ঢাকা, শনিবার   ২৮ জুন ২০২৫

সঠিক বিচারের আশায় রোহিঙ্গা শিবিরে প্রার্থনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

হামিদা বেগম ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন বাংলাদেশের টেকনাফের কুতুপালংয়ে। তিনি বলছিলেন, তার এক ভাই ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা যায়। এরপর জীবন বাঁচাতে তিনি এবং পরিবারের বাকিরা পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে।

এরকম প্রেক্ষাপটে দ্য হেগ শহরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার যে শুনানি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল তিনটায়, সেখান থেকে যেন সঠিক বিচারটি আসে, হামিদা বেগমের আশা।

"আমরা শুনেছি আমাদের উপর যে নির্যাতন হয়েছে আজ তার বিচার শুরু হয়েছে, আমি চাই যাতে সঠিক বিচার হয়"।

হামিদা বেগম বলছিলেন, তার পরিবারের যারা নিহত হয়েছেন তাদেরকে দাফন পর্যন্ত তিনি করতে পারেননি। তিনি সুষ্ঠু বিচারের পর মিয়ানমারে তার বাড়ীতে ফিরে যেতে চান।

দ্য হেগ শহরে এই শুনানিতে অংশ নিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্ব একটি প্রতিনিধিদল রয়েছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের এই প্রতিনিধিদল তথ্য উপাত্ত নিয়ে উপস্থিত রয়েছেন। এই দলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের তিনজন প্রতিনিধিও রয়েছেন।

মিয়ানমারের পক্ষে এই শুনানির জন্য নিজ দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতে অং সান সু চি নিজেই দ্য হেগে গেছেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, সেখানকার মসজিদগুলোতে তারা বিশেষ-দোয়া-মোনাজাতের ব্যবস্থা করেছেন।

কুতুপালং ক্যাম্পের একজন রোহিঙ্গা নেতা আব্দুর রহমান বলছিলেন, "পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে দোয়া করছি যাতে করে আমাদের উপর নির্যাতনের সঠিক বিচার হয়"।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন ক্যাম্পে মসজিদগুলোতে তারা এই বিচার নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে দেখছেন। উখিয়ার একজন সংবাদকর্মী ওবাইদুল হক চৌধুরী কয়েকটি ক্যাম্প ঘুরে এমনটাই দেখেছেন।

ওবাইদুল হক বলছেন, সকাল থেকে কয়েকটি ক্যাম্পের মসজিদে তিনি দেখেছেন রোহিঙ্গারা গোল হয়ে বসে এই শুনানি, বিচার এবং এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছেন। রোহিঙ্গারা প্রতি ওয়াক্তের নামাজে বিশেষ দোয়ার ব্যবস্থা করছেন। এছাড়া ক্যাম্পের ভিতরে ঘরগুলোতে মহিলারা নামাজ পড়ছেন এবং দোয়া করছেন।

ক্যাম্পে থাকা বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাদের সাথে আজকের শুনানি শুরু হওয়া নিয়ে কথা বললে তারা জানাচ্ছেন, তাদের উপর যে নির্যাতন হয়েছে সেটার বিচার করে, মিয়ানমারে তাদের যেন ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করা হয় সেটাই তারা চাচ্ছেন।

২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে রয়েছেন সফিকা বেগম। তিনি বলছিলেন, "আমি আমার এক ছেলে সন্তানকে হারিয়েছি। আমার সন্তান হারানোর বিচার যেন হয়" ।

তিনি আরো বলছিলেন ,তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব এবং যে সম্পদ নষ্ট হয়েছে সেটাও ফিরিয়ে দিতে হবে।

ইসলামী দেশগুলোর জোট ওআইসি'র পক্ষে গাম্বিয়া-মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে দ্যা হেগে'র আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলাটি করেছে গত ১১ই নভেম্বর।

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্যানাডা এবং নেদারল্যান্ডসও শুনানিতে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করবে।

মিয়ানমারে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সেখান থেকে পালিয়ে প্রায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ২০১৭ সালে।

তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে তাতে এখনও সফল হতে পারেনি। বিবিসি বাংলা

এসি
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি