ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

করোনায় ধীরলয়ে মাঠে নামছে কর্পোরেট জায়ান্টরা

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ১৮:২৬, ৩১ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৯:৫০, ৩১ মার্চ ২০২০

করোনা ভাইরাস

করোনা ভাইরাস

মরণঘাতী করোনা ভাইরাস তার থাবা জাঁকিয়ে বসেছে বিশ্বজুড়ে। হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই বাড়ছে লাশের সংখ্যা। একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ধস নেমেছে অর্থনীতিতে, জীবনমানে নেমেছে বিপর্যয়। এহেন পরিস্থিতিতে ধীরলয়ে হলেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দেশের বেশ কিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান।

গত ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাস তার তাণ্ডব শুরু করে চীনে। বর্তমানে বিশ্বে ১৯০টিরও বেশি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমিত হয়েছে বিশ্বের প্রায় ৮ লাখ মানুষ। যার মধ্যে প্রাণ গেছে প্রায় ৩৮ হাজার মানুষের।

দেশেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এ পর্যন্ত ৪৯ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন পাঁচ জন। এমন অবস্থায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সবকিছু, সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। 

করোনা ভাইরাসের এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের সদস্যদের পর কিছুটা দেরিতে হলেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে এগিয়ে এলেন দেশের বেশ কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। 

এগুলোর মধ্যে রয়েছে- বসুন্ধরা গ্রুপ, বেক্সিমকো, আকিজ গ্রুপ, প্রাণ-আরএফএল, স্কয়ার, পিএইচপি, ইয়াঙ্গোন গ্রুপ, এসিআই, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, কনফিডেন্স গ্রুপ প্রভৃতি। 

এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কেউ ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই), ওষুধ এবং টেস্ট কিট হাসপাতালে সরবরাহ করছে। একইসাথে অভাবীদের প্রয়োজনীয় সামগ্রীও সরবরাহ করছে। 

স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য পিপিই, ওষুধ এবং টেস্ট কিট সরবরাহ করতে ১৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ। গ্রুপটির ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবেলায় বেসরকারি ও সরকারি উভয় ক্ষেত্রেই জড়িত সকল ফ্রন্টে লড়াই করতে হবে।

আকিজ গ্রুপ রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে করোনা ভাইরাস রোগীদের জন্য একটি ৩০১ শয্যা বিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করছে। আর বসুন্ধরা গ্রুপ নিজেদের প্রশস্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরাকে হাসপাতালে রূপান্তরিত করার জন্য সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ তাদের নাটোরের আমজাদ খান মেমোরিয়াল হাসপাতালের ২০টি বেড আইসোলেশন কেন্দ্রের জন্য ওষুধ প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের অনুমোদন চেয়েছে।

এছাড়া গ্রুপটি রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাড়ে ৪ হাজার সার্জিকেল মাস্ক এবং ৫০০ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করেছে। পাশাপাশি দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে দরিদ্রদের জন্য ৪০ হাজার প্যাক নুডলস এবং এক হাজার প্যাকেট বিস্কুট প্রদান করেছে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ১০ হাজার পিস পিপিই অনুদান দিয়েছে। অন্যদিকে, দুটি হাসপাতালে পাঁচ হাজার পিপিই প্রদান করবে শেলটেক গ্রুপ।

গ্রুপটি ঢাকার এক হাজার নিম্ন আয়ের মানুষকে খাবার সরবরাহ করছে এবং মহামারী থেকে পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। এছাড়া ৫ হাজার পরিবারকে চাল, ডাল, দুধ, ভোজ্যতেল ও সাবানযুক্ত রেশন দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে দুই কোটি টাকা প্রদান করবে বলে জানিয়েছেন পিএইচপি পরিবারের গণমাধ্যম ও গণসংযোগ বিভাগের প্রধান দিলশাদ আহমেদ। এর আগেই অবশ্য নিজের একুশে পদকের সম্মাননার অর্থ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎস তহবিলে প্রদান করেছেন গ্রুপটির চেয়ারম্যান সুফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

চট্টগ্রামের ইয়ংগন গ্রুপ বিভিন্ন হাসপাতালে ২৫ হাজার পিস পিপিই অনুদান দেবে। এ লক্ষ্যে হাসপাতালগুলোর প্রয়োজনীয়তা যাচাই করার জন্য একটি সমন্বয় কমিটিও গঠন করেছে তারা।

ছয় হাজার জনের মধ্যে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার বিতরণ করেছে প্রিমিয়ার সিমেন্ট। বিষয়টি জানিয়েছেন এর এমডি মোহাম্মদ আমিরুল হক।

এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস ৫০ হাজার পিপিই অনুদান দিয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য বহু সংখ্যক মাস্ক সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছেন এর প্রধান অপারেটিং অফিসার এম মহিবুজ জামান।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সরকারি হাসপাতাল, পুলিশ বাহিনী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মতো বেশ কয়েকটি সংস্থাকে ৪ হাজার পিপিই অনুদান দিয়েছে কনফিডেন্স গ্রুপ।

এছাড়াও গত ২৮ মার্চ করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশকে তিন লাখ ডলার আর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

এর আগে দেশের ২৭ জন ক্রিকেটার তাদের বেতনের ৫০ শতাংশ দান করেন করোনা সহায়তায়। কর বাদ দিয়ে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ টাকারও বেশি। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি