ঢাকা, শনিবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

পাপিয়ার কললিস্টে প্রভাবশালী কারা?

মঈন বকুল

প্রকাশিত : ১৩:০০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৪:৪৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

Ekushey Television Ltd.

অপরাধ জগতের কুইন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া। মাদক ব্যবসা, ক্যাসিনো, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও চাকরি দেয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়া থেকে শুরু করে কীনা করেছেন তিনি। পাপিয়া নাকি একদিনেই হোটেলের বিল দিতেন আড়াই লাখ টাকা। 

অভিজাত হোটেলে সুন্দরী সরবরাহ, তরুণীদের দিয়ে প্রভাবশালীদের ব্লাকমেইল করে উত্থান পাপিয়ার। পাপিয়ার অপরাধের সাক্ষী তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, যা এখন আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে। তার মোবাইলের কললিস্টে পাওয়া গেছে এমপি থেকে শুরু করে বহু প্রভাবশালীর নাম। 

র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাপিয়া পিউয়ের মোবাইল ফোন অশ্লীল ভিডিওতে ঠাসা। এতে রয়েছে রাতের আড্ডায় ঘটা নানা অপকর্মের ভিডিও। বিভিন্ন হোটেলে নাচাগানার আসরে ভিআইপিদের উপস্থিতি ভিডিও করে রেখেছেন পাপিয়া। আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুন্দরী তরুণীদের নিয়ে হোটেলে মনোরঞ্জনের বিশেষ মুহূর্ত তাদের অজান্তেই ভিডিও করে রাখতেন পাপিয়া। তার মোবাইল ফোন ঘেটে এগুলো পাওয়া গেছে।

এসব ভিডিওতে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে উঠতি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ছাড়াও আমলা এবং কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার অশ্লীল ছবি রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, রাজনীতির নারীদের নিয়ে ‘বাণিজ্য’ করতেন পাপিয়া। রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোয় মাঝেমধ্যেই ‘ককটেল পার্টি’র আয়োজন করতেন। এসব পার্টিতে উপস্থিত হতেন সমাজের উচ্চস্তরের লোকজন। মদের পাশাপাশি পার্টিতে উপস্থিত থাকত উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীরা।

মদের নেশায় টালমাটাল আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কৌশলে ধারণ করা হতো ওই তরুণীদের অশ্লীল ভিডিও। পরে ওইসব ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করতেন পাপিয়া। বনিবনা না হলেই ফেসবুকে ছড়িয়েও দেয়া হতো।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পাপিয়ার মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক এমপির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ পরিচয় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আওয়ামী যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল পাপিয়ার। নানা তদবির ও কাজ বাগিয়ে নিতে প্রভাবশালীদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করতেন তিনি। এছাড়া নরসিংদীর একজন এমপির সঙ্গেও পাপিয়ার ভালো সম্পর্ক ছিল।

জানা যায়, যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেছেন পাপিয়া। তুহিনের সঙ্গে পাপিয়ার চ্যাটিংয়েও এ বিষয়ক তথ্য উঠে এসেছে। এ ছাড়া যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই শীর্ষ নেত্রীর পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার তথ্য রিমান্ডে উঠে এসেছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজন ভিকটিমকে পাপিয়ার মুখোমুখি করা হয়। পাপিয়া তাদের সঙ্গে প্রতারণা করার কথা স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে সাবেক এমপি ও যুব মহিলা লীগের নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, ২০১৭ সালে পাপিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফোনে কথা হয়। আবার মেসেঞ্জারে চ্যাটিংও হয়। সংগঠনের জেলা নেত্রী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে তার মধ্যে এমন ‘কুৎসিত’ কিছু রয়েছে তা জানা ছিল না। পাপিয়ার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করার পরও কেউ বলেনি যে সে খারাপ। এখন অনেক কিছু জানা যাচ্ছে। ১৪ মাস ধরে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। কয়েকবার ফোন করলেও পাপিয়া তাতে সাড়া দেয়নি। হয়তো ওর মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে বলেই এড়িয়ে চলত। 

পাপিয়ার সঙ্গে তার গাড়ির ব্যবসা থাকার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এটা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। প্রয়োজনে ওর সামনে আমাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করুক।’

তুহিন আরও বলেন, ‘যাচাই-বাছাই না করে সরল বিশ্বাসে মিশেছি, এটাই আমার দোষ। ও অনেক আগে আমার বাসায় আসত। একবার পাপিয়াকে শাড়ি উপহার দিয়েছিলাম। সংগঠনের নেত্রী হিসেবে সেটা দিতেই পারি। ও একবার আমার কাছে টাকা ঋণ চায়। তবে ওই সময় টাকা না থাকায় দিতে পারিনি। যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর মনে করেছি টাকা ধার না দেওয়ায় হয়তো আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।’

এদিকে, পাপিয়ার তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর সারাদেশে যুব মহিলা লীগের আর কারা অপকর্মে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বুধবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন সংগঠনটির সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল।

সাক্ষাতের পর তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সারাদেশে যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের খোঁজ নিতে; কারা কারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে। এ ছাড়া গোয়েন্দা রিপোর্ট দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। যাচাই-বাছাই করে চালনি দিয়ে ছেঁকে দুষ্ট চক্রকে সংগঠন থেকে বের করতে বলেন তিনি। এ ছাড়া ভবিষ্যতে যাতে কেউ অপকর্মে জড়িয়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকা উদ্ধারের ৩ মামলায় পাপিয়া দম্পতির ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার শুনানি শেষে ঢাকার দুই হাকিম আদালত আসামিদের রিমান্ডে পাঠান।
 
প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব ১-এর একটি দল। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)।

গ্রেফতারের পর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর দেয়ার তথ্য অনুযায়ী হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়ার নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেট এলাকার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র‌্যাব।

এসব স্যুট ও ফ্ল্যাট থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি ব্যাংক চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে র‌্যাব।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি