ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪

সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি সম্পন্ন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৫৪, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

করোনাভাইরাস সংক্রামণের ফলে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আগামীকাল থেকে খুলছে সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা দেয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার সার্বিক প্রস্তুতি এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

সংবাদদাতারা জানান- কুমিল্লা (দক্ষিণ) : করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকা স্কুল-কলেজ আগামীকাল রোববার থেকে খুলছে। কুমিল্লায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে ১১ দফা নির্দেশনা। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে, এ জন্য তাদের মধ্যে বইছে খুশির আমেজ।

কুমিল্লার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষরা জানান, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ৯৫ শতাংশই টিকা নিয়েছে। তবে কর্মচারীরা কিছুটা পিছিয়ে আছেন। তাদের টিকা নেয়ার হার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ। অর্থাৎ গড়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ৯০ শতাংশই টিকা নিয়েছে। স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণা দেয়ার পর বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা নেয়ার তথ্য সংগ্রহ করেছে। এমনকি টিকা না নেয়াদের বেশির ভাগই এরই মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তবে টিকা নেয়ার এসএমএস না আসায় অনেকেই টিকা নিতে পারছেন না। কুমিল্লার কোনো-কোনো স্কুল কর্তৃপক্ষ টিকা না নেয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের স্কুলে আসতে নিষেধ করেছেন। অবশ্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক কলেরে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

কুমিল্লার সিভিল সার্জন মোবারক হোসেন বাসসকে বলেন, আমি শুরুতেই অভিভাবকদের দায়িত্বের কথা বলব। একটা বাচ্চা কিভাবে মাস্ক পরবে, কিভাবে হাত ধুতে হবে, সেগুলো শিখিয়ে দিতে হবে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা স্যানিটাইজার ব্যবহার করবে। আর থার্মোমিটার দিয়ে স্কুল গেটে তাপমাত্রা মাপার কথা বলা হয়েছে। তাই গা গরম থাকলে অভিভাবকরাই তাদের সন্তানদের স্কুলে না আসতে বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর কঠোর মনিটর করবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে তারা স্কুল-কলেজকে নির্দেশনা দিয়েছে। জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কুমিল্লা মর্ডাণ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন বাসসকে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ। কিন্তু বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ায় স্কুল খোলার আগ পর্যন্ত কোনো না কোনো কাজ থাকছেই। কালও আমাদের কিছু কাজ আছে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বাসসকে বলেন, আগামীকাল সকাল থেকে কুমিল্লার বোর্ডের আওতাধীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মনিটরিংয়ের কাজে নিয়োজিত থাকবেন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

নীলফামারী : জেলায় শনিবার চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। পাঠদানের পরিবেশ ফেরাতে প্রস্তুত এখন জেলার সকল বিদ্যালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ দেড় বছরের বেশী সময়ের জমে থাকা ময়লা আবর্জনা সরিয়ে পাঠদানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের চুড়ান্ত প্রস্ততি শেষ হয়েছে। আগামীকাল রোববার শিক্ষার্থীরা পরিচ্ছন্ন পরিবেশ লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে পারবে।

জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এক হাজার ৮৫টি। এসব বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষসহ আনুসাঙ্গিক আসবাব পত্র পরিচ্ছন্ন করারর কাজ শুরু হয় এক সপ্তাহ আগে। এসব কাজ শেষে আজ শনিবার বিদ্যালয় চত্ত্বর পরিচ্ছন্ন করার কাজও করেছেন অনেকে। জেলা শহরের শাহীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কতৃপক্ষ পরিচ্ছন্নতার সকল কাজ সম্পন্ন করেছে গত শুক্রবার। শনিবার করেছে শেষ মুহুর্তের গুছানোর কাজ।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন,‘স্কুল খোলার ঘোষণার পর থেকেই প্রস্তুতির কাজ চলে। এরই মধ্যে বিদ্যালয় পরিচ্ছন্নের সকল কাজ শেষে শনিবার সকালে শ্রেণিকক্ষ সাজানোর কাজও শেষ হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সরকারি ঘোষণার পর জেলার বেশীরভাগ প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ, মাদ্রাসা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে এসব প্রতিষ্ঠানে চালানো হয়েছে পরিচ্ছন্নতা অভিযান। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে নেই প্রতিযোগিতায়। এমন প্রস্তুতিতে বসে নেই বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন। জেলা সদরে ভিশন-২০২১ নামের একটি সংগঠন পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছে সদর উপজেলার ৪০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৌচাগার।

জেলার ডিমলা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের টেপাখড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যাললের দপ্তরী আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণার পর থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। গত মঙ্গলবারের মধ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের বেঞ্চ, টেবিল-চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাপত্র পরিস্কার করা হয়েছে। ধুয়ে-মুছে সরানো হয়েছে শ্রেণীক্ষে জমে থাকা ধুলো-বালি। শনিবারও বিদ্যালয় চত্বরের চারিপাশ থেকে সরানো হয়েছে জমে থাকা আবর্জনা।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বলেন,‘শিক্ষক-কর্মচারী এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নের কাজ শেষ করেছি। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির ব্যারপারে পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক-কর্মচারী মিলে এলাকা ভাগ করে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির বিষয়ে কথা বলেছেন।’ ওই বিদ্যালয়ে ৫০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত বলে জানান তিনি।

একই ইউনিয়ের টেপাখড়িবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরজ্জামান মালেক বলেন,‘বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে মিটিং করার পর বিদ্যালয় খোলার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’

এদিকে ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী দোহলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তানিয়া পারভীন বলেন,‘বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষ, আসবাবপত্র পরিস্কার করা হয়েছে। আশপাশ এলাকায় জমে থাকা বিভিন্ন আবর্জনা সরানো হয়েছে। উপস্থিতি নিশ্চিৎ করার জন্য গত বুধবার থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। এজন্য অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারীরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন,‘জেলায় এক হাজার ৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরই মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর সকল বিদ্যালয় খোলা প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’
তিনি জানান ডিমলা উপজেলায় তিনটি এবং জলঢাকা উপজেলায় দু’টি বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান সম্ভব না হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতা শফিকুল ইসলাম বলেন,‘সরকারি নির্দেশনা অনুসারে বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য আগাম সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যে।’
জেলায় মাধ্যমিক এবং নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যলয় ২৬৯টি বলে জানান তিনি।

চাঁদপুর : জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস রুমের পরিবেশ তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে। তাই শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের আবারো একসাথে দেখা হবে। আর সেই অপেক্ষায় রয়েছে  জেলার পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী।

গত কয়েকদিনের চেষ্টায়  এরই মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চত্বর এবং শ্রেণি কক্ষগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ প্রায় শেষ করেছেন প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষ। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার বাকি আছে। শনিবার জেলার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষকরা ক্লাস রুমে  শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে শেষ মূহুর্তের কাজ করছেন। জেলার  ৮ টি  উপজেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কলেজ মিলিয়ে ২ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০  মতো রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শ্রেণি কক্ষগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গত ৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রতিষ্ঠান প্রধানরা অন্যান্য শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটিদের নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণী কক্ষের পরিবেশ তৈরিতে নেমে পড়েন।

জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মকবুল আহমেদ জানান, করোনার কারণে গত দেড় বছরে আমাদের  প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শ্রেণি কক্ষ এবং কলেজ চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখেছি আমরা। কিছু ক্লাস রুমের পরিবেশ তৈরি করতে হয়েছে, অন্যগুলো ঠিক আছে। আমরা এখন প্রস্তুত ক্লাস করাতে।

চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অসিত বরণ দাস জানান, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সকল ক্লাস রুমের পরিবেশ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা সুন্দর পরিবেশে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করতে পারবে।  

জেলা শিক্ষা অফিসার  গিয়াসউদ্দিন জানান, জেলায় মাধ্যমিক ও কলেজ মিলিয়ে ৩৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারি নির্দেশনার পর থেকেই কঠোর মনিটরিং করে শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হচ্ছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার  মো. সাহাবউদ্দিন জানান, করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সরাসরি পাঠদান না হলেও প্রধান শিক্ষক এবং অন্যদের উপস্থিতি ছিল। তারপরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয় কোথাও-কোনো ঘাটতি রাখা হয়নি। সুতরাং সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামীকাল থেকে শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের সকল প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা।

অন্যদিকে  জেলা ও উপজেলা  শহরের  দর্জির দোকানগুলোতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে ভীড় জমাচ্ছেন নতুন ড্রেস বানাতে। অভিভাবকদের উদ্দেশ্য হলো তাদের  সন্তানের আবদার মেটাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন পোশাক তৈরি করা।

টাঙ্গাইল : করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর আগামীকাল ১২ সেপ্টেম্বর খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সারাদেশের মতো টাঙ্গাইলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তাই খুশির আমেজ। শিক্ষক-কর্মচারীরা নেমে পড়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে। শিক্ষার্থীরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রেণীকক্ষে ফেরার।

এদিকে আনন্দের মধ্যে কিছুটা হলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্যা। বন্যার কারণে জেলার ৪৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। টাঙ্গাইলে এবারের বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। যমুনা, ধলেশ্বরীসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে ও ক্লাসরুমে পানি ঢুকে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ভাঙনের কবলেও পড়েছে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আগামীকাল ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বন্যার কবলে পড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিভাবে পাঠদান করা হবে এ নিয়ে দুচিন্তায় পড়েছে শিক্ষকরা। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

শিক্ষকরা জানান, নিজেরাতো শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানবোই, সকল শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা যাতে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তা কঠোরভাবে নজরদারী করা হবে।
তৃতীয় শ্রেণীতে পড়–য়া ছাত্রী নুসরাত জাহান বলেন, করোনার কারণে আমরা ক্লাস করতে পারি নাই। স্যারদের সাথে দেখা করতে পারি নাই। ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারি নাই। দীর্ঘদিন পর আবার স্কুল খুলবে। এতে খুব খুশি লাগছে। আবার স্কুলে যেতে পারবো, খেলাধুলা করতে পারবো, সকল বন্ধুদের সাথে দেখা হবে। কলেজ পড়–য়া ছাত্র আবরার জারিফ মুয়াজ বলেন, করোনাকালীন সময়ে আমাদের কলেজ বন্ধ ছিল। এতে আমাদের লেখাপড়ায় অনেক খারাপ প্রভাব পড়েছে। আমরা আগে যেভাবে লেখাপড়া করতাম এখন সেভাবে লেখাপড়া হয় না। কলেজ খুললে বন্ধুদের সাথে দেখা হবে, আগের মতো আড্ডা হবে আর লেখাপড়াটা আগের মতোই চালু হবে। আরেক কলেজ শিক্ষার্থী হাসান সিকদার বলেন, করোনায় লকডাউনে আমরা সারাদিন বাসায় থাকতাম। বাসায় থাকতে-থাকতে আমাদের মানসিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। মনে হয় আমরা মানসিক রোগী হয়ে গেছি। এখন সরকার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন আমরা আগের মতোই কলেজে যাবো। পরিচিত বন্ধুদের সাথে দেখা হবে। আমাদের মানসিক অবস্থাটাও আগের মতো হবে বলে আশা রাখি।

কলেজ শিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন, দীর্ঘদিন পর স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতিমধ্যে শ্রেণীকক্ষ পরিস্কারের কাজ সম্পন্ন করেছি, যাতে ছেলে মেয়েদের কোন সমস্যা না হয়। পরিবেশগতভাবে যেন কোন সমস্যা না হয় সেদিকে আমাদের বেশি দৃষ্টি থাকবে। স্কুলের শিক্ষক আজাহার আলী বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এই বন্ধের কারণে আমরা ক্লাস নিতে পারি নাই। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজ খুলবে। আমরা তাই স্কুলের মাঠ, ক্লাস রুম পরিস্কার করার কাজ শুরু করে দিয়েছি। বিগত দিনে ছাত্র-ছাত্রীদের যে ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষতি আমরা পুশিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো।

টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম জানান, জেলার ৪৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৫টি প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কক্ষে পানি উঠেছে। ৫টি প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে আমরা আমাদের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে জানিয়েছি। এসব প্রতিষ্ঠানে এখন ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া আমরা সকল শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে কাজ করার জন্য নিদের্শনা দিয়েছি।

নোয়াখালী : জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো আগামীকাল খোলার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জেলার বিদ্যালয়গুলো ঘুরে দেখা গেছে শ্রেণী কক্ষগুলো ধোয়া, মোছার কাজ প্রায় শেষ। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারনে অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা মেরামতের কাজ চলছে।  

শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে, বিদ্যালয়ের বোর্ডে বড় করে নোটিশ ছাটানো হয়েছে। অভিভাবকদের মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ করা হচ্ছে।

শিক্ষকরা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আছে ১২৫৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৯০, কলেজ ৪১ ও মাদ্রাসা ১৭২টি।
চট্টগ্রাম : বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনার সময়ে অধিকাংশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস, পরীক্ষা ও সাপ্তাহিক এসাইনমেন্ট চালু ছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েও সরাসরি ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের যৌথ পরিকল্পনায় শারীরিক উপস্থিতিতে ক্লাস চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানালেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান।  

চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাংলা বিভাগ, ওশানোগ্রাফি বিভাগ এবং ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে ভর্তি ও পুনঃভর্তির এবং ইতিহাস বিভাগের ২০২০ সালের এমএ কোর্স নং-৫০১ থেকে ৫০৫ এর পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৮ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়া শুরু হয়। আগস্ট মাসেই শুরু হয়েছিল চবির ৯ বিভাগের ১৫ বর্ষ বা সেমিস্টারের পরীক্ষা। এর মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও লকডাউনের পর ১৮ আগস্ট থেকে চবির ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের ২য় বর্ষের ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সশরীরে পরীক্ষা।
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই আবারও জমে উঠেছে চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউর) ২০২১ অটাম সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রম। গতকাল রোববার সকাল থেকেই নগরের জামালখানের সিআইইউ ক্যাম্পাসে ভিড় করতে থাকেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। মুখে মাস্ক আর সামাজিক দূরত্ব মেনে এই সময় তাদেরকে নতুন সেমিস্টারের ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতে দেখা যায়।
সিআইইউ কর্তৃপক্ষ জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ^বিদ্যালয়ে অটাম সেমিস্টারের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরাসরি ফরম সংগ্রহের পাশাপাশি বাড়িতে বসেও অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা।

সিআইইউর উপাচার্য ড. মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, ইউজিসির নির্দেশনা মেনে আমাদের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। করোনাকালীন প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য আমাদের সহযোগিতা ছিল। আগামিতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

সাদার্ন ইউনিভার্সিটিতে ফল সেমিস্টার-২০২১ এ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে দুই দিনব্যাপী ভর্তি মেলা  ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস বায়েজিদ আরেফিন নগরে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত শুধুমাত্র মেলা উপলক্ষে ভর্তি ফি’তে নতুনদের জন্য ৩০ শতাংশ এবং পুরাতন শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড়ে ভর্তির সুযোগ থাকছে। শুধু তা নয় টিউশন ফি’তে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় (শর্ত প্রযোজ্য) দিচ্ছে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বৃত্তিসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা।

ভর্তির জন্য যেসব বিষয়ে আবেদন করা যাবে সেগুলো হলো : ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে বিবিএ, এমবিএ হোটেল ম্যনেজমেন্টসহ, কলা অনুষদে ইংরেজি, ইসলামিক স্টাডিজ, সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং(ইইই) ও ইলেকট্রনিক এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং(ইসিই), কম্পিউটার সায়েন্স, ফার্মাসি, আইন অনুষদে এলএলবি ও এলএলএম।

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিচালনার সুবিধার্থে প্রতিটি কক্ষকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করে তোলা হচ্ছে।
বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জানান, শারীরিক উপস্থিতিতে না পারলেও আমরা করোনার প্রথম প্রকোপের সময় থেকেই অনলআইনে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছি। আগে থেকে অনলাইনে আমাদের ক্লাস চলতো। এর সুফল আমরা পেয়েছি করোনার সময়।

জনসংযোগ কর্মকর্তা তানভীর পিয়াস জানান, আগামী সপ্তাহে ফল ২০-২১ সেমিস্টারের এডভাইজিং, ওরিয়েন্টেশন চলবে। এরপরই শারীরিক উপস্থিতিতে ক্লাশ চালু হবে। তবে, এক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা ও করোনার স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলা হবে।

সূত্র-বাসস

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি