আশুলিয়ায় ডাকাতিসহ তিন দিনে ৭ লাশ
প্রকাশিত : ১৬:৪৯, ১২ নভেম্বর ২০১৮

রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় গত তিন দিনে ডাকাতিসহ পৃথক পৃথক ঘটনায় ৭টি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়াও প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরির ঘটনাও। এসব বিষয়ে সাধারনের মনে দেখা দিয়েছে এক নীরব আতঙ্ক।
জরিনা বেগম হত্যার মামলাটি পুলিশের ব্যর্থতার জন্য প্রথমে ঢাকা জেলা উত্তরের ডিবিতে স্থানান্তরের একদিন পরই পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সোমবার ভোরে ফজরের নামাজের জন্য স্থানীয়রা মসজিদে যাচ্ছিলেন। এসময় রাস্তার উপরে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির খন্ডিত মৃতদেহ দেখতে পেয়ে বিষয়টি আশুলিয়া থানা পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পলিথিনের ব্যাগে মোড়ানো অবস্থায় অজ্ঞাত যুবকের মস্তকবিহীন ৭ টুকরো মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম জানান, লাশটি কয়েকদিন আগের ধারনা করছে পুলিশ। সকালে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে ৭ টুকরো মৃতদেহ দেখতে পাই। এসময় নিহতের পরনে কোন জামাকাপড় ছিলনা। ঘটনাস্থলের প্রায় ১০০ গজ দূরে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি গ্রীল কাটার মেশিন ও এক জোড়া স্যান্ডেল দেখতে পায় স্থানীয়রা। পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ এগুলো জব্দ করে।
চলন্ত বাসে ডাকাতিসহ হত্যা আতঙ্কের রেশ না কাটতেই ১২ নভেম্বর সোমবার ভোরে মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং সংলগ্ন বেড়িবাধ এলাকায় বেশ কয়েকটি চলন্ত গাড়ি থামিয়ে ডাকাতরা লুট করে নেয় যাত্রীদের মোবাইল ফোন, টাকাসহ মূল্যবান মালামাল।
শওকত হোসেন নামের একজন কাভার্ড ভ্যান চালক জানান, ভোরে দূর্গাপুর এলাকায় গাড়ি থামিয়ে ডাকাতরা তার কাছ থেকে নগদ ১২’শ টাকা ও মোবাইল ফোন লুট করে। তিনি জানান, তার মতো আরো ৬টি গাড়ি থামিয়ে সেসব গাড়ি থেকেও লুটপাট করে ডাকাতরা।
একই দিন আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর স্বামী সিরাজুল ইসলাম পালিয়ে যায়। নিহত শ্যামলী খাতুন (২৫) বগুড়া জেলার শিবগঞ্জের ধলু শেখের মেয়ে। সে নাফা পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলো।
নিহতের ভাই দুদু মিয়া বলেন, তার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। লাশটির ময়না তদন্তের জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের ধারনা স্বামী তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এবিষয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং পলাতক স্বামীকে আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
একই দিনে আশুলিয়ার বাংলাবাজার এলাকা থেকে ফুল মতি (১১) নামের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে ধর্ষন করা হয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলে জানান, আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মোমিনুল হক। তিনি বলেন, গলায় দড়ি দিয়ে ঘরের আঁড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে ঝুলে মৃত্যু হলেও পুলিশ আসার পূর্বেই মরদেহটি নীচে নামিয়ে ফেলেন। শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাটি রহস্যজনক বলে পুলিশ জানান। এঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চললেও ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করা হয়নি। নিহত শিক্ষার্থীর লাশটি ময়না তদন্তের জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।
গত তিন দিন পূর্বে শুক্রবার সকালে মেয়েকে নিয়ে আশুলিয়ার গাজিরচট এলাকায় তার নাতনীর বাসায় বেড়াতে আসেন বৃদ্ধা আকবর আলী মন্ডল। সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ নিজ বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে আশুলিয়ার ইউনিক থেকে টাঙ্গাইলগামী একটি বাসে উঠেন বাবা ও মেয়ে। তবে বাসটি টাঙ্গাইলের দিকে না গিয়ে বাইপাইল মোড় হতে ঘুরে আবার আশুলিয়ার দিকে চলে আসে। পরে বাসটি আশুলিয়ার মরাগাঙ্গ এলাকায় পৌঁছালে তাকে মারধর করে এবং তার সঙ্গে থাকা মুঠোফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত বাস থেকে তাকে ফেলে দিয়ে মেয়েকে অপহরণ করে।
এসময় আহত অবস্থায় স্থানীয়দের সহযোগীতায় বিষয়টি টহল পুলিশকে জানালে প্রায় তিন ঘন্টা পর পুলিশ দুই কিলোমিটার সামনে গিয়ে মহাসড়কের পাশ থেকে মেয়ে জরিনা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করেন। এঘটনায় থানায় নিহতের মেয়ের জামাই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে প্রথমে থানা পুলিশ পরে গোয়েন্দা পুলিশ ও সর্বশেষ পুলিশের পিবিআই’র হাতে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। এঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও আসামীদের আটক ও রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
এঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এর ২দিন পর রোববার ভোর রাতের দিকে ১০ থেকে ১২ জনের ডাকাত দল একতলা বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে বাড়ির সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি রেখে বাসার মূল্যবান মালামাল লুট করতে থাকে। এসময় ডাকাতদের ডাকাতির কাজে বাধা দিলে গৃহকর্তা আবুল সরকারকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে স্বর্ণালংকারসহ লাইসেন্স করা বন্দুকটি লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায়। এঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক কিংবা ডাকাতির মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
একই দিন রাত ৯ টার দিকে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ভাইকে হত্যা করে ধারালো দাঁ হাতে নিয়ে আপন ছোট ভাই থানায় এসে পুলিশের নিকট আত্মসমর্পন করেন। ঘাতক ছোট ভাই জানায়, সে তার ভাইকে হত্যা করেছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে। হত্যাকারী ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব হত্যার ঘটনার পর সাধারনের মনে প্রশ্ন কেন জনগন আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন? ভাবিয়ে তুলছে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে।
গত কয়েকদিনে আশুলিয়ায় ডাকাতিসহ একের পর এক খুনের ঘটনা সম্পর্কে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) তাহমিদ-উল- ইসলাম জরুরী মিটিংয়ে রয়েছেন, পরে কথা বলবেন বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
আরকে//
আরও পড়ুন