ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৫

করোনাযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৩৮, ১৩ এপ্রিল ২০২০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

Ekushey Television Ltd.

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সামনের সারিতে যাদের অবস্থান, তাদের পুরস্কৃত করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দাভাবের প্রভাব সামলে উঠতে সরকারের প্রণোদনা দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে বলেও মনে করেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, যে সব সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে করোনা ভাইরাস রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন ইতোমধ্যেই তাঁদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তাঁদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া হবে। এ জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। 

সোমবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গণভবন থেকে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান, ঘরে বসেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের। 

প্রাণঘাতী করোনা ভাইসের প্রাদুর্ভাব থেকে শিগগিরই মুক্তির আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে আঁধার আমাদের চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা একদিন কেটে যাবেই। বৈশাখের রুদ্র রূপ আমাদের সাহসী হতে উদ্বুদ্ধ করে। মাতিয়ে তোলে ধ্বংসের মধ্য থেকে নতুন সৃষ্টির নেশায়।’

রাত পোহালেই বাঙালীর বর্ষবরণ উৎসব। আবার বিশ্বজুড়ে করোনার মহামারী সংকট। এ অবস্থায় জাতির সামনে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব সংকট দু’পায়ে দলে নতুন আলোয় পৃথিবী সাজানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের যে গভীর আঁধার আমাদের বিশ্বকে গ্রাস করেছে, সে আঁধার ভেদ করে বেরিয়ে আসতে হবে নতুন দিনের সূর্যালোকে। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায় তাই বলতে চাই, মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়/আড়ালে তার সূর্য হাসে/হারা শশীর হারা হাসি/অন্ধকারেই ফিরে আসে।’

চলমান করোনা যুদ্ধে সামনের কাতারে থাকা পেশাজীবিদের উজ্জীবিত করেন এক বাক্যে- “ক্রান্তিকালে মনোবল হারাবেন না”। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইসের কারণে গোটা বিশ্ব আজ অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা আভাস দিচ্ছে। আপনারা জানেন, এই রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গনিরোধ। অর্থাৎ নিজেকে ঘরবন্দি রাখা। বিশ্বের ২৫০ কোটিরও বেশি মানুষ আজ ঘরবন্দি। কোথাও লকডাউন, কোথাও গণছুটি আবার কোথাও কারফিউ জারি করে মানুষকে ঘরবন্দি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীর জন্য ৭৫০ কোটি টাকার বীমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক মন্দায় আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার আভাসে চিন্তিত সরকার প্রধান। তবে সংকট মোকাবেলার সাহস আছে বঙ্গবন্ধু কন্যার। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিশ্ব ব্যবস্থার বাইরে নই। বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা আমাদের অর্থনীতির জন্য দুঃচিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা জানি না, এই সঙ্কট কতদিন থাকবে এবং তা আমাদের অর্থনীতিকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবুও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। 

সামাজিক সুরক্ষা খাতকে জোরালো করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভার নিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বল্প-আয়ের মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করার জন্য ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ১ লাখ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ করা হয়েছে। যার মোট মূল্য ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, শহরাঞ্চলে বসবাসরত নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ওএমএস-এর আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আগামী তিন মাসে ৭৪ হাজার মেট্রিক টন চাল এই কার্যক্রমের আওতায় বিতরণ করা হবে। এ জন্য ২৫১ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে পদমর্যদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য থাকছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৭৫০ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, সুরক্ষা সরঞ্জামের কোন ঘাটতি নেই। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে স্বাস্থ্যকর্মীগণ সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাবেন- এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। একইসঙ্গে সাধারণ রোগীরা যাতে কোনভাবেই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে নজর রাখার জন্য তিনি প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীগণ সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং মৃত্যু ঝুঁকি উপেক্ষা করে একেবারে সামনের কাতারে থেকে করোনাভাইরাস-আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
চিকিৎসক এবং নার্সদের পেশাটাই এরকম চ্যালেঞ্জের আখ্যায়িত করে সকলকে মনোবল ধরে রাখার পাশাপাশি সরকার সবসময় জনগণের পাশে রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী সকলকে আশ্বস্থ করেন।

শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা ভয় পাবেন না। ভয় মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দূর্বল করে।’তিনি বলেন,‘ কেউ আতঙ্ক ছড়াবেন না। আমাদের সকলকে সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। সরকার সব সময় আপনার পাশে আছে। ’

‘বাঙালি বীরের জাতি’ এবং ‘অতীতে নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাক বাঙালি জাতি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। বিজয়ী জাতি আমরা। আমরা সস্মিলিতভাবে করোনা ভাইরাসজনিত মহামারীকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘নতুন বছরে মহান আল্লাহর কাছে কায়মনবাক্যে প্রার্থনা, মহামারীর এই প্রলয় দ্রুত থেমে যাক। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।’ 

কিছু স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সঙ্কটকালে এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। ’

তিনি বলেন, ‘মিডিয়া কর্মীদের প্রতি অনুরোধ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সঠিক তথ্য তুলে ধরে এই মহামারী মোকাবিলা করতে আমাদের সহায়তা করুন।’

করোনার সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। যা জিডিপি’র ৩.৩ শতাংশ।’

করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে তাঁর সরকার চারটি মূল কার্যক্রম নির্ধারণ করেছে উল্লেখ করে বলেন-

(১) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা : সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকেই’ প্রাধান্য দেওয়া হবে।

(২) আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন: অর্থনৈতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।

(৩) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি: দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকা-ে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে।

(৪) মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা: অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ এমনভাবে বৃদ্ধি করা যেন মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিশ্ব ব্যবস্থার বাইরে নই। বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা আমাদের অর্থনীতির জন্য দুঃচিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা জানি না, এই সঙ্কট কতদিন থাকবে এবং তা আমাদের অর্থনীতিকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবুও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি