ঢাকা, বুধবার   ২২ অক্টোবর ২০২৫

আলোচিত জুলাই শহীদকন্যা লামিয়া ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা, ৩ আসামির দণ্ড

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:৩২, ২২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৩৩, ২২ অক্টোবর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার আলোচিত জুলাই শহীদ কন্যা লামিয়া ধর্ষণ মামলায় তিন আসামির কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। এর মধ্যে সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সিকে ১৩ বছর এবং ইমরানকে ১০ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শিরিন এ রায় প্রদান করেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকায় শিশু আদালত আইনের আওতায় তাদের সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করা হয়।

পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, এই মামলাটি বহুল আলোচিত মামলা। অভিযোগ পত্রে এই মামলায় তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়। ১৬ জনের স্বাক্ষী শুনানী শেষে আজকে আদালত রায় প্রদান করেছেন। 

রায়ে  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ৩ ধারায় তিনজনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যেহেতু অভিযুক্তরা শিশু, তাই শিশু আইনের বিধান অনুয়ায়ী এই দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। মামলায় সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সী এই দুইজনকে পর্ণোগ্রাফী আইনে আরো তিন বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একটির পর একটি এই সাজা কার্যকর হবে বলে জানান পিপি।

এদিকে আলোচিত এই মামলার রায়কে ঘিরে সকাল থেকে আদালন প্রঙ্গনে কঠোর নিরাত্তার নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আসামিদের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে নিয়ে আসা হয়। মামলার রায় শোনার জন্য আদালত প্রাঙ্গনে উৎসুক মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঙ্গাশিয়া গ্রামের মৃতঃ মোঃ জসিম উদ্দিনের মেয়ে মোসাঃ লামিয়া (১৭)। সে দুমকি সরকারী জনতা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত ছিল। মামলার বিবাদীরা পূর্ব পরিচিত। ০২ নং বিবাদী মোঃ সিফাত মুন্সী  তার সহপাঠি।

চলতি বছর ১৮ মার্চ লামিয়া তার দাদা বাড়িতে গিয়ে পিতার কবর জিয়ারত শেষে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে নানা বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এ সময় বিবাদীরা লামিয়ার অজ্ঞাতসারে তাকে অনুসরণ করে এবং  কিছুক্ষণ পর সামনে এসে লামিয়ার দুই হাত ও মুখ চেপে ধরে পাশের একটি গাছের বাগানের মধ্যে নিয়ে প্রথমে মোঃ সাকিব মুন্সী (১৭) ও পরে মোঃ সিফাত মুন্সী (১৭) লামিয়াকে ধর্ষণ শেষে বিবস্ত্র অবস্থায় একাধিক ছবি তোলে। 

বিষয়টি কাউকে না জানানোর হুমকি দেয় এবং যখন ইচ্ছা হবে তখন তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, যদি রাজি না হয় তাহলে লামিয়ার তোলা উলঙ্গ ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় তারা। 

ঘটনার পরদিন দুমকি থানায় লামিয়া নিজে বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। 

এই মামলায় দুমকির নলদোয়ানী গ্রামের মৃত মামুন মুন্সীর ছেলে মোঃ সাকিব মুন্সী (১৭) ও একই গ্রামের সোহাগ মুন্সীর ছেলে মোঃ সিফাত মুন্সী (১৭) নামে দুইজনকে আসামি করা হয়। 

আলোচিত এই মামলাটির তদন্তে দুমকি থানার ইনচার্জ তদন্ত মো. রফিকুল ইসলাম তদন্তকালে এই ঘটনায় তিনজনের সংস্পৃক্ততা পান এবং ১ মে আদালতে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে আদালতে ১৬ জনের স্বাক্ষী শুনানী শেষে আজ বুধবার আদালত বহুল আলোচিত এই মামলার রায় দেন। 

এ বিষয়ে জেলা জজ আদালতের পিপি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক  অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন জানান, এই মামলার রায় একটি বার্তা দেবে—যে কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, সে যত প্রভাবশালী হোক না কেন।

আসামিরা অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকায় তাদের প্রথমে যশোর শিশু শোধনাগারে রাখা হবে। পরবর্তীতে যখন তাদের বয়স ১৮ বছর একদিন হবে তখন তাদের পটুয়াখালী কারাগারে হস্তান্তর করা হবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার বাসা থেকে জুলাই আন্দোলনের শহীদ জসিম উদ্দিনের কন্যা লামিয়ার (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

এরআগে জসিম হাওলাদার গত বছরের ১৯ জুলাই আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ১১ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকারকর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি