো এইএম টেকনোলজি। এটির দুটি শাখা রয়েছে ভলগাদন্সক এবং প্রেত্রাজাভোদস্ক। রূপপুর প্রকল্পের রিয়্যাক্টর কম্পার্টমেন্টের সকল যন্ত্রপাতি এবং টারবাইন হলের যন্ত্রপাতির বড় অংশ সরবরাহ করছে এটমএনার্গোমাস। 

রাশিয়ার বিভিন্ন কারখানায় প্রকল্পের যন্ত্রপাতি তৈরী হচ্ছে। যন্ত্রপাতি নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও প্রকল্পে কর্মরত বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। এছাড়াও রাশিয়ার মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে একটি নিউক্লিয়ার সেকশন রয়েছে। রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানের নেতৃত্বে নিয়মিত কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।

পাকশি হার্ডিঞ্জ সেতুর পাশে পদ্মা নদীর তীরে ১৯৬১ সালে গৃহীত এই প্রকল্প প্রায় ৫০ বছর পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রুশ রাষ্ট্রিয় পারমাণবিক সংস্থা রসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সাথে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি করেন।

উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দু’টি ইউনিট নির্মাণাধীন। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১২০০ মেগাওয়াট এবং প্রতিটি ইউনিটে থাকবে থ্রী প্লাস (৩+) প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিয়্যাক্টর। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি