ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ আগস্ট ২০২৫

ঘায়ের ক্ষত দূর করতে লজ্জাবতী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:০৬, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১১:০৬, ৮ অক্টোবর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

লজ্জাবতীর কিছু ওষুধী ব্যবহার রয়েছে। ড. তপন কুমার দে তার ‘বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় গাছ-গাছড়া’ বইয়ে এর ওষুধী গুণ তুলে ধরেছেন। একুশে টিভি অনলাইনে তা তুলে ধরা হলো-

১) দাঁতের মাড়ির ক্ষতে : পাতাসহ ডাঁটা ১০/১২ গ্রাম নিযে ক্বাথ তৈরি করে ১০/১৫ মিনিট সময় ধরে মুখে ধারন করতে হবে। এভাবে প্রতিদিন দুই বা তিনবার।

২) সাদা আমাশয় : সাদা আমাশয়ে লজ্জাবতীর পাতাসহ ডাঁটা ১০ গ্রাম এক গ্লাস পানিতে সিদ্ধ করে খেতে হবে সকাল-সন্ধ্যায়। দুই/তিন দিনে না সারলে অবশ্যই অভিজ্ঞ বা পাশ করা কোন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

৩) অর্শ রোগে : অর্শের বলি জ্বালাপোড়া করলে মূলসহ গাছ ১০ গ্রাম, দুধ এক কাপ এবং তিন কাপ পানি একত্রে সিদ্ধ করে যখন এক কাপে আসবে তখন ছেঁকে নিয়ে সকাল-বিকেল খেতে হবে।

৪) যোনিপথে ক্ষত সারে : যে কোন কারণেই যোনিপথে ক্ষত হোক না কেন, সেক্ষেত্রে দুধ জলের সঙ্গে লজ্জাবতীর ক্বাথ করে খেতে হবে। অন্তত দুই বার খেতে হবে। খাবার পর একই সঙ্গে লজ্জাবতীর ক্বাথ দিযে ডুশ দিলে বা যোনিপথ ধুলে তাড়াতাড়ি ক্ষত সেরে যায়।

৫) পিত্ত বিকার : অনেক সময় জ্বরের সময় হাত-পা জ্বালা করে। সাধারণত  এটা বর্ষা ও শরৎ কালে পিত্ত বিস্তারের ফলে দেখা যায়। এক্ষেত্রে সমগ্র গাছটিকে ক্বাথ করে খেলে ঋতুগত পিত্ত বিকার উপশম হয়।

৬) কানে ব্যথা : লজ্জাবতী গাছের সিদ্ধ ক্বাথ তৈল দ্বারা পাক করে কানে ব্যবহার করলে কানে পুঁজ পড়া বন্ধ হয়।

৭) কলেরা নিরাময় : লজ্জাবতী সম্পূর্ণ গাছের (মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল ‍ও ফল) ক্বাথ ও চিনি একত্রে মিশিয়ে খাওয়ালে অর্শ, আমাশয় ও কলেরা দ্রুত নিরাময় হয়।

৮) পাথুরী রোগে সারে : ইহার শিকড়ের ক্বাথ পাথুরী রোগে ব্যবহৃত হয়।

৯) দূষিত ক্ষত : ইহার পাতা মিহি করে বেটে এক পোয়া আন্দাজ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে ছেঁকে নিয়ে একটানা পক্ষকাল খেলে দূষিত ক্ষত ভাল হয়।

১০) জামার দাগ দূর করে : অনেকের বগলতলা ঘেমে জামা ও গেঞ্জিতে হলদে দাগ লাগে। এক্ষেত্রে গাছের ক্বাথ দ্বারা শরীর ও বগল মুছে ফেললে এ দাগ চলে যায়।

১১) প্লেগ রোগ : রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে লজ্জাবতীর ব্যবহার আছে। লজ্জাবতীর গাছ প্লেগ রোগের একমাত্র মহৌষধ।

১২) জন্মনিয়ন্ত্রকরোধে : লজ্জাবতীর মূল নিয়মিত খেলে জন্মনিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।

১৩) পঁচে যাওয়া ক্ষত দূর করতে : পুরানো ঘায়ে মাংস পঁচে ক্ষয়ে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে লজ্জবতীর ক্বাথ একটু ঘন করে দিয়ে তিন/চার বার কয়েকদিন ব্যবহার করলে ঘায়ের পঁচা অংশ থাকবে না।

পরিচিতি : লজ্জাবতী এক প্রকার লতানো খর্বাকৃতি গুল্ম। মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে বেয়ে যায়। এর গায়ে নীচের দিকে বাঁকা বাঁকা কাঁটা আছে যার জন্য লজ্জাবতীর ভিতর কোন সরীসৃপ এমনকি সাপও প্রবেশ করতে পারে না। পাতার বোঁটা তিন থেকে চার সে.মি. লম্বা হয় এবং এই বোঁটার প্রান্ত থেকে হাতের চারটি আঙ্গুলের মত বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের চারটি পত্রদন্ত গজা্য় এবং ১৯-৩৫টি ছোট ছোট পত্রক পত্রদণ্ডের দৈর্ঘ্য অনুসারে দুই পাশে গজায়। মজার বিষয় যে, লজ্জাবতীর এই পাতা স্পর্শপ্রবণ। কেউ স্পর্শ করলে ছোট ছোট পত্রকণ্ডলিসহ পত্রদণ্ড চারটি একটির সঙ্গে অন্যটি ‍জুড়ে যায়। মনে হয় যেন করজোড় করছে তাই এর অন্য নাম করপত্রাঞ্জলি বা অঞ্জলিকারিমা।

লজ্জাবতীর পুষ্পদণ্ড দুই থেকে তিন সে.মি লম্বা হয়। এ দণ্ডের মাথার গোলাকৃতি তুলার মত নরম, হালকা বেগুনী রঙের ফুল হয়্ লতার গিরা থেকে একটি করে পত্রবৃন্ত এবং কখনও এ বৃন্তের গোড়া থেকে পুষ্পদণ্ড বের হয়। ফুল ও ফল বেশি হয়। পরিদর্শনকালে প্রতি পুষ্পদণ্ডের মাথায় ১৪-২০টি করে ফল এবং প্রতি শুটিতে দুই/তিনটি করে বীজ পাওয়া যায়। শুটির দুই প্রান্ত ঘিরে ছোট ছোট নরম কাঁটা থাকে। বীজ পাকলে খয়েরী রং ধারন করে।

কেএনইউ/এসএইচ/     


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি